মালদা, 5 জানুয়ারি: গত কয়েকদিন ধরে থার্মোমিটারের পারদ নেমেই চলেছে ৷ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে মালদা জেলায় (Malda District) ৷ সঙ্গে উত্তরের হিম মেশানো ঝোড়ো হাওয়া ! শহুরে মানুষ লেপ-কম্বলের ওম ছেড়ে বেরোতেই চাইছে না ! গ্রামাঞ্চলের ছবিটাও প্রায় এক ৷ তবে এর মধ্যেই গ্রামের এক শ্রেণির মানুষের কাজের তাড়া বেড়েছে ৷ অন্ধকার থাকতেই লেপ ছেড়ে উঠে পড়তে হচ্ছে তাঁদের ৷ মাটির পাত্র নিয়ে ছুটতে হচ্ছে এগ্রামে-সেগ্রামে ৷ এই আবহাওয়াই যে তাঁদের বছরের অনেকটা সময়ের ভাতের জোগান দেয় ! তাঁরা সময় মতো খেজুরের রস সংগ্রহ করে আনলে তবেই তো ঘরের মেয়ে-বউরা সেই রস থেকে গুড় (Date Molasses) বানাতে পারবেন ৷ দেরি হয়ে গেলে রসের মিষ্টত্ব নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তাই বাইরে যতই ঠান্ডা পড়ুক, এখন আলস্য দেখানোর সময় নেই শিউলিদের (খেজুর রস সংগ্রহকারীরা শিউলি নামেই পরিচিত) ৷
মালদা জেলায় মূলত বরিন্দ এলাকায় খেজুরের গুড় উৎপাদিত হয় ৷ বামনগোলা, হবিবপুর, পুরাতন মালদা আর গাজোল ব্লক নিয়ে এই বরিন্দ এলাকা ৷ এই এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেক নীচে ৷ তার নাগাল পাওয়াই দুষ্কর ৷ সেচ ব্যবস্থাও তেমন নেই ৷ নদী, খাঁড়ির সঙ্গে আকাশের জলের উপর নির্ভর করেই চলে চাষাবাদ ৷ কিন্তু এই ভূ-বৈচিত্রের জন্যই এই এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যায় ৷ এর জন্যই সম্প্রতি হবিবপুর এলাকায় খেজুর চাষ শুরু করেছেন এক কৃষক ৷ আরব থেকে কিছু খেজুর গাছের চারা এনে লাগিয়েছেন তিনি ৷ তবে সেই গাছে ফল ধরতে এখনও ঢের দেরি ৷
তাই এখনই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে খেজুর চাষ এই এলাকার অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা বলা যাবে না ৷ কিন্তু খেজুর গাছের আধিক্য বরিন্দ এলাকার শীতকালীন অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবেই কিছুটা প্রভাব ফেলে ৷ শীতের সময় বেশ কিছু পরিবার খেজুর গুড় উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে ৷ স্থানীয় বাজারেই তাদের তৈরি গুড় বিক্রি হয় ৷ তেমনই একটি গ্রাম হল রানিগঞ্জ দুর্গাপুর ৷ পুরাতন মালদার এই গ্রামে 20 থেকে 22টি ঘর খেজুরের গুড় উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৷ যদিও ইদানীং এই ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন এই পরিবারগুলির সদস্যরা ৷
আরও পড়ুন: শীতের দেখা নেই, খেজুরের রসে ভাঁটা পড়ায় সমস্যায় শিউলিরা
এই গ্রামেরই বধূ শক্তি মজুমদার বলেন, "20-22 বছর ধরে খেজুরের গুড় তৈরি করছি ৷ বিয়ের আগেও তৈরি করতাম ৷ গ্রামের অন্তত 20টি বাড়িতে এই গুড় তৈরি হয় ৷ বাড়ির পুরুষরা খেজুর রস সংগ্রহ করে আনেন ৷ সেই রস জাল দিয়ে আমরা মহিলারা গুড় তৈরি করি ৷ অনেক দূর থেকে রস আনতে হয় ৷ এখন তার খরচও বেড়েছে ৷ প্রতিটি গাছের জন্য 200 থেকে 300 টাকা দিতে হয় ৷ 1 কিলো গুড় তৈরি করতে প্রায় 20 লিটার রস প্রয়োজন হয় ৷ কিন্তু প্রতি কিলো গুড় আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র 250 থেকে 300 টাকা দরে ৷ পাইকাররা আমাদের বাড়ি থেকে গুড় কিনে নিয়ে যান ৷ যে হারে পরিশ্রম করতে হয়, সেই অনুপাতে আমরা গুড়ের দাম পাই না ৷ এভাবে কতদিন গুড় তৈরি করতে পারব, জানি না ৷"