মালদা, 5 মে : দ্বিতীয় ঢেউয়ে উত্তরবঙ্গে মালদা ও শিলিগুড়ির করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ৷ এই দুই জায়গায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা ৷ মৃত্যুও বাড়ছে ৷ জেলায় পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে না চলে যায়, তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ৷ তার মধ্যে অন্যতম, মালদা মেডিকেলে আরও একটি 400 বেডের কোভিড ইউনিট তৈরি করা ৷
ইতিমধ্যে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সেই নির্দেশিকা এসে পৌঁছেছে ৷ যদিও এই নিয়ে ক্যামেরায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেডিকেলের অধ্যক্ষ ৷ তবে তিনি জানিয়েছেন, এখন মেডিকেলে যে কোভিড ইউনিট রয়েছে, তাতে বেডের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে ৷ বসানো হচ্ছে অক্সিজেন প্ল্যান্টও ৷ এরই মধ্যে মেডিকেলের অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীও করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৷ এই অবস্থায় বিভিন্ন বিভাগ থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে এনে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ৷
বর্তমানে মালদা মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার ইউনিট ভবনে 175 বেডের একটি কোভিড ইউনিট চালু রয়েছে ৷ সেখানে 20 টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বেড রয়েছে ৷ ওই বিভাগে আরও 25 টি বেড বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ কারণ, প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য করোনা আক্রান্ত মেডিকেলে এসেও বেডের অভাবে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন ৷ এদিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নেবে ৷ সেদিকে নজর রেখেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মালদা মেডিকেলে 400 বেডের আরও একটি কোভিড ইউনিট গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷
মেডিকেল সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ভবনের তরফে যে নির্দেশিকা এসেছে তাতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ আলাদা ভবনে নতুন ওই কোভিড ইউনিট তৈরি করতে হবে ৷ সেখানে পাইপলাইনে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে ৷ কিন্তু এই মুহূর্তে মেডিকেলে ফাঁকা কোনও ভবন নেই ৷ তাই প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে, বর্তমানে ফাঁকা ট্রমা কেয়ার ইউনিট ভবনের কোনও একটি তলে নতুন সেই ইউনিট গঠন করা হবে ৷ এই নিয়ে গতকাল স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকও করেছেন অধ্যক্ষ ৷ কিন্তু সেই বৈঠকের পর তিনি এখনও কোনও নির্দেশিকা জারি করেননি ৷ ফলে কবে সেই নতুন ইউনিট চালু হবে, তা কেউ বলতে পারছে না ৷
মালদা মেডিকেলের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়কে নতুন 400 বেডের কোভিড ইউনিট গঠন নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিশেষ কিছু বলতে চাননি ৷ তিনি শুধু বলেন, “এখানে যে কোভিড ইউনিট রয়েছে, তাতে আজ 155 জন আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন ৷ এই ইউনিটে আমরা কিছু বেড বাড়িয়েছি ৷ এখানে প্রতিনিয়ত সমস্ত ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে ৷ লালারসের পরীক্ষায় প্রতিদিন 45 থেকে 50 শতাংশ নমুনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে ৷ এটা একটু চিন্তার বিষয় ৷ এখানে একটি এলএমও ট্যাঙ্ক বসানোর প্রস্তাব রয়েছে ৷ তার কাজও শুরু হয়েছে ৷ আশা করি, দু’সপ্তাহের মধ্যে সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে ৷ সেক্ষেত্রে অক্সিজেনের কোনও সমস্যা থাকবে না ৷ এখন আমরা সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীদের অক্সিজেন দিচ্ছি ৷ অক্সিজেন নিয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সমস্যা হয়নি ৷ মেডিকেলের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৷ আমরা বিভিন্ন বিভাগ থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এনে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও সহযোগিতা পেলে আমরা এখানে আরও বেড বাড়াব ৷”