দুর্গাপুর, 20 মার্চ: দুই শিশু-সহ একই পরিবারের চার সদস্যের রহস্যমৃত্যু (Durgapur Four Family Members Death) ! আর সেই ঘটনাতেই গ্রেফতার হতে হল মৃত যুবকের বৃদ্ধা মা-সহ তিনজনকে (Three Accused Arrested by Police) ! পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের এই ঘটনার নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ সূত্রের দাবি, টেট দুর্নীতি (TET Recruitment Scam) থেকে শুরু করে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ, মৃত্যুর পিছনে কারণ থাকতে পারে এক বা একাধিক ৷ তারই হদিশ পেতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷
দুর্গাপুরের কুড়ুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন অমিত কুমার মণ্ডল (36) ৷ রবিবার বাড়িতেই উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ ৷ একইসঙ্গে মেলে অমিতের স্ত্রী রূপা মণ্ডল (31) এবং তাদের দুই সন্তান নিমিতকুমার মণ্ডল (7) ও নিকিতা মণ্ডলের (1 বছর 6 মাস) দেহ ৷ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিষের খালি শিশি ৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, অমিতই তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে কোনওভাবে বিষ খাইয়ে দেন ৷ তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তিনজনের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয় ৷ এমনকী, রূপার গলায় দড়ি প্যাঁচানোরও আভাস মিলেছে ৷ পরে অমিত নিজেও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন ৷ তবে, পুরোটাই পুলিশের অনুমান ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না-আসা পর্যন্ত এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় ৷
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, এই ঘটনার নেপথ্যে টেট দুর্নীতি থাকতে পারে ৷ অমিত-রূপার বিয়ে হয়েছিল 2014 সালে ৷ এরপর 2017 সালে টেট পরীক্ষা দেন রূপা ৷ চাকরি পান দুর্গাপুরেরই ফরিদপুর থানা এলাকার কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৷ প্রশ্ন উঠছে, রূপা কি অনৈতিকভাবে চাকরি আদায় করেছিলেন ? আর সেই কারণে কি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল ? সেই হুমকির ভয়েই কি এমন কাণ্ড করে বসেন অমিত ?
মৃত্যুর আগে পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কিছু মেসেজ লিখেছিলেন অমিত ৷ সেখানে তিনজন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে স্কুলের চাকরি পাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন তিনি ৷ অথচ, তাঁর স্ত্রীও যে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি করেন, তার কোনও উল্লেখ করেননি ৷ এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকে ৷
পাশাপাশি, জটিলতা তৈরি হয়েছে সম্পত্তির ভাগ নিয়েও ৷ অমিতের বাবা প্রয়াত নরেশকুমার মণ্ডল জমি-বাড়ির দালালি করতেন ৷ তাঁর যাবতীয় সম্পত্তির তিনটি ভাগ হওয়ার কথা ৷ সেগুলি পাওয়ার কথা ছিল অমিত, তাঁর দিদি এবং তাঁর মায়ের ৷ সূত্রের খবর, অমিতের মা নিজের ভাগের সম্পত্তি ও টাকা বাপের বাড়ির সদস্যদের জন্য খরচ করছিলেন ৷ তা নিয়ে মণ্ডল পরিবারের মধ্যে অশান্তি চলছিল ৷
আরও পড়ুন: দুই সন্তান-সহ দম্পতির দেহ উদ্ধার, সুইসাইড নোটে মিলল টেট-যোগ
এই প্রেক্ষাপটে রবিবারের ঘটনার পর অমিতের মা-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অমিতের শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ৷ তারই প্রেক্ষিতে অমিতের মা বুলুরানি মণ্ডল, মামাতো দাদা প্রশান্ত নায়েক এবং তাঁর স্ত্রী শিলা নায়েককে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷