ফরাক্কা, 20 মে: পেট বড় বালাই । করোনা অতিমারির আতঙ্ককেও ছাপিয়ে যায় পেটের খিদে । রয়েছে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মায়ের উপর দায়বদ্ধতা । সংসারের টানে, পেটের টানে, রুজির টানে তাই ফের বিপদের ঝুঁকি নিয়েই অনিশ্চিত জীবনের দিকে পাড়ি দিতে শুরু করেছেন মুর্শিদাবাদের কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক । বুধবার রাতে ফরাক্কা স্টেশনে ট্রেনে ওঠার আগে একবুক আক্ষেপ নিয়ে সবাই একসুরে বললেন, "পেটের খিদে মানবে না অতিমারি । এলাকায় কাজ থাকলে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ভিনরাজ্যে যেতে হত না ।"
মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় সাড়ে সাত লাখ পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করেন । রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবে এই সাড়ে সাত লাখ মানুষের কেউ কাজের সন্ধানে যান কেরালা, কেউ দিল্লি, কেউবা মুম্বই, কেউ আবার চেন্নাই । অধিকাংশই নির্মাণ সংস্থায় কাজ করেন । সবার একটাই লক্ষ্য । বাইরে থেকে উপার্জন করে পরিবারের পেট ভরানো ।
গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনও দগদগে সবার মনে । গত বছর করোনার সংক্রমণ রুখতে হওয়া লকডাউনে পরিযায়ীদের দুর্দশার ছবি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ অনেকে বহু কষ্টে ফিরে আসতে পেরেছিলেন । আত্মহত্যা, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরও দেখা গিয়েছে একই ছবি ৷ ভিনরাজ্যে লকডাউনের কারণে অনেকে ফিরে এসেছেন । অনেকে আবার ইদের ছুটিতে বা ভোট দিতে ফিরে ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আর যেতে পারেননি । সংসারে টান পড়ায় ফের পরিবারকে ফেলে ভিনরাজ্যের পথে পা বাড়ালেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক । ফরাক্কা, সুতি, সামশেরগঞ্জ থেকে বুধবার কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ৷ নিউ ফরাক্কা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন: একদিনে রেকর্ড করোনা পরীক্ষা, দৈনিক মৃত্যু 4 হাজারের কম
সবার দাবি, "রাজ্যে কাজ থাকলে তাঁদের বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ভিন রাজ্যে যেতে হত না । কিন্তু এখানে কর্মসংস্থানের বড় অভাব । পেটের খিদে তো আর করোনা আতঙ্ক মানে না । দিল্লিতে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় সেখানেই ফিরে যাচ্ছি।"
জঙ্গিপুর পথ দেখাচ্ছে, সাহস জোগাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের । এরপর ডোমকল, কান্দি, বেকিডাঙা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দেবে রুজির টানে । সবার মনে একটাই সংশয়, ফিরতে পারব তো!