কাঁকসা, 12 সেপ্টেম্বর: জনশূন্য গ্রামে একখণ্ড দেওয়ালে হয় দশভূজার আরাধনা । থিমের ভিড়ে নয়, রাঙা মাটির পথ আর সবুজে ঘেরা ঘন জঙ্গলের মাঝে সম্প্রীতির অনন্য নজির কাঁকসার মলানদিঘির ভগবানপুরে । এই গ্রামে দেবী দুর্গার আরাধনায় হাত লাগাতে দেখা যায় হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদেরও (Durga Puja) । পুজোর কাজে হাত লাগান সুখময় ঘোষ, জগন্নাথ মুখোপাধ্যায়, লাল্টু মিদ্দা, সৈয়দ আব্দুল রহিমরা ।
মূর্তি বলতে কিছুই নেই, দেওয়ালে ছবি এঁকে হয় দশভূজার আরাধনা (painting Durga picture on walls of broken temple)। পুজোর চারদিন কাঁকসার মলানদিঘি ও লাউদোহার প্রতাপপুরের বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে । দুর্গাপুজোর চারদিন গমগম করে জনশূন্য এই ভগবানপুর ।
শোনা যায়, 1189 সালে এই জনপদ গড়ে উঠেছিল । বন্য জীবজন্তুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সেখানে বিশালাকার জলাশয় খনন করে এলাকাবাসীরা । সেখানে তৈরি করা হয় চুন সুরকির দুর্গা মন্দিরও । একসময় সেই দুর্গা মন্দিরে বজ্রপাত হয় । মানুষের ধারণা ছিল কোনও দেব মন্দিরে বজ্রপাত হলে অশুভ শক্তি ভর করে । সেই সময় কিছু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় । তারপর বাড়তে থাকে বন্য জীবজন্তু ও ডাকাতদের আক্রমণ । সেই ভয়ে ভগবানপুর এলাকার বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যায় ৷ আশ্রয় নেয় মলানদীঘি ও লাউদোহার বিভিন্ন প্রান্তে ৷ ফলে জনশূন্য হয়ে পড়ে এই এলাকা ৷
জানা গিয়েছে, এরপর আনুমানিক 300 বছর আগে জনশূন্য গ্রামে ভগ্নপ্রায় দুর্গামন্দিরে পুজো শুরু করে আকন্দারা গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা গুরুচরণ রায় । তখন থেকেই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিতভাবে পুজো পরিচালনা করে (Durga Puja of Hindu Muslim communities) । এখনও পুজোর চারদিন সব ধর্মের মানুষ আশেপাশে এলাকা থেকে ভগবানপুরে আসেন। মেতে ওঠেন দেবী দুর্গার আরাধনায় । চারদিনই মানুষের দেওয়া চাল, ডাল দিয়ে রান্না হয় খিচুড়ি ভোগ । সেই ভোগ নিবেদন করা হয় দেবী দুর্গাকেও । নবমীর দিন মায়ের ভোগ খেতে সমাগম হয় কয়েক হাজার মানুষের ।
আরও পড়ুন: 400 বছরের ক্ষ্যাপা মায়ের পুজোতে রয়েছে ইতিহাস
পুজোর পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ আব্দুল রহিম ও জগন্নাথ মুখোপাধ্যায়রা জানান, এই পুজোয় কোনও ভেদাভেদ নেই । চারদিন তাঁরা সকলে একত্রিত হয়ে পুজোর আয়োজন করেন ।