শান্তিপুর, 3 জুন: দিন আনা দিন খাওয়া সংসারকে বাঁচাতে কাজের সূত্রে বেঙ্গালুরুতে পাড়ি দিয়েছিলেন নদিয়ার শান্তিপুরের সুজয় ৷ শুক্রবার বাড়ি ফেরার পথে সম্মুখীন হয়েছিলেন ভয়াবহ দুর্ঘটনার ৷ যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন সুজয় ৷ করমণ্ডল এবং যশবন্তপুর এক্সপ্রেস মিলিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা তিনশো ছুঁই ছুঁই, সেই জায়গায় নিজে মৃত্যুর এত কাছ থেকে ফিরে আসতে পারবেন আশা করেননি সুজয় ৷ বর্তমানে ওড়িশার বালাসোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি ৷
নদিয়ার শান্তিপুর থানার গয়েশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজয় সিংহ রায়। সংসারে একমাত্র উপার্জন করার মানুষ তাঁর বাবা। কোনওরকম ভাবে অভাবের সংসার চলে তাঁদের ৷ বাধ্য হয়ে বাড়ির বড় ছেলে পড়াশোনা ছেলে ধরে সংসারের হাল ৷ কাজের সূত্রে সে পাড়ি দেয় বেঙ্গালুরু ৷ দেড় বছর ধরে সেখানকার একটি হোটেলে দিনমজুরের কাজ করত সে। দিন কয়েক ধরে তাঁর শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল ৷ চিকিৎসক দেখিয়েও ফল না মেলায় বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুজয়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল বাড়ি ফেরার সময় ওড়িশার বালাসোরের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সুজয়। গুরুতর জখম অবস্থায় কোনও মতে অন্য একজনের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর জানায় ৷ ব্য়স তারপর নাকি ফোন কেটে যায় ৷ সুজয়ের বোন রুপসা সিংহ রায় বলেন, "আমি প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলাম ৷ হঠাৎ একটি অচেনা নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। আমি ফোনটা ধরার পরেই কাঁপা কাঁপা স্বরে দাদার গলা শুনতে পাই ৷ দাদা নিজেই বলে, ও যে ট্রেনে আসছিল তা দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ৷ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। তারপরেই ফোন কেটে যায় ৷ তারপর বেশ কয়েকবার দাদার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি ৷"
সুজয়ের মা সুজাতা সিংহ রায় দুর্ঘটনা খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ৷ তিনি বলেন, "আমার মেয়ে পড়তে গিয়েছিল ৷ বাড়ি ফিরে এসে ওই জানায় আমার ছেলের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে ৷ বেশ কয়েকদিন ধরে পেটে ব্যথার কারণে ছেলে বাড়ি আসছিল। আমরা চাই প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব আমার ছেলেকে সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে আনুক।" সুজয়ের বাবা সারদা সিংহ রায় জানিয়েছেন, কোনওরকম ভাবে তাঁর একার উপার্জনেই সংসার চলত। ছেলে বাইরে কাজে গিয়েছিল সংসারের হাল ফেরাতে ৷ এখন সে ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে আসুক ৷
আরও পড়ুন: হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে বালাসোর থেকে হাওড়ায় আসছে দু'টি ট্রেন
জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ওড়িশার বালাসোর হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন সুজয় ৷ হাসপাতালের তরফ থেকেই চিকিৎসকরা বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন সুজয়ের কথা ৷