ETV Bharat / state

Neelkantha Pakhi: দেখা নেই কৃষক-বন্ধু নীলকণ্ঠ পাখির, চাষের জমিতে পোকার দাপটে চিন্তায় চাষিরা

আগেকার দিনে নীলকণ্ঠ পাখিকে কৃষকবন্ধু বলা হত ৷ কারণ এই পাখি জমিতে ফসলের ক্ষতিকারক পোকাদের খেয়ে চাষির উপকার করত ৷ তবে বর্তমানে এই পাখির সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় জমিতে উৎপাত বেড়েছে পোকাদের ৷ তা নিয়েই চিন্তিত গ্রাম বাংলার চাষিরা ৷

Etv Bharat
নীলকণ্ঠ পাখি
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 11, 2023, 6:41 PM IST

দুর্গাপুর, 11 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর দশমীতে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়ার এক প্রাচীন রীতি রয়েছে । শোনা যায়, কৈলাসে গিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবকে সপরিবারে দেবী দুর্গার কৈলাসে আসার খবর দেয় এই নীলকণ্ঠ পাখি । এমন প্রাচীন লোকগাথাও লিখিত যে সেই নীলকণ্ঠ পাখিকে দেবাদিদেব মহাদেবের দোসর বলাও হয় । কারণ শিবের আরও এক নাম নীলকণ্ঠ । এই পাখিকে দেবী অন্নপূর্ণা বা লক্ষ্মীর সবচেয়ে প্রিয় পাখি বলে বিবেচিত করা হয়েছে ।

একসময় বাংলার নাগরিক জীবনে বাড়ির পাশাপাশি নীলকণ্ঠ পাখির উপস্থিতিকে শুভ লক্ষণ বলে বিবেচিত করা হত । এই পাখিকে কৃষকবন্ধু হিসাবেও বাংলার কৃষককুল অভিহিত করে থাকেন । কারণ এই পাখি ফসলের ক্ষতিকারক বিষাক্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল নষ্টের হাত থেকে কৃষকদের মুক্তি দেয় ৷ কিন্তু কালের প্রবাহে নীলকণ্ঠ পাখির সংখ্যা একলাফে কমে যাওয়ায় ধান চাষের জমিতে বেড়েছে ফসলের ক্ষতিকারক গঙ্গা ফড়িং, মাজরা পোকা, ঘাস ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং, উড়চুঙ্গা-সহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রজাতির পোকা ।

মূলত দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, দুই বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই সমস্ত জেলাগুলিতে একসময় নীলকণ্ঠ পাখির আধিপত্য ছিল । রাজ্যে 13টি সংগঠনের প্রায় 28 হাজার পক্ষী বিশারদ বিভিন্ন পাখিদের উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । আর সেই রিপোর্ট দেখার পর রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, উত্তরবঙ্গে অতি দ্রুত নীলকণ্ঠ পাখির প্রজননের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা করা হবে বনমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ।

আমন ধান রোপণের মরশুমে বৃষ্টির আকাল দেখা দিয়েছিল । কোথাও সোলার সাবমার্সিবলের মাধ্যমে আবার কোথাও বৈদ্যুতিক সাবমার্সিবলের মাধ্যমে সেচ করে হয়েছে ধান চাষ । তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক জমি ফাঁকায় পড়ে রয়েছে । যেটুকু জমিতে ধান বীজ রোপণ করা হয়েছে তারও ফলন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে চাষিরা । কারণ ধানের শিষ বেরোনোর আগেই গঙ্গা ফড়িং, মাজরা পোকা, ঘাস ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং ও উড়চুঙ্গা-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । এক সময় চাষের জমিতে এইসব পোকাদের ধ্বংস করতে দেখা যেত কৃষক বন্ধু নীলকণ্ঠ পাখিকে । কিন্তু বর্তমানে কমে গিয়েছে এই পাখির আনাগোনা । জমিতে অত্যাধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার আর কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পাখিরা কম আসছে বলেও অনেকের মত ।

আরও পড়ুন : এশিয়ার সর্ববৃহৎ পক্ষীনিবাস কুলিকে শুরু পাখি গণনা

পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী কৃষক হৃদয় ডোম, নরসিংহ মণ্ডল ও সুদীপ্ত সাহারা বলেন, "নীলকণ্ঠ পাখি এখন আর দেখাই যায় না । তাই ফসলের বিষাক্ত কীটপতঙ্গের উৎপাত বাড়ছে । চরম ক্ষতি হচ্ছে চাষাবাদে । কৃষকরা বহু প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এই কীটপতঙ্গের হাত থেকে মুক্তি পেতে । অনেকে কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করছেন কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না । উলটে ধানের ক্ষতি হচ্ছে ।"

জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করতে থাকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম প্রধান শুভদীপ সাহা কাঁকসা-সহ বিভিন্ন এলাকার জঙ্গল নিয়ে কাজ করেছেন । বিভিন্ন পাখির উপর পর্যবেক্ষণও চালিয়েছেন তিনি । তাঁর কথায়, "শুধু নীলকণ্ঠ পাখি নয়, আজ গ্রাম বাংলা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বহু প্রজাতির পাখি । মদনটাক ধনেশ, চখাচখি, টেকসনার মতো পাখিরাও আজ বিলুপ্ত । গোটা দেশে প্রায় 1 হাজার 300 প্রজাতির পাখি রয়েছে ৷ তাদের মধ্যে প্রায় 950টি প্রজাতির পাখির উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখা গিয়েছে শতাধিক প্রজাতির পাখি আজ গভীর সংকটে । দূষণ এবং কৃষিক্ষেত্রে লাগাতার বিষাক্ত কীটনাশকের অপপ্রয়োগের জেরে পাখিদের সংখ্যা কমেছে । এছাড়াও খাদ্য সংকটে ভুগছে পাখিরা ।"

এই বিষয়ে দুর্গাপুর বনাঞ্চলের বনাধিকারী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সমস্ত পাখিদের উপর নজরদারি চালায় বনদফতর । পাখি মারা এবং চোরাশিকার রুখতেও তৎপর বনকর্মীরা । গড় জঙ্গলে একাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে, তৃষ্ণার্ত পাখিদের কথা চিন্তা করে । দেওয়া হয় খাবারও । জমিতে কীটনাশক প্রয়াগ কমানোর জন্য চাষিদেরও সচেতন করা হচ্ছে এলাকায় এলাকায় গিয়ে ৷ এখন দেখার রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বাংলার লুপ্তপ্রায় পাখিকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পক্ষী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার যে কথা বলেছেন তা কবে বাস্তবায়িত হয় ।"

আরও পড়ুন : বাড়িতে পাখি পুষলেই শাস্তি! আসছে কড়া আইন

দুর্গাপুর, 11 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর দশমীতে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়ার এক প্রাচীন রীতি রয়েছে । শোনা যায়, কৈলাসে গিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবকে সপরিবারে দেবী দুর্গার কৈলাসে আসার খবর দেয় এই নীলকণ্ঠ পাখি । এমন প্রাচীন লোকগাথাও লিখিত যে সেই নীলকণ্ঠ পাখিকে দেবাদিদেব মহাদেবের দোসর বলাও হয় । কারণ শিবের আরও এক নাম নীলকণ্ঠ । এই পাখিকে দেবী অন্নপূর্ণা বা লক্ষ্মীর সবচেয়ে প্রিয় পাখি বলে বিবেচিত করা হয়েছে ।

একসময় বাংলার নাগরিক জীবনে বাড়ির পাশাপাশি নীলকণ্ঠ পাখির উপস্থিতিকে শুভ লক্ষণ বলে বিবেচিত করা হত । এই পাখিকে কৃষকবন্ধু হিসাবেও বাংলার কৃষককুল অভিহিত করে থাকেন । কারণ এই পাখি ফসলের ক্ষতিকারক বিষাক্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল নষ্টের হাত থেকে কৃষকদের মুক্তি দেয় ৷ কিন্তু কালের প্রবাহে নীলকণ্ঠ পাখির সংখ্যা একলাফে কমে যাওয়ায় ধান চাষের জমিতে বেড়েছে ফসলের ক্ষতিকারক গঙ্গা ফড়িং, মাজরা পোকা, ঘাস ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং, উড়চুঙ্গা-সহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রজাতির পোকা ।

মূলত দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, দুই বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই সমস্ত জেলাগুলিতে একসময় নীলকণ্ঠ পাখির আধিপত্য ছিল । রাজ্যে 13টি সংগঠনের প্রায় 28 হাজার পক্ষী বিশারদ বিভিন্ন পাখিদের উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । আর সেই রিপোর্ট দেখার পর রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, উত্তরবঙ্গে অতি দ্রুত নীলকণ্ঠ পাখির প্রজননের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা করা হবে বনমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ।

আমন ধান রোপণের মরশুমে বৃষ্টির আকাল দেখা দিয়েছিল । কোথাও সোলার সাবমার্সিবলের মাধ্যমে আবার কোথাও বৈদ্যুতিক সাবমার্সিবলের মাধ্যমে সেচ করে হয়েছে ধান চাষ । তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক জমি ফাঁকায় পড়ে রয়েছে । যেটুকু জমিতে ধান বীজ রোপণ করা হয়েছে তারও ফলন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে চাষিরা । কারণ ধানের শিষ বেরোনোর আগেই গঙ্গা ফড়িং, মাজরা পোকা, ঘাস ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং ও উড়চুঙ্গা-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । এক সময় চাষের জমিতে এইসব পোকাদের ধ্বংস করতে দেখা যেত কৃষক বন্ধু নীলকণ্ঠ পাখিকে । কিন্তু বর্তমানে কমে গিয়েছে এই পাখির আনাগোনা । জমিতে অত্যাধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার আর কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পাখিরা কম আসছে বলেও অনেকের মত ।

আরও পড়ুন : এশিয়ার সর্ববৃহৎ পক্ষীনিবাস কুলিকে শুরু পাখি গণনা

পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী কৃষক হৃদয় ডোম, নরসিংহ মণ্ডল ও সুদীপ্ত সাহারা বলেন, "নীলকণ্ঠ পাখি এখন আর দেখাই যায় না । তাই ফসলের বিষাক্ত কীটপতঙ্গের উৎপাত বাড়ছে । চরম ক্ষতি হচ্ছে চাষাবাদে । কৃষকরা বহু প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এই কীটপতঙ্গের হাত থেকে মুক্তি পেতে । অনেকে কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করছেন কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না । উলটে ধানের ক্ষতি হচ্ছে ।"

জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করতে থাকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম প্রধান শুভদীপ সাহা কাঁকসা-সহ বিভিন্ন এলাকার জঙ্গল নিয়ে কাজ করেছেন । বিভিন্ন পাখির উপর পর্যবেক্ষণও চালিয়েছেন তিনি । তাঁর কথায়, "শুধু নীলকণ্ঠ পাখি নয়, আজ গ্রাম বাংলা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বহু প্রজাতির পাখি । মদনটাক ধনেশ, চখাচখি, টেকসনার মতো পাখিরাও আজ বিলুপ্ত । গোটা দেশে প্রায় 1 হাজার 300 প্রজাতির পাখি রয়েছে ৷ তাদের মধ্যে প্রায় 950টি প্রজাতির পাখির উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখা গিয়েছে শতাধিক প্রজাতির পাখি আজ গভীর সংকটে । দূষণ এবং কৃষিক্ষেত্রে লাগাতার বিষাক্ত কীটনাশকের অপপ্রয়োগের জেরে পাখিদের সংখ্যা কমেছে । এছাড়াও খাদ্য সংকটে ভুগছে পাখিরা ।"

এই বিষয়ে দুর্গাপুর বনাঞ্চলের বনাধিকারী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সমস্ত পাখিদের উপর নজরদারি চালায় বনদফতর । পাখি মারা এবং চোরাশিকার রুখতেও তৎপর বনকর্মীরা । গড় জঙ্গলে একাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে, তৃষ্ণার্ত পাখিদের কথা চিন্তা করে । দেওয়া হয় খাবারও । জমিতে কীটনাশক প্রয়াগ কমানোর জন্য চাষিদেরও সচেতন করা হচ্ছে এলাকায় এলাকায় গিয়ে ৷ এখন দেখার রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বাংলার লুপ্তপ্রায় পাখিকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পক্ষী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার যে কথা বলেছেন তা কবে বাস্তবায়িত হয় ।"

আরও পড়ুন : বাড়িতে পাখি পুষলেই শাস্তি! আসছে কড়া আইন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.