মুর্শিদাবাদ, 12 সেপ্টেম্বর: মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার অধীনে পাঁচথুপি গ্রামের সাধারণ দিনমজুর সম্প্রদায়ের মানুষ এই আধুনিক যুগেও টিকিয়ে রেখেছেন পৌরাণিক ভাদু শিল্পকে (People of Murshidabad Celebrate Extinct Bhadu Festival) । বাপ-ঠাকুরদার রেওয়াজ বজায় রাখতে আগলে রেখেছেন এই পৌরাণিক শিল্পকে (Bhadu Festival)।
পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজা নীলমণি সিংদেওয়রের তৃতীয় কন্যা ছিলেন ভদ্রাবতী। বিয়ের দিন ডাকাতদের হাতে হবু স্বামীর অকাল মৃত্যুতে লগ্নভ্রষ্টা হন ভদ্রাবতী। তাতে চরম মানসিক আঘাত পান তিনি। সেই শোকেই স্বামীর চিতায় নিজেকে শেষ করে দেন। মেয়ের স্মৃতিকে মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতেই বাবা নীলমণি সিংদেওয়র ভাদুগানের প্রচলন করেন। সেই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে গ্রামে গ্রামে প্রদর্শন করে বেরাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার পাঁচথুপি এলাকার কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষ।
ভাদ্র মাসের পয়লা তারিখ থেকে একটি ভাদু মূর্তির কাঠামো নিয়ে একটি ছেলেকে ঘাগরার মতো শাড়ি পড়িয়ে ও মাথায় ওড়না দিয়ে ভাদু সাজিয়ে গানের সঙ্গে নাচানো চিরাচরিত রীতি। আর মাটির ভাদু মূর্তি কোলে করে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চাল, পয়সা আদায় করেন ভাদু শিল্পীরা। ভাদু শিল্পীরা মুখে মুখে রচনা করেন ভাদু গান, তাঁদের গানে উঠে আসে ভাদুর জীবন যন্ত্রণার কাহিনী ৷ উঠে আসে সামাজিক বিষয়। ঢোল, হারমোনিয়াম ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গ্রামে গ্রামে গান শোনান ভাদু গানের লোকশিল্পীরা। সেই সঙ্গে তাঁদের কাছে জানতে পারা যায়, তাঁরা ভাদ্র মাসের প্রধম দিন বাড়ি ছেড়ে এসেছেন ৷ পুরো মাস তাঁরা বাড়ি ঢুকতে পারবেন না ৷ ভাদুর মূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন করে কিছু মানুষদের খাবার খাইয়ে তাঁরা বাড়ি যাবেন।
আরও পড়ুন: একুশের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুজোমণ্ডপে সর্বক্ষণ পাহারার বন্দোবস্ত বাংলাদেশে
বেশ কয়েক বছর আগেও বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদের মতো রাঢ় বাংলায় গ্রামে গ্রামে দেখা যেত ভাদু শিল্পীদের। ভাদু গান গেয়ে ও তার তালে তাল মিলিয়ে নাচ করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াতেন ভাদু শিল্পীরা । কিন্তু বর্তমান মুঠোফোন, আধুনিক গানের আড়ালে বেশ কিছু বছর ধরে এই ভাদু গান এবং ভাদু শিল্পীরা লুপ্তপ্রায় (Extinct Bhadu Festival)। দেখা যায় না সেই পৌরাণিক ভাদুর গান ও তার সকল শিল্পীদের।