আসানসোল, 9 নভেম্বর: দেশজুড়ে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব । অথচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও পর্যন্ত পানীয় জলটুকু পৌঁছয়নি । স্বাধীনতার 75 বছর পরেও মানুষজনকে পানীয় জলের (Drinking Water Problem) জন্য ভরসা করতে হয় অপরিশ্রুত কুয়োর জল কিংবা নদীর জলের উপর । আসানসোলের (Asansol News) সালানপুর ব্লকের জিতপুর-উত্তরামপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জিতপুর পুরোনো পাড়া । সরকারি পানীয় জল আজও পৌঁছয়নি ওই গ্রামে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের "জলস্বপ্ন" প্রকল্পের (Jal Swapno in Limbo) পাইপ গ্রামে পৌঁছেছিল বটে, কিন্তু তা দিয়ে জল পড়েনি এক ফোঁটাও ।
পশ্চিমবঙ্গের একেবারে সীমানা এলাকার গ্রাম জিতপুর । পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডকে ভাগ করেছে অজয় নদ । সেই অজয় নদের ধারেই অবস্থিত জিতপুর পুরনো পাড়া । গ্রামের কিছুটা দূর দিয়েই নদী পেরিয়ে গিয়েছে ৷ অথচ পরিশ্রুত পানীয় জল আসেনি গ্রামে । প্রায় একশো পরিবারের বাস এই গ্রামে । প্রত্যেকেই দিনমজুর, দরিদ্র শ্রেণির মানুষ । গ্রামে রাস্তা, নর্দমা অন্যান্য নাগরিক পরিষেবা কোনওটাই তেমন উন্নত নয় । তবুও মানুষ অসুবিধের সঙ্গেই অভ্যেস করে বাঁচতে শিখেছে । কিন্তু পানীয় জল না থাকায় তার সঙ্গে আর পাল্লা দিয়ে চলতে পারছেন না গ্রামবাসীরা ।
বারবার দাবি গিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিধায়কের কাছে । শেষ পর্যন্ত বারাবনীর বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের উদ্যোগে জলস্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আসে জিতপুর পুরনো পাড়া । শুরু হয় তোড়জোড় । গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয় জলের পাইপ । লাগে জলের কল । গ্রামবাসীরও খুশি হয়ে ভেবেছিল, এ বার হয়তো জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল এসে পৌঁছবে । কিন্তু কোথায় কী ! জলের কল লাগানো, পাইপ লাগানোর পর ছ'মাস পেরিয়ে গিয়েছে । জল পড়েনি এক ফোঁটাও । বারবার জনপ্রতিনিধিদের দরজায় কড়া নেড়েও কোনও লাভ হয়নি । গ্রামবাসীরা তাই আবর্জনাময়, অপরিশ্রুত কুয়োর জল পান করছেন । আবার কখনও কখনও দূরে অজয় নদ থেকে জল নিয়ে আসতে হয় গ্রামবাসীদের । কুয়োর জল খাওয়ার জন্য অসুস্থতাও বাড়ছে গ্রামে ।
আরও পড়ুন: পানীয় জল পৌঁছে দিতে 'স্বজল গ্রাম প্রকল্প' চালু হবে কোচবিহারে
গ্রামবাসী টুকু বাউরি, মৌসুমী বাউরিরা জানিয়েছেন, "অতীতে টিউবওয়েল লাগানো হয়েছিল এই গ্রামে । কিন্তু জলস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেই টিউবওয়েল দিয়ে জল পড়ে না । ফলে কুয়ো এবং নদীর জল ছাড়া আর কোনও উপায় নেই আমাদের ।"
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা পঞ্চায়েত প্রধান তাপস চৌধুরী এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন । তিনি জানিয়েছেন "আমরা জনপ্রতিনিধি হতে পারি কিন্তু আমরা টেকনিক্যাল জিনিসগুলি বুঝি না । গ্রাম পর্যন্ত পাইপ লাগানো হয়েছে ৷ অন্যান্য গ্রামে জল এলেও এই গ্রামে কেন এল না, তা পিএইচই-র কাছে জানতে চেয়েছি । এমনকী জেলা শাসককেও জানিয়েছি । কিন্তু জল এখনও পর্যন্ত আসেনি । সবাই আশ্বাস দিয়েছে, খুব দ্রুত এই কাজ শেষ হবে । আমরাও চাইছি মুখ্যমন্ত্রীর জলস্বপ্ন প্রকল্প সফল হোক এই গ্রামে ।"
বারাবনীর বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন "গ্রামাঞ্চলের মানুষের জলকষ্ট দূর করতেই এই জলস্বপ্ন প্রকল্প নিয়ে আসা হয়েছে । আশা করছি, খুব দ্রুত ওই অঞ্চলে জল পৌঁছবে ।"