আসানসোল, 10 এপ্রিল: প্রাক্তন কুস্তিগীর মহাবীর ফোগতের জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছিল দঙ্গল সিনেমা ৷ সেখানে তাঁর দুই যমজ মেয়ের লড়াই দেখানো হয়েছিল ৷ সেই গল্পকে টেক্কা দিতে পারে কুলটির সাঁকতোড়িয়ায় তিন বোনের কাহিনি ৷ সুচেতা, রঞ্জিতা এবং সুপ্রীতা ৷ একই দিনে জন্ম 3 বোনের ৷ 11 বছরের তিন বোন তাইকোন্ডোতে কামাল করছে ৷ ইতিমধ্যেই জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতায় তিনজন একসঙ্গে পদক জিতেছে ৷ আগামী দিনে তাদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক খেতাব ও অলিম্পিক ৷ সেই লক্ষ্যেই চলছে কঠোর অনুশীলন ৷
কুলটির সাঁকতোড়িয়া এলাকার দম্পতি বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় ৷ বামাপ্রসাদ বাবু গৃহশিক্ষক ৷ সুনেত্রা দেবী স্বামীর কোচিং সেন্টারে সহযোগী হিসেবে সহযোগিতা করেন ৷ 2011 সালের জুলাই মাসে সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ৷ তিনজনেই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয় ৷ ফলে শারিরীকভাবে তারা যথেষ্ট দুর্বল ছিল ৷ ওজনও ছিল অনেক কম ৷ শুরু হয় তিন মেয়েকে সুস্থ করে তোলার লড়াই ৷ একদিকে চিকিৎসা, অন্যদিকে পরিবারের সবার সহযোগিতায় ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে সুচেতা, রঞ্জিতা এবং সুপ্রীতা ৷
বর্তমানে তারা ডিসেরগড়ে এস ডি গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ৷ তবে শুধু পড়াশোনা নয়, পাশাপাশি নাচ-গানেও পারদর্শী এই তিন বোন ৷ তবে, চমকে দিয়েছে তিনবোনের তাইকোন্ডো প্রদর্শন । লকডাউনের আগে মায়ের ইচ্ছেতেই মার্শাল আর্টের অন্যতম কৌশল তাইকোন্ডো শিখতে শুরু করে তিনজন ৷ স্থানীয় কোচ শুভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশিক্ষণে তিন বোন ধীরে ধীরে পারদর্শী হয়ে ওঠে তাইকোন্ডোতে ৷
মা সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় জানান, ওদের শারীরিকভাবে সক্ষম করতেই তাইকোন্ডোতে ভর্তি করিয়েছিলেন ৷ কোচ শুভ গঙ্গোপাধ্যায় যেভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাতে বর্তমানে তিন বোন অনেক সবল ৷ জীবনের প্রথম বড় সফলতা এসেছে ৷ এখনও অনেক দূর যেতে হবে বলে ওদের ৷ গত 28-31 মার্চ রাজস্থানে আয়োজিত 36তম জাতীয় সাব-জুনিয়র কিউরাগি (Kyorugi) এবং দশম জাতীয় সাব-জুনিয়র পুমসে (Poomsae) তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তিন বোন ৷
আরও পড়ুন: জাতীয় দলের ভলিবল প্লেয়ার হয়েও আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ছেন সুষমা
পুমসে মেয়েদের বিভাগে তিনজনেই ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে ৷ এর আগে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জিতেছিল তারা ৷ জাতীয় স্তরে মেডেল জিতে এসে খুশি সুচেতা, রঞ্জিতা ও সুপ্রীতা ৷ আগামী দিনে তাদের লক্ষ্য জাতীয় স্তরে সোনার মেডেল জয় ৷ সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ৷ কিন্তু মেয়েদের এই সাফল্যের মাঝেও কপালে চিন্তার ভাঁজ বাবা বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ৷ সামান্য গৃহশিক্ষকতা করে তিনি আগামী দিনে মেয়েদের এই তাইকোন্ডোর যাবতীয় খরচ কীভাবে বহন করবেন ? কীভাবেই বা উন্নত ডায়েট থেকে শুরু করে তাদের জন্য ফুড সাপ্লিমেন্টের ব্যবস্থা করবেন ?
এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, কোচের তত্ত্বাবধানে এবং তাঁর উপদেশ মতো মেয়েদের জন্য তেল চর্বি ছাড়া উপযুক্ত খাবার রান্না করেন ৷ চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব কম খরচে মেয়েদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে ৷ কিন্তু এর পাশাপাশি সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থার সাহায্য যদি তিনজন পেত, তাহলে তাদের পক্ষে আগামী দিনে পথ চলা আরও সুগম হত ৷ এমনটাই মনে করছেন বামাপ্রসাদ ও স্ত্রী সুনেত্রা ৷