মালদা, 8 মার্চ : মালদা জেলা পরিষদ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন নাটক ৷ আজ বিকেলে কলকাতায় জেলা পরিষদের 14 জন তৃণমূল সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেছে বিজেপি ৷ সেই হিসাবে মালদা জেলা পরিষদ তাদের দখলে চলে এসেছে বলেও দাবি করেছে গেরুয়া শিবির ৷ আজ বিজেপিতে যোগ দেওয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি ডিভিশনাল কমিশনারকে লেখা এক চিঠি সংবাদমাধ্যমকে দেন ৷ দেখা যায়, ওই চিঠিতে গৌরবাবু সহ মোট 13 জন সদস্যের স্বাক্ষর রয়েছে ৷ এরপরেই সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর দাবি করেছেন, এখনও জেলা পরিষদে তাঁদের 20 জন সদস্য রয়েছেন ৷ ফলে জেলা পরিষদের দখল এখনও তাঁদের হাতেই রয়েছে ৷ এমনকী সেই সাংবাদিক বৈঠকে এমন দু’জন সদস্যকে তিনি হাজির করেন, গৌরবাবুর দেওয়া চিঠিতে যাঁদের স্বাক্ষর রয়েছে৷ ফলে আদপে জেলা পরিষদ কাদের হাতে রয়েছে তা নিয়ে ধন্ধ দেখা দিয়েছে৷ তবে বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল এখনও দাবি করছেন, জেলা পরিষদ এখন তাঁদের৷
আজ সাংবাদিক বৈঠকে মৌসম বলেন, “জেলা পরিষদের কিছু সদস্য এতদিন দলের সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে কিছু টাকা ও পদের লোভে বিজেপিতে যোগদান করেছেন ৷ মানুষ এটা ভালোভাবে নিচ্ছে না ৷ কারণ, তাঁরা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই তাঁদের ভোট দিয়েছিলেন ৷ তাঁরা কেউ ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় ভোট পাননি ৷ আজ যাঁরা বিজেপিতে গেলেন, তাঁদের জন্য ভোটে দলের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না ৷ একটা কথা জেনে রাখা ভালো, ভোটারদের কখনও কেনা যায় না ৷ তারা আমাদের সঙ্গেই আছে৷ আজ জেলা পরিষদের সদস্যদের বৈঠকে ডেকেছিলাম ৷ ২০ জন সদস্য এখনও আমাদের সঙ্গে আছেন ৷ আজ সভাধিপতিও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷ তাঁকে সাসপেন্ড করার জন্য আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি ৷ সরলা মুর্মু কিংবা অম্লান ভাদুড়িদেরও দল সব সুযোগ ও সম্মান দিয়েছে ৷ তারপরেও যদি তাঁরা চলে যান, তবে তাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্য দলে গিয়েছেন ৷ এর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনও হয়েছে ৷ আমরা এনিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব ৷”
আরও পড়ুন : সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল মহিলাদের পোশাক পরা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ !
মৌসমের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত জেলা পরিষদ সদস্য দীনেশ টুডুর নাম রয়েছে ডিভিশনাল কমিশনারকে লেখা চিঠিতে ৷ তাঁর দাবি, ওই চিঠিতে তাঁর স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে ৷ তিনি বলেন, “আপনারা দেখছেন, আমি মৌসম নুরের পার্টি অফিসে রয়েছি ৷ অর্থাৎ আমি সশরীরে কলকাতায় নেই ৷ এখান থেকেই পরিষ্কার, আমি এখনও তৃণমূলেই রয়েছি ৷ আমি এমন কোনও কাগজে স্বাক্ষর করিনি ৷ এখানে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে ৷ এনিয়ে জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব৷” প্রায় একই বক্তব্য চিঠিতে স্বাক্ষর থাকা আরেক সদস্য বন্দনারানি ঘোষের ৷ তিনি বলেন, “আমরা যখন একসঙ্গে দিঘা ঘুরতে গিয়েছিলাম ৷ তখনই এই কাগজে আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয়েছিল ৷ আমাকে বিজেপিতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল ৷ কিন্তু আমি গতকাল রাতেও সভাধিপতিকে জানিয়ে দিই, আমি তৃণমূলেই থাকব ৷ আমাকে এর জন্য টাকার লোভও দেখানো হয়েছিল৷”
এদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল এখনও দাবি করছেন, মালদা জেলা পরিষদ এখন তাঁদের দখলে৷ তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছি, জেলা পরিষদ দখল শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷ আজ কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জেলা পরিষদের 14 জন সদস্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷ এখন আমাদের হাতে 21 জন জেলা পরিষদের সদস্য রয়েছে ৷ আজ থেকে মালদা জেলা পরিষদ আমাদের ৷ আজ থেকে তৃণমূল শাসিত জেলা পরিষদ বলা যাবে না ৷ সেটা এখন বিজেপি শাসিত ৷ আজ জেলা থেকে আরও কয়েকজন তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷”