ETV Bharat / state

পারশালিকার ঘোষ বাড়ির পুজোয় দিন-রাত জ্বলে ঘিয়ের প্রদীপ

author img

By

Published : Oct 15, 2020, 9:14 AM IST

আর্থিক অনটনের কারণে কুলদেবতার স্থানান্তর করেছিল ঘোষ পরিবার । আর্থিক অবস্থা সচ্ছল হলে পুজোর জৌলুস বাড়তে থাকে ।

Durga puja ২০২০
মুর্শিদাবাদের পারশালিকার ঘোষ পরিবারের প্রাচীন দুর্গাপুজো

বড়ঞা, 15 অক্টোবর : চরম আর্থিক অনটনে পড়ে পারশালিকার ঘোষ পরিবার কুলদেবতা মদনমোহন জিও-র নিত্য সেবা দিতে না পারায় কুলদেবতাকে রেখে আসে কুলগুরুর বাড়িতে । কুলগুরুর নির্দেশ মেনে সেবছরই দুর্গাপুজোর শুরু । কুলদেবতাকে সন্তুষ্ট রাখতে কুলগুরুর নির্দেশে দুর্গাপুজোয় আবাহন থেকে নিরঞ্জন পর্যন্ত একটানা জালানো হয় দু'টি ঘিয়ের প্রদীপ । এই প্রথা আজ পর্যন্ত অমান্য হয়নি ।

ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজোর এবার 257 বছর । একসময় আর্থিক অনটনের জেরে কুলদেবতার স্থানান্তর করেছিল ঘোষ পরিবার । ধীরে ধীরে আর্থিক অনটন কাটিয়ে ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজোয় এসেছে জাঁকজমক । জৌলুস বেড়েছে । পরিবারের ছোটো থেকে বড় সকলেই বছরভর দুর্গাপুজোর অপেক্ষায় থাকেন । পুজোর ক'দিন অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠেন পরিবারের সকলে । বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত এবং বৈষ্ণব মতে পুজো হয় ঘোষ পরিবারে । আতপ চালের অন্ন, লুচি, মিষ্টি, দুগ্ধজাত নানাবিধ খাবার ও সাত রকমের ভাজা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয় । পুজোর ভোগে ব্যবহার করা হয় কাঁসার থালা, বাটি গ্লাস । পুজোর বাসনে রয়েছে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া । গ্লাস-বাটি এবং থালায় আজও মেড ইন জার্মানি-র ছাপ স্পষ্ট ।

পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, 257 বছর আগের পুজোর সরঞ্জাম আজও ব্যবহার করা হচ্ছে । তার সঙ্গে কিছু নতুন জিনিসের সংযোজন ঘটলেও প্রাচীন ঐতিহ্য বয়ে চলেছে ঘোষ পরিবার । প্রথমে ছোটো তালপাতার ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে পুজো হত । তখন প্রতিমা হত একচালায় । পরবর্তী সময়ে যখন ঘোষ পরিবার আবার আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠে তখন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় । সেও প্রায় দেড়শ বছর আগে । ধীরে ধীরে একচালা ভেঙে এখন দেবীর আরাধনা হয় তিনচালায় । এখন মন্দিরের পরিধিও বেড়েছে । প্রাচীন ঐতিহ্যকে বহাল রেখে দেবী প্রতিমায় আনা হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া । তবে প্রথা রীতি এবং পুজোর আচার-আচরণ এখনও বদলানো হয়নি ।

পারশালিকার ঘোষ বাড়ির 257 বছরের পুরানো দুর্গাপুজো

ঘোষ পরিবারের পুজোয় বংশপরম্পরায় প্রতিমা নির্মাণ করছেন একই পরিবারের শিল্পীরা । পুরোহিত থেকে শুরু করে ঢাকি, পারিবারিক পরম্পরা ধরে রেখেছেন তাঁরাও । কুলদেবতা মদনমোহনের মন্দির আজ অক্ষত রয়েছে ঘোষ পরিবারের উঠানে । নিত্যপুজোয় ফল, আতপ চাল, মিষ্টিসহ ভোগ নিবেদন করা হয় । রথের দিন প্রতিমার কাঠামোয় মাটি দেওয়া থেকে শুরু হয়ে যায় পুজোর তোড়জোড় । তবে ষষ্ঠীর ঘট স্থাপন করে দেবীর আবাহন শুরু করা হয় । সপ্তমীতে কলাবউ স্নানের পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা । দেবীর পূর্ণ কলস স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে দু'টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো হয় । প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত ঘিয়ের প্রদীপ বিরামহীনভাবে জ্বালানো হয় । পরিবারের সদস্যরা জানান, কুলগুরুর নির্দেশে এই রীতি তাঁদের পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য । সন্ধি পুজোর সংকল্প করা হয় 108টি পদ্ম দিয়ে । বলিদান প্রথা কোনওদিন ছিল না । প্রথমদিকে চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হলেও পরবর্তীকালে সেই প্রথা তুলে দেওয়া হয় ।

পরিবারের সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, "কুলগুরুর কাছে কুলদেবতার নিত্যসেবার ভার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল দুর্গা প্রতিমা । বংশের সেই ধরা আমরা অব্যাহত রেখেছি ।" দেবীবরণ থেকে শুরু করে দেবীর নিরঞ্জন পর্যন্ত পরিবারের মহিলারা পুজোর আয়োজন করেন । পরিবারের এক সদস্য অতসী ঘোষ বলেন, "সারা বছরের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অভিযোগ পুজোর চার দিন আমাদের কাছে ঘেঁষতে পারে না ।" ছোটোরা বছরভর পথ চেয়ে থাকে পুজোর দিকে । দশমীতে চোখের জলে দেবীকে বিদায় দেন ঘোষ পরিবারের সকলে । সেদিন থেকে আবার দিন গোনা শুরু ।

বড়ঞা, 15 অক্টোবর : চরম আর্থিক অনটনে পড়ে পারশালিকার ঘোষ পরিবার কুলদেবতা মদনমোহন জিও-র নিত্য সেবা দিতে না পারায় কুলদেবতাকে রেখে আসে কুলগুরুর বাড়িতে । কুলগুরুর নির্দেশ মেনে সেবছরই দুর্গাপুজোর শুরু । কুলদেবতাকে সন্তুষ্ট রাখতে কুলগুরুর নির্দেশে দুর্গাপুজোয় আবাহন থেকে নিরঞ্জন পর্যন্ত একটানা জালানো হয় দু'টি ঘিয়ের প্রদীপ । এই প্রথা আজ পর্যন্ত অমান্য হয়নি ।

ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজোর এবার 257 বছর । একসময় আর্থিক অনটনের জেরে কুলদেবতার স্থানান্তর করেছিল ঘোষ পরিবার । ধীরে ধীরে আর্থিক অনটন কাটিয়ে ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজোয় এসেছে জাঁকজমক । জৌলুস বেড়েছে । পরিবারের ছোটো থেকে বড় সকলেই বছরভর দুর্গাপুজোর অপেক্ষায় থাকেন । পুজোর ক'দিন অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠেন পরিবারের সকলে । বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত এবং বৈষ্ণব মতে পুজো হয় ঘোষ পরিবারে । আতপ চালের অন্ন, লুচি, মিষ্টি, দুগ্ধজাত নানাবিধ খাবার ও সাত রকমের ভাজা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয় । পুজোর ভোগে ব্যবহার করা হয় কাঁসার থালা, বাটি গ্লাস । পুজোর বাসনে রয়েছে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া । গ্লাস-বাটি এবং থালায় আজও মেড ইন জার্মানি-র ছাপ স্পষ্ট ।

পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, 257 বছর আগের পুজোর সরঞ্জাম আজও ব্যবহার করা হচ্ছে । তার সঙ্গে কিছু নতুন জিনিসের সংযোজন ঘটলেও প্রাচীন ঐতিহ্য বয়ে চলেছে ঘোষ পরিবার । প্রথমে ছোটো তালপাতার ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে পুজো হত । তখন প্রতিমা হত একচালায় । পরবর্তী সময়ে যখন ঘোষ পরিবার আবার আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠে তখন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় । সেও প্রায় দেড়শ বছর আগে । ধীরে ধীরে একচালা ভেঙে এখন দেবীর আরাধনা হয় তিনচালায় । এখন মন্দিরের পরিধিও বেড়েছে । প্রাচীন ঐতিহ্যকে বহাল রেখে দেবী প্রতিমায় আনা হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া । তবে প্রথা রীতি এবং পুজোর আচার-আচরণ এখনও বদলানো হয়নি ।

পারশালিকার ঘোষ বাড়ির 257 বছরের পুরানো দুর্গাপুজো

ঘোষ পরিবারের পুজোয় বংশপরম্পরায় প্রতিমা নির্মাণ করছেন একই পরিবারের শিল্পীরা । পুরোহিত থেকে শুরু করে ঢাকি, পারিবারিক পরম্পরা ধরে রেখেছেন তাঁরাও । কুলদেবতা মদনমোহনের মন্দির আজ অক্ষত রয়েছে ঘোষ পরিবারের উঠানে । নিত্যপুজোয় ফল, আতপ চাল, মিষ্টিসহ ভোগ নিবেদন করা হয় । রথের দিন প্রতিমার কাঠামোয় মাটি দেওয়া থেকে শুরু হয়ে যায় পুজোর তোড়জোড় । তবে ষষ্ঠীর ঘট স্থাপন করে দেবীর আবাহন শুরু করা হয় । সপ্তমীতে কলাবউ স্নানের পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা । দেবীর পূর্ণ কলস স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে দু'টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো হয় । প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত ঘিয়ের প্রদীপ বিরামহীনভাবে জ্বালানো হয় । পরিবারের সদস্যরা জানান, কুলগুরুর নির্দেশে এই রীতি তাঁদের পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য । সন্ধি পুজোর সংকল্প করা হয় 108টি পদ্ম দিয়ে । বলিদান প্রথা কোনওদিন ছিল না । প্রথমদিকে চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হলেও পরবর্তীকালে সেই প্রথা তুলে দেওয়া হয় ।

পরিবারের সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, "কুলগুরুর কাছে কুলদেবতার নিত্যসেবার ভার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল দুর্গা প্রতিমা । বংশের সেই ধরা আমরা অব্যাহত রেখেছি ।" দেবীবরণ থেকে শুরু করে দেবীর নিরঞ্জন পর্যন্ত পরিবারের মহিলারা পুজোর আয়োজন করেন । পরিবারের এক সদস্য অতসী ঘোষ বলেন, "সারা বছরের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অভিযোগ পুজোর চার দিন আমাদের কাছে ঘেঁষতে পারে না ।" ছোটোরা বছরভর পথ চেয়ে থাকে পুজোর দিকে । দশমীতে চোখের জলে দেবীকে বিদায় দেন ঘোষ পরিবারের সকলে । সেদিন থেকে আবার দিন গোনা শুরু ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.