আসানসোল, 3 ফেব্রুয়ারি: গরু পাচার মামলায় সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য । আরও 115টি বাফার অ্যাকাউন্টের (Buffer Bank Accounts) হদিশ পেয়েছে সিবিআই । আরও আশ্চর্যের বিষয়, এই অ্যাকাউন্টগুলি মাত্র দুদিনে খোলা হয়েছিল । স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য পঞ্চায়েতে যে নথি জমা করেছিলেন উপভোক্তারা, সেই নথি দিয়েই এই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছিল । এই অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আসানসোল সিবিআই আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে । লক্ষ-লক্ষ টাকা এই অ্যাকাউন্টগুলিতে ঢুকেছে । সিবিআইয়ের দাবি, এই অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal Case) যোগসূত্র মিলেছে ।
যাঁদের নামে অ্যাকাউন্ট তাঁরা তার বিন্দুবিসর্গ জানেন না: গত 19 জানুয়ারির শুনানিতে (Asansol CBI Court) সমবায় ব্যাংকে 177টি ও 54টি অ্যাকাউন্টের তথ্য সামনে এনেছিল সিবিআই । সিবিআই দাবি করেছিল, যাঁদের নামে এই অ্যাকাউন্টগুলি করা হয়েছিল, তাঁরা কেউ বিষয়টি নিয়ে অবগত নন । শুধু তাই নয়, এই অ্যাকাউন্টগুলিতে সই করেছিলেন কোনও একজন ব্যক্তি, এমনই অনুমান সিবিআইয়ের ।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হাতের লেখা বিশারদের সহায়তা নেবে সিবিআই । ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে লক্ষ-লক্ষ টাকা ঢুকেছে এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হয়ে সেই টাকা অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের চাল কলের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছিল । এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য কোর্টে জানিয়েছিল সিবিআই ।
115টি বাফার অ্যাকাউন্টের তথ্য দিল সিবিআই: শুক্রবার অনুব্রত মণ্ডলের শুনানিতে ফের নতুন করে 115টি বাফার অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা করে সিবিআই । সিবিআই দাবি করেছে, এখনও পর্যন্ত 16 জন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকেরই দাবি অ্যাকাউন্টগুলি তাঁদের খোলা নয় এবং টাকাও তাঁদের নয় । এরপরেই সিবিআইয়ের কাছে বিচারক জানতে চান, তাহলে কীভাবে অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হল ?
আরও পড়ুন: করা হল না জামিনের আবেদন, ফের 14 দিনের জেল হেফাজতে কেষ্ট
দুদিনের মধ্যে অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়: আদালতে সিবিআই দাবি করে, মাত্র দুদিনের মধ্যেই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছে । ব্যাংক ম্যানেজার জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি শুধুমাত্র সই করেছেন । ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে এই কাজ করেছেন ব্যাংক ম্যানেজার, দাবি সিবিআইয়ের । সিবিআই আদালতে জানায়, অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা এই বিষয় সম্পর্কে বিন্দু বিসর্গ জানতেন না ।
স্বাস্থ্যসাথীর নথি নিয়ে খোলা হয় অ্যাকাউন্ট: আরও জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথীর মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করেই বাসিন্দাদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল । যা দিয়ে অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয় । চিহ্নিত 16জন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মধ্যে 12জন শুধু টিপ সই দিতে জানেন । তাঁদের নামেও সই করা হয়েছে। সইগুলি তাঁদের নয় ।
রাজীব ভট্টাচার্য নামে একজনের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার: এই অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা ঢুকেছে, আবার দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছে । রাজীব ভট্টাচার্য নামে একজনের অ্যাকাউন্টে এই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে । তিনি সেই রাজীব ভট্টাচার্য, যিনি 66 লক্ষ টাকা অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রীর চিকিৎসার নামে দিয়েছিলেন সমবায় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে । একটি জবানবন্দি দেখিয়ে সিবিআই বিচারককে তথ্য দেন যে, কীভাবে এই অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছিল ।
অনুব্রতকে সংশোধনাগারে জেরা করার আবেদন: শুক্রবার শুনানিতে অনুব্রতকে সংশোধনাগারে জেরা করার জন্য আবেদন করে সিবিআই । পাশাপাশি গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত আবদুল লতিফ গা ঢাকা দিয়েছে । আসানসোল সিবিআই আদালত সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে শুক্রবার আবদুল লতিফকে ফেরার ঘোষণা করে । অনুব্রত মণ্ডলকে জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী । আগামী 17 ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি ।