ETV Bharat / state

প্রতিমার পেট কেটে উদ্ধার পুরোহিত কন্যার দেহ ! নাম তাই "পেটকাটি দুর্গা"

author img

By

Published : Oct 7, 2020, 10:06 PM IST

Updated : Oct 7, 2020, 10:26 PM IST

মায়ের মূর্তির বুক থেকে পেট পর্যন্ত কিছুটা অংশ কাটা থাকে । গদাইপুরে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব এটাই । তবে মায়ের মূর্তির এই গঠনের পিছনে একটি কারণ আছে । রয়েছে অন্য কাহিনি ।

Durgatinashini 2020
ব্যানার্জী বাড়ির পেটকাটি দুর্গাপুজো

জঙ্গিপুর, 7 অগাস্ট : মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার গদাইপুর গ্রাম । এখানে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ছ'শো বছরের পুরোনো । স্বপ্নাদেশ পেয়ে নাকি এই পুজো শুরু করেন পরিবারের এক সদস্য । এই পুজোর বিশেষত্ব এর নামে । এখানে মা দুর্গা পূজিত হয় পেটকাটি দুর্গা হিসেবে । শুধু তাই নয়, স্বপ্নাদেশে প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গা থেকে গদাইপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নালাও নাকি কাটা হয়েছিল । পরে এর নাম হয় পেটকাটি দুর্গা । সেভাবেই মৃন্ময়ী মূর্তিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে । তবে শুরুতে এই দুর্গা নাম পেটকাটি ছিল না । তাহলে কেন এই নামকরণ ? এর পিছনে রয়েছে অন্য কাহিনি।

পুরোহিত দেবদুলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এক বছর সন্ধিপুজোর সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার সময় পুরোহিত কন্যার উপর কোনও কারণে দৃষ্টি পড়ে মা দুর্গার । তখনই মা দুর্গা পুরোহিত কন্যাকে দৃষ্টিভক্ষণ করেন । প্রতিমার মুখে লেগেছিল পুরোহিত কন্যার পরনের কাপড়ে একাংশ । সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পুরোহিত কন্যার কোনও সন্ধান মেলেনি । পরে স্বপ্নাদেশে দেবী জানান, তিনি পুরোহিত কন্যাকে ভক্ষণ করেছেন । মায়ের হাতের অস্ত্র দিয়ে তার পেট কাটলে মেয়েকে পাওয়া যাবে । তবে এই স্বপ্নাদেশ প্রকাশ্যে না আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । পরে মায়ের পেট থেকে পুরোহিত কন্যার দেহ মিলেছিল ঠিকই কিন্তু স্বপ্নাদেশ সঠিকভাবে না মানায় তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় । দেবী ফের স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন , এবার থেকে পেটকাটি দুর্গা হিসেবেই তিনি সকলের কাছে পরিচিত হবেন । পেটকাটি নামে তাঁর মাহাত্ম্য সব জায়গায় ছড়িয়ে যাবে । তারপর থেকেই মায়ের মূর্তিতে এখনও বুক থেকে পেট পর্যন্ত কিছুটা অংশ কাটা থাকে । "

জঙ্গিপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো

গদাইপুরের ব্যানার্জি পরিবার বর্তমানে চার শরিকে বিভক্ত । দুর্গাপুজোর বিশেষ তিথি ছাড়া নিত্যপুজো হয় পেটকাটি দুর্গার থাই মন্দিরে । পালা করে পুজোর ব্যয়ভার বহন করে ব্যানার্জি পরিবার । কোনও শরিক পুজোয় জাঁকজমক বাড়ালেও চিন্ময়ী মূর্তি এবং পুজোর নিয়ম কানুন কোনওদিনই বদল করা হয়নি । প্রথা মেনে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত বলিদান হয় । মায়ের ভোগে দেওয়া হয় মাছ-মাংস । শুধু সন্ধিপুজোয় মায়ের ভোগের মাংসে পিঁয়াজ, রসুন ব্যবহার করা হয় না । পরিবারের দাবি, এটাই তাদের নিরামিষ ভোগ । এছাড়া ভোগের থালায় থাকে নানা রকমের ভাজা, লুচি, পায়েস, মন্ডা এবং বিভিন্ন শাকসবজি । শাক্ত মতে এই পুজোর আবাহন হয় গঙ্গায় ঘট ভরে । বোধনের দিন থেকেই পুজো শুরু হয় ।
শুধু তাই নয় , দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে রঘুনাথগঞ্জের বালিঘাটা থেকে গদাইপুর পর্যন্ত নালা কেটে গঙ্গা এনেছে ব্যানার্জি পরিবার । পুজোর সময় ওই গঙ্গাবক্ষ দিয়েই কয়েক হাজার নৌকা গদাইপুর ঘাটে পৌঁছায় । পেটকাটি দুর্গা দর্শনের পাশাপাশি গঙ্গাবক্ষে নৌবিহার দর্শনার্থীদের কাছে বাড়তি পাওনা । এই দুর্গার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দিকে । বিভিন্ন জায়গায় তার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে । পেটকাটি দুর্গার কাছে অনেকেই মানসিক করে নাকি ফল পেয়েছেন । অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে । সেই কারণে পুজোর চারদিন 20 থেকে 25 হাজার মানুষ ভিড় জমায় পেটকাটি দুর্গার মণ্ডপে । ভিড় সামাল দিতে গ্রামীণ স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় পুলিশ । বিসর্জনে গদাইপুরের গঙ্গাপারে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয় । তবে কোরোনা আবহে এই বছর কতটা কী হবে সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ।

জঙ্গিপুর, 7 অগাস্ট : মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার গদাইপুর গ্রাম । এখানে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ছ'শো বছরের পুরোনো । স্বপ্নাদেশ পেয়ে নাকি এই পুজো শুরু করেন পরিবারের এক সদস্য । এই পুজোর বিশেষত্ব এর নামে । এখানে মা দুর্গা পূজিত হয় পেটকাটি দুর্গা হিসেবে । শুধু তাই নয়, স্বপ্নাদেশে প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গা থেকে গদাইপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নালাও নাকি কাটা হয়েছিল । পরে এর নাম হয় পেটকাটি দুর্গা । সেভাবেই মৃন্ময়ী মূর্তিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে । তবে শুরুতে এই দুর্গা নাম পেটকাটি ছিল না । তাহলে কেন এই নামকরণ ? এর পিছনে রয়েছে অন্য কাহিনি।

পুরোহিত দেবদুলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এক বছর সন্ধিপুজোর সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার সময় পুরোহিত কন্যার উপর কোনও কারণে দৃষ্টি পড়ে মা দুর্গার । তখনই মা দুর্গা পুরোহিত কন্যাকে দৃষ্টিভক্ষণ করেন । প্রতিমার মুখে লেগেছিল পুরোহিত কন্যার পরনের কাপড়ে একাংশ । সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পুরোহিত কন্যার কোনও সন্ধান মেলেনি । পরে স্বপ্নাদেশে দেবী জানান, তিনি পুরোহিত কন্যাকে ভক্ষণ করেছেন । মায়ের হাতের অস্ত্র দিয়ে তার পেট কাটলে মেয়েকে পাওয়া যাবে । তবে এই স্বপ্নাদেশ প্রকাশ্যে না আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । পরে মায়ের পেট থেকে পুরোহিত কন্যার দেহ মিলেছিল ঠিকই কিন্তু স্বপ্নাদেশ সঠিকভাবে না মানায় তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় । দেবী ফের স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন , এবার থেকে পেটকাটি দুর্গা হিসেবেই তিনি সকলের কাছে পরিচিত হবেন । পেটকাটি নামে তাঁর মাহাত্ম্য সব জায়গায় ছড়িয়ে যাবে । তারপর থেকেই মায়ের মূর্তিতে এখনও বুক থেকে পেট পর্যন্ত কিছুটা অংশ কাটা থাকে । "

জঙ্গিপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো

গদাইপুরের ব্যানার্জি পরিবার বর্তমানে চার শরিকে বিভক্ত । দুর্গাপুজোর বিশেষ তিথি ছাড়া নিত্যপুজো হয় পেটকাটি দুর্গার থাই মন্দিরে । পালা করে পুজোর ব্যয়ভার বহন করে ব্যানার্জি পরিবার । কোনও শরিক পুজোয় জাঁকজমক বাড়ালেও চিন্ময়ী মূর্তি এবং পুজোর নিয়ম কানুন কোনওদিনই বদল করা হয়নি । প্রথা মেনে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত বলিদান হয় । মায়ের ভোগে দেওয়া হয় মাছ-মাংস । শুধু সন্ধিপুজোয় মায়ের ভোগের মাংসে পিঁয়াজ, রসুন ব্যবহার করা হয় না । পরিবারের দাবি, এটাই তাদের নিরামিষ ভোগ । এছাড়া ভোগের থালায় থাকে নানা রকমের ভাজা, লুচি, পায়েস, মন্ডা এবং বিভিন্ন শাকসবজি । শাক্ত মতে এই পুজোর আবাহন হয় গঙ্গায় ঘট ভরে । বোধনের দিন থেকেই পুজো শুরু হয় ।
শুধু তাই নয় , দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে রঘুনাথগঞ্জের বালিঘাটা থেকে গদাইপুর পর্যন্ত নালা কেটে গঙ্গা এনেছে ব্যানার্জি পরিবার । পুজোর সময় ওই গঙ্গাবক্ষ দিয়েই কয়েক হাজার নৌকা গদাইপুর ঘাটে পৌঁছায় । পেটকাটি দুর্গা দর্শনের পাশাপাশি গঙ্গাবক্ষে নৌবিহার দর্শনার্থীদের কাছে বাড়তি পাওনা । এই দুর্গার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দিকে । বিভিন্ন জায়গায় তার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে । পেটকাটি দুর্গার কাছে অনেকেই মানসিক করে নাকি ফল পেয়েছেন । অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে । সেই কারণে পুজোর চারদিন 20 থেকে 25 হাজার মানুষ ভিড় জমায় পেটকাটি দুর্গার মণ্ডপে । ভিড় সামাল দিতে গ্রামীণ স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় পুলিশ । বিসর্জনে গদাইপুরের গঙ্গাপারে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয় । তবে কোরোনা আবহে এই বছর কতটা কী হবে সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ।

Last Updated : Oct 7, 2020, 10:26 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.