আসানসোল, 18 নভেম্বর: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গোরু পাচারের মামলায় তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া BSF কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে 14 দিনের CBI হেপাজতের নির্দেশ দিল আসানসোল CBI আদালত। আজ তাঁকে আসানসোল CBI কোর্টে তোলা হয়। দীর্ঘ শুনানির পর বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্তকে CBI হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক রাঘববোয়ালের নাম বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে CBI। যদিও তদন্তের স্বার্থে CBI আধিকারিকরা কিছু জানাতে চাননি।
2015-17 সাল পর্যন্ত সতীশ কুমার যখন মালদাতে BSF কমান্ডান্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, তখনই তিনি গোরু পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িয়ে যান ৷ সেই সময় তাঁর শ্বশুর তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেজ়ারার বাদলকৃষ্ণ স্যানালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে 12.8 কোটি টাকা জমা পড়েছিল বলে খবর। এই টাকা কোথা থেকে এসেছিল তা জানাতে পারেননি সতীশ কুমার।
গোরু পাচারকারী এনামূল হক গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সতীশ কুমারের সঙ্গে যোগসূত্র বেরিয়ে আসে। সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এনামূল হকের কম্পানিতে সতীশ কুমারের ছেলে চাকরি করত। সতীশ কুমারের ছেলের অ্যাকাউন্টেও হিসাব বহির্ভূত প্রচুর টাকা জমা পড়েছিল। তবে, সেসময় সতীশ কুমারের ছেলে কোনও কাজ করত না ৷ অনুমান করা হচ্ছে, গোরু পাচারে সাহায্য়ে টাকাপয়সা লেনদেন করার জন্যই সতীশ কুমারের ছেলেকে নামকা ওয়াস্তে এনামূলের সংস্থায় কাজে ঢুকিয়েছিল। সূত্রের আরও খবর, মালদায় সতীশ কুমার BSF কমান্ডান্ট থাকাকালীন পাচার হওয়া প্রায় কুড়ি হাজার গোরু আটক হয়েছিল। সেই গোরু যখন পরবর্তীকালে বিক্রি করা হয় সেখানেও নাকি প্রচুর টাকার গরমিল রয়েছে বলে অভিযোগ। জঙ্গিপুরে গোরু বিক্রি করার জন্য প্রতি গোরুতে BSF-কে 2000 টাকা দিতে হত বলে অভিযোগ উঠেছে। 2018 সালের 6 এপ্রিল এই মামলা শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে সতীশ কুমারকে তিনবার নোটিস পাঠায় CBI। প্রথমবার নোটিস পাওয়ার পর তা এড়িয়ে যান সতীশ কুমার। দ্বিতীয় নোটিস পাওয়ার পর 32 দিন ধরে তিনি ছুটিতে ছিলেন বলে CBI-কে জানান BSF কমান্ডান্ট । ওই ৩২ দিন তিনি কলকাতায় থেকে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন বলে এদিন আদালতে জানিয়েছেন CBI এর আইনজীবী । তৃতীয় নোটিস পাওয়ার পর তিনি CBI এর কাছে যান এবং প্রায় 7 ঘণ্টা ধরে তাঁকে জেরা করা হয় ৷ তদন্তে অসহযোগিতা ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে CBI তাঁকে গতকাল গ্রেপ্তার করে।
সতীশ কুমারের বিরুদ্ধ 120B IPC এবং PCA 7, 11, 12 ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। আজ সতীশ কুমারকে আসানসোল CBI কোর্টে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে 14 দিনের CBI হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। CBI পক্ষের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে বিশেষ কিছু বলা যাবে না। সতীশ কুমারের CBI হেপাজত চাওয়া হয়েছিল ৷ বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। তবে সতীশ কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও অনেক রাঘববোয়ালদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে আশা ওয়াকিবহাল মহলের।