দুর্গাপুর, 17 মে: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার তাঁর নবজোয়ার কর্মসূচিতে দুর্গাপুরের গান্ধিমোড়ে পৌঁছে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির নেতাকর্মীদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভাসলেন । কিন্তু দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আসামাত্রই দলীয় নেতা, কর্মী ও সাংবাদিকদের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে চনমনে হয়ে উঠল কেপমারের দল ৷ তারা অনেকের গ্যাঁটের কড়ি উধাও করে বুঝিয়ে দিল, "অ্যায়সা মউকা ফির কাঁহা মিলেগা"।
অনেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধিবেশনে যোগ দিতে দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের রাজীব গান্ধি স্মারক ময়দানে পৌঁছে যাওয়ার পর নিজেদের পকেটে হাত দিতেই বুঝতে পারলেন, কেপমারেরা পকেট ফাঁকা করে দিয়েছে । দুর্গাপুরের শ্রমিক নেতা তথা দুর্গাপুর নগর নিগমের দুবারের মেয়র পারিষদ সদস্য প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের হাতের একটি আংটি এবং পকেট থেকে নগদ 10,000 টাকা উধাও হয়ে যায় । আরও এক শ্রমিক নেতা সন্দীপ ঘটক তাঁর পকেটে রেখেছিলেন ঢাকীদের জন্য বরাদ্দ 10,000 টাকা । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় পেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি ঢাকীদের টাকা দিতে গিয়ে দেখলেন, তাঁর পকেট থেকেও টাকা উধাও ।
অথচ নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি ছিল দুর্গাপুরের গান্ধি মোড়ে । আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের স্বয়ং পুলিশ কমিশনার সুধীর কুমার নীলকান্তম থেকে শুরু করে আসানসোল দুর্গাপুরের বহু আইপিএস অফিসার, আসানসোল ও দুর্গাপুরের বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ-সহ শয়ে শয়ে পুলিশ কর্মী কমব্যাট ফোর্সের নজরদারি ছিল ৷ তবে সবার নজর এড়িয়ে এই কেপমারের দল অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে মোটা মোটা পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাতসাফাই করে বুঝিয়ে দিল "হাম কিসিসে কম নেহি"।
আরও এক শ্রমিক নেতা তথা দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য দীপঙ্কর লাহা অধিবেশনস্থলে নিজের পকেটে হাত দিতেই দেখেন তাঁর পকেটও ফাঁকা । তবে দীপঙ্কর লাহা জানালেন, "আমার পকেটে খুব বেশি টাকা ছিল না । কিন্তু আমি যখন অধিবেশনস্থলে এসে শুনলাম যে, অনেকের পকেট থেকে টাকা খোয়া গিয়েছে, তখন আমি দেখলাম যে আমার পকেটও ফাঁকা ।"
শুধু রাজনৈতিক নেতাদের নয়, কেপমারদের এই দাপুটে সাহসী হাতসাফাইয়ের কর্মসূচির হাত থেকে ছাড় পাননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি কভার করা সাংবাদিকেরাও । স্থানীয় একটি পাক্ষিক পত্রিকার সাংবাদিক নয়ন রায় তাঁর পকেটে হাত দিয়ে দেখেন তাঁর পকেটও ফাঁকা । কড়া পুলিশি নিরাপত্তা, হাই প্রোফাইল নেতার আগমনকে ঘিরে যখন দুর্গাপুরের গান্ধি মোড়ে সাজো সাজো রব, তখন কেপমারের দল কিন্তু নিজেদের কর্মসূচিতে সম্পূর্ণ সার্থক তা বলাই যায় । যদিও বিষয়টি নিয়ে কেউ এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি ।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে দুর্গাপুরের পাঁচমাথা মোড়ে গেরুয়া শিবিরের একটি জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিং-এর সফরের সময় একই ঘটনা ঘটেছিল । তবে সেই সময় নগদ অর্থ নয়, প্রায় 30 থেকে 40টি মোবাইল চুরি হয়েছিল সেই সভাস্থল থেকে । তাই এ বার থেকে দুর্গাপুরে বড় কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ, মিছিল আয়োজিত হলে সাবধান থাকতে হবে নেতা ও সাংবাদিকদের ৷ কারণ কেপমারের দল কিন্তু এমন সুযোগের অপেক্ষায় আছে । তাদের বাগে আনতে না পেরে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুলিশের কপালে ৷
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীবারে ইংরেজবাজারে তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচিতে একমঞ্চে মমতা ও অভিষেক