শিল্পী মনের ক্ষুধা থেকে সৃষ্টি ভ্যাকসিন অ্যাম্পুলের " দুর্গা দুর্গতিনাশিনী " - durga-idol
শিল্পীর ভাবনায়, গোটা বিশ্ব যখন খুঁজছে কোরোনা থেকে মুক্তির জন্য প্রতিষেধক । আর সেই প্রতিষেধক থাকে ভ্যাকসিন অ্যাম্পুলে । এছাড়াও কোরোনা থেকে মুক্তি পেতে বাজারে বহু হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের ব্যবহারের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা । তাই শিল্পী সোমনাথ অধিকারীর ভাবনায় আসে মূলত কোরোনার প্রতিষেধকের কথা ৷ সেই কারণেই ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল, কাচের তৈরি হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের কাচের কন্টেনার দিয়ে তৈরি হয়েছে " দুর্গা দুর্গতিনাশিনী "
দুর্গাপুর, 20 অক্টোবর : কোরোনা আতঙ্কে জেরবার গোটা বিশ্ব ৷ মুক্তির উপায় খুঁজছে সবাই । এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের প্রখ্যাত থিম মেকার সোমনাথ অধিকারী ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল ও হোমিওপ্যাথি-আয়ুর্বেদিক ওষুধের কাচের কন্টেনার দিয়ে সৃষ্টি করলেন " দুর্গা দুর্গতিনাশিনী । " দ্রুত এই মারণ ভাইরাস প্রতিরোধে আসুক প্রতিষেধক । ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাক । সুস্থ হয়ে উঠুক এই ধরিত্রী । রবীন্দ্রভারতীর স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সোমনাথ অধিকারী শিল্পী মনের ক্ষুধা থেকেই সৃষ্টি করলেন দুর্গা দুর্গতিনাশিনী ।
দুর্গাপুরের ধান্দাবাগ রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা শিল্পী সোমনাথ অধিকারী ৷ 2003 সাল থেকে শিল্পনগরী দুর্গাপুরের মানুষকে দুর্গোৎসবে নানারকম থিম উপহার দিয়ে আসছেন । জীবনে প্রায় 170 টি পুরস্কার প্রাপক এই শিল্পী দারুণ সব তাক লাগানো থিম উপহার দিয়েছেন উৎসব প্রিয় মানুষকে । কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা । বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবে নেই আড়ম্বর । পুজোর মাত্র কয়েক দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনে দুর্গাপুজোর আয়োজনের কথা বলা হয়েছে । কিন্তু এবার সোমনাথ অধিকারীদের মতো থিম মেকারদের সেই তাক লাগানো থিম তৈরির সুযোগ ছিল না । লকডাউন পর্ব শুরু হতেই সোমনাথ অধিকারীর মতো শিল্পী-সহ বহু মানুষ বুঝে গিয়েছিলেন, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের সুযোগ এবার মিলবে না । তাই শুধু অর্থ রোজগারের তাগিদেই নয়, শিল্পী মনের ক্ষুধা থেকেই কোরোনাকে আশ্রয় করে দুর্গাপুরের প্রখ্যাত থিম মেকার সোমনাথ অধিকারীর এক অপূর্ব সৃষ্টি " দুর্গা দুর্গতিনাশিনী " । ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল, কাচের তৈরি হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের কাচের কন্টেনার দিয়ে তৈরি হয়েছে " দুর্গা দুর্গতিনাশিনী " । সপরিবারে মা দুর্গা বিরাজমান ।
কী কী উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে দুর্গা দুর্গতিনাশিনী ?
কাচের ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল , হোমিওপ্যাথি ওষুধের কাচের শিশি রয়েছে , কাচের তৈরি আয়ুর্বেদিক ওষুধের কন্টেনার, আঠা, রংবেরঙের কিছু পাথর ও কাচের তৈরি তিনটি ছোটো বিশ্ব মানচিত্র যুক্ত গোলক । আড়াই ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই দুর্গা তৈরি শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে ।
শিল্পীর ভাবনায়, গোটা বিশ্ব খুঁজছে কোরোনা থেকে মুক্তির জন্য প্রতিষেধক । আর সেই প্রতিষেধক থাকে ভ্যাকসিন অ্যাম্পুলে । এছাড়াও কোরোনা থেকে মুক্তি পেতে বাজারে বহু হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের ব্যবহারের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা । তাই শিল্পী সোমনাথ অধিকারীর ভাবনায় আসে মূলত কোরোনার প্রতিষেধকের কথা ৷ সেই কারণেই দুর্গা সৃষ্টির প্রধান উপাদান কাচের তৈরি ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল ।
শিল্পী সোমনাথ অধিকারী বলেন, " মূর্তির পিছনে তিনটি ছোটো ছোটো কাচের তৈরি বিশ্ব মানচিত্র আঁকা গোলক ব্যবহারের উদ্দেশ্য গোটা বিশ্ব আজ কোরোনাতে আক্রান্ত । মুক্তির পথ খুঁজছেন সবাই । অধীর আগ্রহে আমরা সবাই অপেক্ষা করে আছি কোরোনার প্রতিষেধকের জন্য । তাই ভ্যাকসিন অ্যাম্পুলকেই প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছি ।" শিল্পীর কথায় দেবী দুর্গা জীবকুলের সমস্ত দুর্গতি নাশ করেন । তিনি এই মারণব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে পারেন মনুষ্যসমাজকে । তাই দেবী দুর্গা কোরোনার হাত থেকে মুক্তি দিন গোটা বিশ্বকে এমনটাই প্রার্থনা শিল্পীর ।
তিন মাস পাতলা কাচের তৈরি এই ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল ও হোমিওপ্যাথি ওষুধের কাচের শিশির ধারালো ছোঁয়াতে বারংবার রক্তাক্ত হয়েছেন শিল্পী । কিন্তু মনেপ্রাণে শিল্পীমনের ক্ষুধা থেকে আজ অপরূপ সুন্দর দুর্গার সৃষ্টি হয়েছে । ইতিমধ্যেই কাচের তৈরি দুর্গা রাষ্ট্রপতি ভবনে রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে শিল্পীর পক্ষ থেকে । শিল্পী সোমনাথ অধিকারী আজ স্বাবলম্বী । অর্থের অভাবে নয়, শিল্পী মনের তাড়নাতেই " দুর্গা দুর্গতিনাশিনী " সৃষ্টি হয়েছে ।