ETV Bharat / state

বিমা কিস্তির রসিদ চাইতে কটূ কথা বলেছিলেন বন্ধুপ্রকাশ, তারপরই খুনের ছক উৎপলের

বিমার 24 হাজার টাকার জন্যই খুন করা হয়েছে বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর পরিবারকে । আজ সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার । ঘটনায় জড়িত উৎপল বেহরাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।

ফাইল ফোটো
author img

By

Published : Oct 15, 2019, 8:23 PM IST

Updated : Oct 16, 2019, 11:42 PM IST

বহরমপুর, 15 অক্টোবর : এই মাসের 5 তারিখ । জিয়াগঞ্জে বোনের বাড়িতে আসে উৎপল বেহরা । সেদিন স্টেশন থেকেই একটি অস্ত্র কিনেছিল সে । যদিও সেদিন রাতেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল ।

কে এই উৎপল ?

আদতে পেশায় রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহরা । বাড়ি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি ।

7 অক্টোবর ফের একবার উৎপল ফিরে আসে জিয়াগঞ্জে । বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির খোঁজ না মিললেও সেদিন চারপাশটা ভালো করে বুঝে নিয়েছিল । ঠিক পর দিন 8 তারিখ সকাল 10 টা 37 মিনিট । বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে বাড়ির ঠিকানা জেনে নিয়েছিল উৎপল । কেন ঠিকানা জানতে চেয়েছিল সে, মনে বিন্দুমাত্র কোনও সংশয় আসেনি বন্ধুপ্রকাশের । এরপরই ঠিকানা জেনে বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে হানা দিয়েছিল উৎপল ।

দুপুরে দরজার কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলেছিলেন বন্ধুপ্রকাশ । কাজ হাসিল করতে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি উৎপল । প্রথমে বন্ধুপ্রকাশ, তারপর তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, তারপর তাঁদের একমাত্র সন্তান আর্য । টার্গেট সম্পূর্ণ করল উৎপল । তিনটি খুন করার পর হাত, জামাকাপড় সবই তার রক্তাক্ত । ঠিক তখনই আর একটি বেলের শব্দে চমকে উঠেছিল ধুরন্ধর খুনি উৎপল । জানালা দিয়ে নজরে আসে দুধ দিতে এসেছে দুধওয়ালা । দেহগুলি সরানোর সুযোগ পায়নি সে । বাধ্য হয়ে দেহগুলো ফেলে পালিয়ে যায় উৎপল । রক্তমাখা পোশাক ও ধারালো অস্ত্র পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয় । আর অতি সাধারণ পোশাকে গা ঢাকা দেয় সে । জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় কিনারা করতে গিয়ে এমনই তথ্য জানাল পুলিশ ।

jiagunj murder case
ধৃত উৎপল বেহরা

কিন্তু কী কারণে এই খুন ? তদন্তকারী অফিসাররা জানাচ্ছেন খুনের মোটিভও ।

বন্ধুপ্রকাশ পেশাগত ক্ষেত্রে শিক্ষকতা করলেও বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার হয়েও কাজ করতেন । উৎপলের সঙ্গে সেই সূত্রেই বন্ধুপ্রকাশের যোগ । পুলিশ জানিয়েছে, বাৎসরিক 24 হাজার টাকার কিস্তির বিনিময়ে বন্ধুপ্রকাশের কাছে একটি বিমা করেছিল উৎপল । আর এই বিমা ঘিরেই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত । পুলিশের জেরায় উৎপল জানিয়েছে, বিমার প্রথম কিস্তির রসিদ বন্ধুপ্রকাশ দিয়েছিলেন । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় কিস্তির রসিদটি দেননি বন্ধুপ্রকাশ । তাই গত চার মাস ধরে রসিদ দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছিল উৎপল । কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হচ্ছিল না । উলটে বন্ধুপ্রকাশ গালিগালাজ করেছিলেন বলে জেরায় জানায় উৎপল । আর তারপরই বন্ধুপ্রকাশকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে ।

ঠিকভাবেই এগিয়েছিল উৎপলের ছক । প্রথমে বাড়ির এলাকা চেনা, কখন বন্ধুপ্রকাশ বাড়িতে থাকবে তার খোঁজ নেওয়া, এসব তথ্য ঠিকমতো জোগাড়ও করে ফেলেছিল । কিন্তু কথায় বলে অপরাধী একটি ভুল সব শেষ করে দেয় । এখানে হয়তো উৎপলের ফেলে যাওয়া ব্যাগ এবং তার থেকে উদ্ধার হওয়া রক্ত লাগা বিমার কাগজ পুলিশের সন্দেহ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় । সেই সন্দেহকে কয়েকগুণ বাড়িয়েছিল বিউটিপালের কললিস্ট ।

পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ মিনিটে তিনটি খুন করে উৎপল । বিউটির ফোনকলের তালিকা অনুযায়ী ঘটনার দিন দুপুর 12 টা 3 মিনিট থেকে 12 টা 6 মিনিটে বিউটি তিনি কারও সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন । তখনও তাঁরা বেঁচে ছিলেন । অন্যদিকে তদন্তে জানা যায়, ঘটনার দিন 12 টা 11 মিনিটে বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে ওই দুধওয়ালা আসে । যাকে দেখে উৎপল পালিয়ে যায় । তাই পুলিশের দাবি, 12 টা 6 মিনিট থেকে 12 টা 11 মিনিটের মধ্যেই উৎপল তিনজনকে খুন করে ।

কী জন্য খুন করেছিল উৎপল ? ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, তদন্তের স্বার্থে বন্ধুপ্রকাশের ফোনের তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল । সেখানে একটি নম্বর চোখে পড়ে । এই নম্বর থেকেই ঘটনার দিন বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করা হয় । এরপরেই নম্বরের ব্যবহারকারীর খোঁজ শুরু করে পুলিশ । এছাড়া, বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি থেকে পুলিশ যে জিনিসগুলি উদ্ধার করে তাতে একটি রক্তমাখা বিমার কাগজ ছিল । তাতেই নাম উঠে আসে সাগরদিঘির উৎপল বেহরার । এরপরই উৎপলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জিজ্ঞাসাবাদে উৎপল জানায়, ঘটনার দিন সে সাগরদিঘিতে ছিল । কিন্তু উৎপলের ফোন লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে ঘটনার দিন সে জিয়াগঞ্জে ছিল । এরপরই পুলিশের সন্দেহ হয় । দফায় দফায় জের করা হয় উৎপলকে । পুলিশের জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সে, এমনটাই জানান মুকেশ কুমার ।

শুধুই কি উৎপলের রক্তমাখা বিমা কাগজ সন্দেহ বাড়িয়েছিল পুলিশের ?

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সেদিন বন্ধুপ্রকাশের ঘর থেকে বেশ কিছু রক্তমাখা বিমার কাগজ উদ্ধার করা গেছিল । সেখান থেকেই উৎপলের পাশাপাশি কিছু নাম সামনে আসে । তদন্তের স্বার্থে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ডেকে পাঠানো হয় থানায় । দফায় দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ । উৎপলের পাশাপাশি ছিল তার বাবাও । কিন্তু একমাত্র উৎপলের উত্তরের মধ্যেই বেশ কিছু অসঙ্গতি নজরে আসে । আর তাতেই সন্দেহ তীব্র হয় । আলাদা করে উৎপলকে জিজ্ঞাসা করার চিন্তা মাথায় আসে পুলিশের । দফায় দফায় প্রশ্ন করতেই ভেঙে পড়ে খুনি উৎপল । স্বীকার করে 5 মিনিটের মধ্যে তিনটি খুন করেছে সে । বিমার কাগজ নিয়েই যে অশান্তি সে কথাও জানায় উৎপল । একইসঙ্গে স্বীকারোক্তি ছিল, বন্ধুপ্রকাশ কুকথা বলায় ধৈর্য ঠিক রাখতে পারেনি সে । তখনই বন্ধুপ্রকাশকে শাস্তি দেওয়ার ছক কষে । সেইমতো এগোতে শুরু করে নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য ।

মুকেশ কুমার জানান, উৎপল ও বন্ধুপ্রকাশ দু'জনের বাড়িই সাহাপুরে । তাই উৎপলকে বিউটি ও বন্ধুপ্রকাশের পরিবারের সকলেই চিনত । সেই কারণেই বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকেও খুন করে উৎপল ।

যদিও বিউটির বাবা-মায়ের বক্তব্য, ''CBI তদন্ত চাই । উৎপল আসল খুনি নয় ৷''

বহরমপুর, 15 অক্টোবর : এই মাসের 5 তারিখ । জিয়াগঞ্জে বোনের বাড়িতে আসে উৎপল বেহরা । সেদিন স্টেশন থেকেই একটি অস্ত্র কিনেছিল সে । যদিও সেদিন রাতেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল ।

কে এই উৎপল ?

আদতে পেশায় রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহরা । বাড়ি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি ।

7 অক্টোবর ফের একবার উৎপল ফিরে আসে জিয়াগঞ্জে । বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির খোঁজ না মিললেও সেদিন চারপাশটা ভালো করে বুঝে নিয়েছিল । ঠিক পর দিন 8 তারিখ সকাল 10 টা 37 মিনিট । বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে বাড়ির ঠিকানা জেনে নিয়েছিল উৎপল । কেন ঠিকানা জানতে চেয়েছিল সে, মনে বিন্দুমাত্র কোনও সংশয় আসেনি বন্ধুপ্রকাশের । এরপরই ঠিকানা জেনে বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে হানা দিয়েছিল উৎপল ।

দুপুরে দরজার কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলেছিলেন বন্ধুপ্রকাশ । কাজ হাসিল করতে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি উৎপল । প্রথমে বন্ধুপ্রকাশ, তারপর তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, তারপর তাঁদের একমাত্র সন্তান আর্য । টার্গেট সম্পূর্ণ করল উৎপল । তিনটি খুন করার পর হাত, জামাকাপড় সবই তার রক্তাক্ত । ঠিক তখনই আর একটি বেলের শব্দে চমকে উঠেছিল ধুরন্ধর খুনি উৎপল । জানালা দিয়ে নজরে আসে দুধ দিতে এসেছে দুধওয়ালা । দেহগুলি সরানোর সুযোগ পায়নি সে । বাধ্য হয়ে দেহগুলো ফেলে পালিয়ে যায় উৎপল । রক্তমাখা পোশাক ও ধারালো অস্ত্র পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয় । আর অতি সাধারণ পোশাকে গা ঢাকা দেয় সে । জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় কিনারা করতে গিয়ে এমনই তথ্য জানাল পুলিশ ।

jiagunj murder case
ধৃত উৎপল বেহরা

কিন্তু কী কারণে এই খুন ? তদন্তকারী অফিসাররা জানাচ্ছেন খুনের মোটিভও ।

বন্ধুপ্রকাশ পেশাগত ক্ষেত্রে শিক্ষকতা করলেও বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার হয়েও কাজ করতেন । উৎপলের সঙ্গে সেই সূত্রেই বন্ধুপ্রকাশের যোগ । পুলিশ জানিয়েছে, বাৎসরিক 24 হাজার টাকার কিস্তির বিনিময়ে বন্ধুপ্রকাশের কাছে একটি বিমা করেছিল উৎপল । আর এই বিমা ঘিরেই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত । পুলিশের জেরায় উৎপল জানিয়েছে, বিমার প্রথম কিস্তির রসিদ বন্ধুপ্রকাশ দিয়েছিলেন । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় কিস্তির রসিদটি দেননি বন্ধুপ্রকাশ । তাই গত চার মাস ধরে রসিদ দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছিল উৎপল । কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হচ্ছিল না । উলটে বন্ধুপ্রকাশ গালিগালাজ করেছিলেন বলে জেরায় জানায় উৎপল । আর তারপরই বন্ধুপ্রকাশকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে ।

ঠিকভাবেই এগিয়েছিল উৎপলের ছক । প্রথমে বাড়ির এলাকা চেনা, কখন বন্ধুপ্রকাশ বাড়িতে থাকবে তার খোঁজ নেওয়া, এসব তথ্য ঠিকমতো জোগাড়ও করে ফেলেছিল । কিন্তু কথায় বলে অপরাধী একটি ভুল সব শেষ করে দেয় । এখানে হয়তো উৎপলের ফেলে যাওয়া ব্যাগ এবং তার থেকে উদ্ধার হওয়া রক্ত লাগা বিমার কাগজ পুলিশের সন্দেহ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় । সেই সন্দেহকে কয়েকগুণ বাড়িয়েছিল বিউটিপালের কললিস্ট ।

পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ মিনিটে তিনটি খুন করে উৎপল । বিউটির ফোনকলের তালিকা অনুযায়ী ঘটনার দিন দুপুর 12 টা 3 মিনিট থেকে 12 টা 6 মিনিটে বিউটি তিনি কারও সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন । তখনও তাঁরা বেঁচে ছিলেন । অন্যদিকে তদন্তে জানা যায়, ঘটনার দিন 12 টা 11 মিনিটে বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে ওই দুধওয়ালা আসে । যাকে দেখে উৎপল পালিয়ে যায় । তাই পুলিশের দাবি, 12 টা 6 মিনিট থেকে 12 টা 11 মিনিটের মধ্যেই উৎপল তিনজনকে খুন করে ।

কী জন্য খুন করেছিল উৎপল ? ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, তদন্তের স্বার্থে বন্ধুপ্রকাশের ফোনের তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল । সেখানে একটি নম্বর চোখে পড়ে । এই নম্বর থেকেই ঘটনার দিন বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করা হয় । এরপরেই নম্বরের ব্যবহারকারীর খোঁজ শুরু করে পুলিশ । এছাড়া, বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি থেকে পুলিশ যে জিনিসগুলি উদ্ধার করে তাতে একটি রক্তমাখা বিমার কাগজ ছিল । তাতেই নাম উঠে আসে সাগরদিঘির উৎপল বেহরার । এরপরই উৎপলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জিজ্ঞাসাবাদে উৎপল জানায়, ঘটনার দিন সে সাগরদিঘিতে ছিল । কিন্তু উৎপলের ফোন লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে ঘটনার দিন সে জিয়াগঞ্জে ছিল । এরপরই পুলিশের সন্দেহ হয় । দফায় দফায় জের করা হয় উৎপলকে । পুলিশের জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সে, এমনটাই জানান মুকেশ কুমার ।

শুধুই কি উৎপলের রক্তমাখা বিমা কাগজ সন্দেহ বাড়িয়েছিল পুলিশের ?

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সেদিন বন্ধুপ্রকাশের ঘর থেকে বেশ কিছু রক্তমাখা বিমার কাগজ উদ্ধার করা গেছিল । সেখান থেকেই উৎপলের পাশাপাশি কিছু নাম সামনে আসে । তদন্তের স্বার্থে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ডেকে পাঠানো হয় থানায় । দফায় দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ । উৎপলের পাশাপাশি ছিল তার বাবাও । কিন্তু একমাত্র উৎপলের উত্তরের মধ্যেই বেশ কিছু অসঙ্গতি নজরে আসে । আর তাতেই সন্দেহ তীব্র হয় । আলাদা করে উৎপলকে জিজ্ঞাসা করার চিন্তা মাথায় আসে পুলিশের । দফায় দফায় প্রশ্ন করতেই ভেঙে পড়ে খুনি উৎপল । স্বীকার করে 5 মিনিটের মধ্যে তিনটি খুন করেছে সে । বিমার কাগজ নিয়েই যে অশান্তি সে কথাও জানায় উৎপল । একইসঙ্গে স্বীকারোক্তি ছিল, বন্ধুপ্রকাশ কুকথা বলায় ধৈর্য ঠিক রাখতে পারেনি সে । তখনই বন্ধুপ্রকাশকে শাস্তি দেওয়ার ছক কষে । সেইমতো এগোতে শুরু করে নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য ।

মুকেশ কুমার জানান, উৎপল ও বন্ধুপ্রকাশ দু'জনের বাড়িই সাহাপুরে । তাই উৎপলকে বিউটি ও বন্ধুপ্রকাশের পরিবারের সকলেই চিনত । সেই কারণেই বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকেও খুন করে উৎপল ।

যদিও বিউটির বাবা-মায়ের বক্তব্য, ''CBI তদন্ত চাই । উৎপল আসল খুনি নয় ৷''

Intro:জিয়াগঞ্জ খুনের ডিটেল Body:বহরমপুর - প্রিমিয়ামের ২৪ হাজার টাকা জমা না দিয়ে উল্টে ফোনে গালিগালাজ করায় জিয়াগঞ্জের খুনের অন্যতম কারন বলেই পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিযুক্ত উৎপল বেহারাকে হাজির করেই জানালেন জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তিনি বলেন, অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়েই খুন করা হয়েছে পাল দম্পতি সহ তাঁদের একমাত্র সন্তানকে। পুলিশ সুপার আরও জানান, একলাই এই খুনের ছিক কষে পেশায় রাজমিস্ত্রী উৎপল খুন করেছে। ঘটনাস্থল থেকে ধারাল অস্ত্র, অভিযুক্তের ব্যাগ একটি চপ্পল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাঁচ মিনিটের মধ্যে অপারেশন কম্পলিট করে বেড়িয়ে যায় আততায়ী। জেলা পুলিশ,সুপার বলেন, সবটাই নিজের মুখে স্বীকার করেছে পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি ও ঘটস্থলের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন খাড়া হয়েছে। এদিকে খুনের ঘটনাউ উৎপল জড়িত নয় বলে দাবি করে উঠেছে সিবিআই তদন্তের দাবি।
মৃত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সংস্থাতেই অর্থলগ্নি করেছিলেন উৎপল বেহারা। বাৎসরিক প্রিমিয়ামের পরিমান ২৪ হাজার টাকা। দুটি প্রিমিয়ামের একটি রসিদ দিলেও গত চার মাস ধরে একটির রসিদের জন্য বন্ধুপ্রকাশকে চাপ দিচ্ছিল উৎপল। উৎপল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরাতে কাজ করত। সেখান থেকে বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করলে তাকে বিস্তর গালিগালাজ করে বলে পুলিশকে জানিয়েছে উৎপল। এমনকি জাতী তুলেও খোঁটা দেওয়া হয়। সেদিনই খুনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে পুলিশি জেরায় জানিয়েছে। ৩ অক্টোবর এগরা থেকে ফিরে ৫ ও ৭ তারিখ দুদিন জিয়াগঞ্জে রেইকি করে যায়। ৮ তারিখ বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে দেখা করার নামে তার বাড়ির টিকানা জেনে নেই।ঘটনার দিন সাড়ে দশটা নাগাদ সাগরদিঘি থেকে জিয়াগঞ্জ আসে সে। পুলিশের দাবি দুপুর ১২ঃ০৩ ও ১২ঃ০৬ মিনিটে বিউটি পাল নিজের মোবাইল থেকে একজনকে ফোন ও ভিডিও কল করে। ১২ঃ১১ মিনিটে দুধবালা আসে। দুধবালাই প্রথম দেখে। এই পাক্বচ মিনিটের মধ্যে সে তিনজনকে খুন করে। পুলিশের দাবি, জেরায় উৎপল স্বীকার করেছে, দরজা কোলার স্মজ্ঞে সঙ্গে সে বন্ধুপ্রকাশের গলা কাটে। এরপর পাশের ঘরে বিউটি পাল ও তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে খুন করে। এরপর দুধবালাকে দেখেই সে ছুটে পালিয়ে যায়। তাকে কয়েকজন তাড়াও করে। কিছুদুর গিয়ে রক্তমাখা জামা প্যান্ট পুকুরে ফেলে টি শার্ট ও বারমুডা পরে ট্রেনে চেপে সাগরদিঘি ফেরে। উৎপল বেহারার মোবাইল টাওয়ার লোকেট করেই তার উপর সন্দেহ জমে।
তবে সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ,সুপারের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থলের বেশ কয়েকটি মিসিং লিঙ্ক রয়েছে। প্রথমত দরজার পাশে বন্ধুপ্রকাশকে খুন করা হলে তার দেহ কিছু দুরে বিছানায় কিভাবে এল। অঙ্গনের দেহ তার মায়ের ঘর থেকেই বা কিভাবে বাবার ঘরে এল। পুলিশ প্রথমদিন ঘর থেকে কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। আজ পুলিশ দাবি করেছে ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে ধারালো অস্ত্র। যেটি উৎপল মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে জিয়াগঞ্জ স্টেশ্ন সংলগ্ন এলকা থেকে সংগ্রহ করেছিল। ব্যাগ সহ সেই অস্ত্র ও প্রিমিয়ামের রসিদ ঘর থেকেই মিলিছে। একার পক্ষে তিনজনকে খুন করা সম্ভব নয় বলেও অনেকে দাবি করেছে। খুনের পর টানা ছদিন কিভাবে নিজেকে বাড়তে ও বন্ধুমহলে স্বাভাবিক রেখেছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উৎপাল বেহারার মা ক্ষ্যান্ত বেহারার দাবি তাঁর শান্ত প্রকৃতির ছেলে কোনভাবেই খুন করতে পারে না। অন্যদিকে রামপুরহাটে বিউটি পালের পরিবার পুলিশি তদন্তে বিশ্বাস না করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। লহলে জিয়াগঞ্জ খুনের রহস্য এখনও বিশবাঁও জলে বলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।Conclusion:স্ক্রিপ্ট
Last Updated : Oct 16, 2019, 11:42 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.