মালদা, 25 জানুয়ারি : শিলিগুড়ি পৌরনিগমের নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হয়নি ৷ এবার সেই দিকেই এগোচ্ছে মালদার দুই পৌরসভা বাম-কংগ্রেস জোট ভাগ্য ৷ যদিও দু’পক্ষ বলছে যে জোটের রাস্তা খোলা আছে ৷
প্রসঙ্গত, আগামী 12 ফেব্রুয়ারি রাজ্যের চারটি পৌরনিগমে ভোট ৷ এর পর বাকি পৌরসভাগুলির ভোট হওয়ার কথা ৷ এখনও দিন ঘোষণা না হলেও বিভিন্ন পৌরসভায় সাংগঠনিক ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি ৷
সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছে কংগ্রেস । বামেরা আবার ইংরেজবাজারের (Englishbazar Municipality) সঙ্গে পুরাতন মালদা পৌরসভার (Old Malda Municipality) প্রার্থী তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে । অর্থাৎ দুই দলই এবার একলা লড়াই করার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছে । যদিও মুখে বলা হচ্ছে, এখনও জোটের দরজা খোলা রয়েছে ।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যবাসী বাম-কংগ্রেসের জোট দেখেছিলেন । সেবার এই জেলার 12টি আসনে অভূতপূর্ব সাফল্য পায় সেই জোট । প্রতিটি আসনেই জোট প্রার্থীরা জয়ী হন । পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে জোট গড়েই লড়াই করেছিল বাম-কংগ্রেস । কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের সঙ্গে এই জেলাতেও সেই জোট মুখ থুবড়ে পড়ে । 12 থেকে শূন্য হয়ে যায় বাম-কংগ্রেস । এই ফলাফলের পর দু’দলেরই নীচুতলার কর্মীরা দাবি তুলতে শুরু করেছিলেন, আর জোট নয়, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে দুই তরফকেই একলা চলতে হবে । এবার কর্মীদের সেই দাবিতেই সিলমোহর দিতে চলেছে দুই শিবির ৷
মালদা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মোত্তাকিন আলম ইটিভি ভারতকে বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা দু’দফা আলোচনার ভিত্তিতে ইংরেজবাজার পৌরসভার 29টি ওয়ার্ডের জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছি । পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রার্থী বাছাই করছেন সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার । দু’-একদিনের মধ্যেই ওই পৌরসভার প্রার্থী তালিকাও আমরা চূড়ান্ত করে ফেলব । 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে 2021 পর্যন্ত আমরা বামেদের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছি । আসন্ন পৌর নির্বাচনে তারা যদি জোট করতে চায় তবে আমরা আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি । তবে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে ।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘19 ও 20 জানুয়ারি সিপিএমের জেলা সম্মেলন ছিল । হয়তো ব্যস্ততার জন্য তারা জোট নিয়ে আলোচনা করতে পারেনি । যদিও আমরা পৌর নির্বাচনে একা লড়াইয়ের জন্য তৈরি । একুশের ভোটে কংগ্রেসকে মুছে ফেলতে তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাত হয়েছিল । এনআরসি থেকে বাঁচতে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিল । মানুষ কিন্তু নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে । তাই পৌর নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারলে আমরা বেশ ভাল ফল করব । সেটা বামেদের সঙ্গে জোট করে হোক কিংবা একা লড়াই করেই হোক ।’’
একই সঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, ‘‘কলকাতা পৌর নির্বাচনে যেভাবে পুলিশকে দিয়ে তৃণমূল ভোট করিয়েছে সেভাবেই যদি পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে মানুষ নিজেদের ভোট দিতে পারবে বলে মনে হয় না ।”
অন্যদিকে মালদা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অম্বর মিত্রের বক্তব্য, “2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন রফা হয়েছিল । এই জেলায় দু’দলের ফলও ভাল হয়েছিল । কিন্তু উনিশের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের জন্যই এই সমাঝোতা প্রক্রিয়া ধাক্কা খায় । সেবার তারা জোটের শর্ত উপেক্ষা করে রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেয় । আমরা অবশ্য সেই ভুল করিনি । দক্ষিণ মালদা ও বহরমপুর কেন্দ্রে আমরা প্রার্থী দিইনি । অবশ্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমাঝোতা করে গোটা রাজ্যেই আমরা লড়াই করেছিলাম । তার ফলাফল সবাই জানে ।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সম্ভবত আগামী 27 ফেব্রুয়ারি রাজ্যে পৌর নির্বাচন হতে চলেছে । এই নির্বাচনের জন্য আমরা ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভার 49টি আসনেই বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি । দু’একটি আসন নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে । তবে রাজনীতিতে কোনও কথাই শেষ কথা নয় । কংগ্রেসের সঙ্গে পৌর নির্বাচনে আসন সমাঝোতা হবে কি না, তা দু’দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বিবেচনা করবেন ।’’
আরও পড়ুন : corruption in land lease in Malda : পাট্টা বিলিতে চলছে দালালরাজ, আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল বিধায়ক
তিনি আরও বলেন, ‘‘এটুকু বলা যায়, আমরা বামেদের চার দল জেলার দুই পৌরসভায় এককভাবে লড়াই করতে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি । হাতে আর বেশি সময় নেই। তাই খুব তাড়াতাড়ি সেই তালিকা সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করে দেব । কারণ, প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হলে নির্বাচনী প্রচারের কোনও কাজ করা যায় না ।’’ দুই তরফই যদি নিজেদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলে তবে আর আসন সমাঝোতার কোনও প্রশ্নই ওঠে না । মালদার দুই পৌরসভার গতিপ্রকৃতি সে দিকেই এগোচ্ছে ৷