খড়গ্রাম, 27 জুন : বয়স মাত্র সাত । ক্লাস টুয়ের ছাত্র । সে না কি বোমাবাজি করেছে, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছে, খুনের চেষ্টাও করেছে । একথা বলছে খড়গ্রাম থানার পুলিশ রেকর্ড । ফলে বাড়ি থেকে বের হতেই পারছে না মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার মহিশার গ্রামের বছর সাতেকের অমর (নাম পরিবর্তিত) । একজন সাতছরের নাবালকের পক্ষে কীভাবে এমন অপরাধমূলক কাজ করা সম্ভব ? এনিয়ে পুলিশের তরফে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি । তবে অমরের আইনজীবী বিনীতা রায় জানিয়েছেন, তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারকে বিষয়টি জানিয়েছেন । তিনি আশ্বস্ত করেছেন ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোনও খোঁজখবর না নিয়েই অমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে নিয়েছে খড়গ্রাম থানার পুলিশ । পুলিশের সচেতন হওয়া দরকার । ঘটনার সূত্রপাত গত 18 জুন । অমরের মা জানিয়েছেন, সেদিন একটি পুজোকে কেন্দ্র করে মহিশার গ্রামের পশ্চিমপাড়া ও কালিতলাপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে ঝামেলা হয় । সেই ঘটনায় খড়গ্রাম থানায় মোট ন'জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পশ্চিমপাড়ার সনকা বাগদি । তার মধ্যে ছনম্বরে রয়েছে অমরের নাম । অমরের মায়ের কথায়, "পশ্চিমপাড়ার সঙ্গে আমাদের ঝামেলা । ওরা আমার সাতবছরের ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে । অথচ ও কিছুই জানে না । পুলিশও খোঁজ খবর না নিয়েই অভিযোগ নিয়ে নেয় । এখন আমরা আতঙ্কিত । অমর (নাম পরিবর্তিত) সারাদিন বাড়িতে কাঁদছে । খাওয়া দাওয়া করছে না । বলছে, মা আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে । আমি চাই, যে অমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে তার শাস্তি হোক ।"
আজ সকালে অমরের বাড়ি যান আমাদের প্রতিনিধি । তিনি দেখেন, বাড়িতে বসে রয়েছে অমর । চোখে মুখে আতঙ্ক । জানা গেল, বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে । যেতে পারছে না স্কুল ও টিউশন । বাড়িতেই কান্নাকাটি করছে । অমরকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, "আমি স্কুল যেতে পারছি না । পুলিশ আমাকে ধরে মারবে । আমার ভয় লাগছে । বিশ্বাস করুন আমি কিছুই করিনি । আমি স্কুলে যেতে চাই । আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেতে চাই । কিন্তু, পুলিশের জন্য বাড়ি থেকে বের হতেই পারছি না ।"
অমরের আইনজীবী বিনীতা রায় বলেন, "খুনের চেষ্টা, বোমাবাজি সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ । আমরা দেখে-শুনে অবাক হয়েছি । আমি নিজে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি । উনি আশ্বাস দিয়েছেন । বাচ্চা খুব ভয়ে রয়েছে । কান্নাকাটি করছে । স্কুল যেতে ভয় পাচ্ছে । মানবাধিকার কমিশনে এই কেস যাওয়া দরকার । আমরা বিচার চাই । পুলিশের আরও দায়িত্ববান হওয়া দরকার । না দেখে, না শুনে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে ।"