মালদা, 5 অগস্ট : গঙ্গা-ফুলহর কিংবা মহানন্দা নয়, অখ্যাত কালিন্দ্রীর রোষে এবার তলিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসন সব জানলেও ভাঙন রোধে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না । সেচ দফতর চোখ বুজে থাকলে চলতি বর্ষার মরশুমেই গ্রামের বেশ কিছু অংশ নদীতে তলিয়ে যাবে । যদিও বিষয়টি নজরে রয়েছে বলে দাবি করেছে সেচ দফতর ।
মানিকচক ব্লকের চৌকি মিরদাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনঘরিয়া গ্রাম । গ্রামের কাঞ্চনটোলায় রয়েছে প্রায় দেড়শো ঘর । কাঞ্চনটোলার পাশ দিয়ে বইছে কালিন্দ্রী । গ্রামবাসীদের বক্তব্য, 2019 থেকে নদীর পাড় ভাঙছে । গতবার সেচ দফতর অস্থায়ীভাবে পাড় বাঁচাতে বাঁশ আর বালির বস্তা নদীতে ফেলেছিল । সে সব স্রোতে ভেসে গিয়েছে । ফের ভাঙন শুরু হয়েছে । বৃহস্পতিবার থেকে তা আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে । এই মুহূর্তে বাড়িঘর থেকে মিটার দশেক দূর দিয়ে বইছে নদী । যে কোনও মুহূর্তে সবকিছু নদীতে তলিয়ে যেতে পারে । কিন্তু কোথায় যাবেন গ্রামবাসীরা, তাই এখনও ঘর আগলে বসে রয়েছেন গ্রামের সবাই ।
স্থানীয় বৃদ্ধা ভারতী মণ্ডল বলেন, "নদীর ধারেই ঘর । স্বামী সেই কবে চলে গিয়েছে । দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম । তারাও বিধবা হয়ে গিয়েছে । এখন আমার সঙ্গেই থাকে । রয়েছে তিন নাতনিও । কোনও ছেলে নেই । জমিজমা কিছু নেই । এদিকে নদীর পাড় কাটছে । কিন্তু এদের নিয়ে কোথায় যাব ? সরকার সাহায্য না করলে কীভাবে থাকব ?"
আরও পড়়ুন : Heavy Rain Forecast : আগামী তিন দিন ভারী বৃষ্টির সর্তকতা, নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা বঙ্গে
আরেক গ্রামবাসী আলাউদ্দিন শেখের বক্তব্য, "গঙ্গার ভাঙনে এর আগে দু'বার ভিটে বদল করেছি । দু'তিন বছর আগে এই গ্রামে ঘর দিয়েছি । এখানে গঙ্গা নেই । ভাঙনও ছিল না । কিন্তু গত বছর থেকে কালিন্দ্রীর এখানে পাড় ভাঙতে শুরু করেছে । সেবার বাঁশ-বালির বস্তা দিয়ে কোনওরকমে ভাঙন আটকানো গিয়েছিল । শুখা মরশুমে প্রশাসন ভাঙন আটকাতে কিছু করেনি ।" তিনি আরও জানিয়েছেন, অনেক টাকা খরচ করে ঘর বানিয়েছেন । এবারও যদি ঘর হারান, সে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন ।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা মহম্মদ আনোয়ার হোসেন বললেন, "2019 থেকে কালিন্দ্রীর ভাঙন শুরু হয়েছে । বৃহস্পতিবার থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে । গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য ভাঙন আটকাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন ।" তাঁর অভিযোগ প্রশাসনের কেউ এখনও পর্যন্ত এলাকায় আসেনি । এখন নদী থেকে তাঁর বাড়ি 5 থেকে 10 মিটারের মধ্যে । নদী থেকে 50 মিটারের মধ্যে রয়েছে প্রাইমারি স্কুল, কবরস্থান । তিনিও আতঙ্কিত ৷ বললেন, "যে ভাবে কালিন্দ্রীর ভাঙন চলছে, তাতে সবকিছুই এবার নদীগর্ভে চলে যাবে । প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, ভাঙন আটকাতে তাড়াতাড়ি কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হোক । তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারি ।"
জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত জানিয়েছেন, কালিন্দ্রীর ভাঙনের খবর তাঁরা পেয়েছেন । দফতরের আধিকারিকদের ওই গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । রিপোর্ট পেলে তাঁরা ভাঙন রোধের কাজ দ্রুত শুরু করবেন ।