মালদা, 15 ডিসেম্বর: আর কত গরিব হলে সরকারি ঘর পাওয়া যায়? প্রশ্ন তুলেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোল্লাবাড়ি ও জনমদল গ্রামের বঞ্চিত গ্রামবাসীরা ৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (Awas Yojana) ঘরের দাবিতে আজ তাঁরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভও দেখান ৷ যদিও স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য এর পিছনে বিরোধীদের হাত দেখতে পাচ্ছেন ৷
মোল্লাবাড়ি ও জনমদল, দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের সিংহভাগই অত্যন্ত গরিব ৷ দিনমজুরি আর কৃষিজমিতে খাটাই তাঁদের পেশা ৷ গ্রামের ছবি দেখলে তাঁদের গরিবির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়৷ বেশিরভাগ বাড়িই বেহাল ৷ অনেক বাড়ির মাথায় টালিটুকুও নেই ৷ প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের নীচেই চলে রোজনামচা ৷ দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি প্রকল্পের ঘরের জন্য তাঁরা এখানে ওখানে দরবার করে যাচ্ছেন ৷ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা প্রধান সবাইকে আশ্বস্ত করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নিশ্চয়ই তাঁদের সরকারি ঘর হবে ৷ কিন্তু তাঁদের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি ৷ এবারও তাঁদের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নেই ৷ সেকথা জানতে পেরেই যেন গরম তেলে জল পড়ে৷ আজ ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা (Villagers protest for not getting home) ৷
মোল্লাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মেরাজুল ইসলাম বলেন, "প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় মোল্লাবাড়ি আর জনমদল, এই দুটি বুথে দেখা যাচ্ছে, যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে, সরকারি চাকরি করে, এমনকি পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রীর নামও রয়েছে ৷ সুপারভাইজারের নামও ওই তালিকায় রয়েছে ৷ শুধু তাদের নিজেদের নামই নয়, তালিকায় রয়েছে তাদের বাড়ির অন্য সদস্যদের নামও ৷ আর গরিব মানুষের নামই নেই ৷ তালিকায় নাম তুলতে হাজার হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে ৷ গরিব মানুষ অত টাকা পাবে কোথায়? আমি একটা ছোট্ট চায়ের দোকান করে সংসার চালাই ৷ নিজের এক ছটাক মাটি নেই ৷ সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেছিলাম ৷ বলে দিয়েছিল, হবে না ৷ আমার ভাই কিংবা মায়ের নামও তালিকায় নেই ৷ সব নাম কেটে দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা কাটমানি দিতে পারিনি বলেই সরকারি ঘর পাব না ৷ ওরা অর্থশালী ৷ পর্যাপ্ত কাটমানি দিয়েছে ৷ তাই ওদের একই বাড়ি থেকে একাধিক নাম তালিকায় রয়েছে ৷ সরকার আর প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এই তালিকা তদন্ত করে দেখা হোক ৷ যারা প্রকৃতই সরকারি ঘর পাওয়ার দাবি রাখে, তাদের তা দেওয়া হোক ৷"
জনমদল গ্রামের ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন জমিলা বেওয়া ৷ তিনি বলেন, "ভিক্ষা করতে করতে আমার স্বামীর ইন্তেকাল হয়ে গিয়েছে ৷ ভিক্ষা করতে করতে আমারও ইন্তেকাল হয়ে যাবে ৷ কিন্তু তবু সরকারি ঘর পাব না ৷ ছেলে বাইরে খাটতে গিয়েছে ৷ ওর মাটির দাওয়ায় দিন কাটাই ৷ ঘরের জন্য কতবার কাগজ জমা দিলাম ৷ ওরা কাগজ কী করছে জানি না ৷ কিন্তু তালিকায় আমার নাম নেই ৷"
আরও পড়ুন: আবাস যোজনায় নাম বাদ, পঞ্চায়েতে তালা গ্রামবাসীদের
পঞ্চায়েত সদস্য এক্রামুল হকের বক্তব্য, "2018 সালে এই যোজনার দরখাস্ত জমা হয়েছিল ৷ প্রশাসনের লোক এসে বাড়ি বাড়ি সার্ভে করে তালিকা বানায় ৷ সেই তালিকা নিয়ে বিডিও সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন৷ বৈঠকে কেউ তালিকা নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেনি ৷ সেই সময় আমি গ্রামে ছিলাম না ৷ বাইরে ছিলাম ৷ এই চার বছরে অনেকে নিজের কাঁচা বাড়ি পাকা করে নিয়েছে ৷ এখন ফের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সার্ভে হচ্ছে৷ সার্ভের পর এই তালিকা বহাল থাকবে কি না আমরা জানি না ৷ আজ আমাদের গ্রাম সংসদ সভা আছে ৷ যাদের কাঁচাবাড়ি রয়েছে, তারা সাদা কাগজে দরখাস্ত করতে পারে ৷ সেই দরখাস্ত জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হবে ৷ তিনি তদন্ত করে দেখে এদের সরকারি ঘর বরাদ্দ করতে পারেন ৷ তবে এখন আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা বিরোধীদের চক্রান্ত ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আমাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে ৷"