ETV Bharat / state

দক্ষিণের মুরুগান, উত্তরের কার্তিক; "প্রাণহীন" ষড়ানন পুজো সীমান্তের গ্রামে - Malda

মেলা নেই, যাত্রাগানের আসর নেই । এবার বাইরে থাকা গ্রামবাসীদের অনেকে ঘরেও ফিরতে পারেনি । সব মিলিয়ে এবার মন ভালো নেই এই সীমান্ত এলাকার মানুষদের ।

Malda
মালদা
author img

By

Published : Nov 17, 2020, 9:47 PM IST

মালদা, 17 নভেম্বর : দক্ষিণের মুরুগান, উত্তরের কার্তিকেয় । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে কার্তিক মন্দির । বঙ্গেও রয়েছে কার্তিকের কয়েকটি মন্দির । ঠিক সেরকমই কার্তিকের মন্দির রয়েছে মালদার চাঁদপুর গ্রামে ৷ বছরের এইদিনে গ্রামের সকলেই মেতে থাকেন আনন্দে ৷ দুর্গাপুজো বা কালীপুজোয় অতটাও আড়ম্বর থাকে না যতটা কার্তিক পুজোয় থাকে ৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় এবারও হয়েছে পুজো । তবে, কোরোনা এবার যেন পুজোর প্রাণটাই কেড়ে নিয়েছে । অন্য বছরগুলির মতো উৎসবের মেজাজ নেই । মেলা নেই, যাত্রাগানের আসর নেই । এবার বাইরে থাকা গ্রামবাসীর অনেকে ঘরেও ফিরতে পারেনি । সব মিলিয়ে এবার মন ভালো নেই এই সীমান্ত এলাকার মানুষদের ।

পুরাণ মতে, দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধে জন্ম হয়েছে অনেক দেবদেবীর । দেব সেনাপতির জন্মও সেই সুবাদেই । তারকাসুর নামে এক অসুরকে বধ করার জন্য দেবকূলের প্রয়োজন ছিল সাতদিন বয়সি শিবপুত্রের । তেমনটাই বর পেয়েছিল তারকাসুর । কিন্তু, শিব তো নেশা করতেই ব্যস্ত । পুত্রের জন্ম হবে কীভাবে ? অগত্যা দেবকূল পার্বতীর শরণে । স্ত্রীর রূপে বশ হলেন স্বামী । তবে খানিকটা বিরক্ত হয়েই মিলিত হলেন পার্বতীর সঙ্গে । শিব ও পার্বতীর মিলনে সৃষ্ট তেজধারা অগ্নিদেবের মাধ্যমে আকাশগঙ্গায় সঞ্চারিত হয়ে এক পুত্রসন্তানের জন্ম নেয় । আকাশগঙ্গা ওই পুত্রকে শরবনে ত্যাগ করেন । তাঁকে প্রহরা দেয় আকাশের নক্ষত্রমণ্ডল । উজ্জ্বল নক্ষত্র কৃত্তিকার নামে নবজাতকের নাম হয় কার্তিকেয় । সেই নবজাতককে নিজের সন্তান বলে দাবি করে ছয় নক্ষত্র । তাঁরা কার্তিকেয়কে স্তন্য পান করাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন । ফলে, নবজাতকের ছ'টি মস্তকের উৎপত্তি । দেব কার্তিকেয় হলেন ষড়ানন ।

এই রাজ্যে কার্তিকের কয়েকটি মন্দিরের খোঁজ পাওয়া গেলেও কোথাও তাঁর ষড়ানন মূর্তির পুজো হয় বলে জানা নেই । কিন্তু, গত 62 বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চাঁদপুর গ্রামে সেই রূপেই পূজিত দেব সেনাপতি । 1958 সালে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র সিংহ, বিনয় মণ্ডল, গুরুপদ মণ্ডল ও সুফল ভূতির হাত ধরে গ্রামে তৈরি হয়েছিল কার্তিক মন্দির । শুরু হয়েছিল দেব সেনাপতির পুজো । পরবর্তীতে পুজোর জাঁকজমক কয়েক গুণ বেড়ে যায় । তবে এবার পুজোয় সেই জোয়ার নেই । পুজো কমিটির অন্যতম নাড়ুগোপাল মণ্ডল বলেন, "আমাদের এই এলাকায় দুর্গা কিংবা অন্য কোনও পুজো হয় না । এই এলাকার একটিই পুজো, কার্তিকপুজো । 1958 সালে এখানকার চারজন ব্যক্তি এই পুজোর সূচনা করেন । এখানে দেব সেনাপতি ষড়ানন । গ্রামবাসীরা সবাই এই পুজোয় মেতে ওঠে । 6 মাথা ও 12 হাতের কার্তিক সৃষ্টির প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে । পুরাণের সেই ইতিহাস অনুযায়ীই এখানে মূর্তি তৈরি হয় । এলাকার সন্তানহীন দম্পতিরা এখানে মানত করে ফল পান । মানত পূরণের পর তাঁরা এখানে কার্তিকের ছোটো মূর্তি পুজো করেন । গতবার প্রায় 50টি এমন মূর্তির পুজো হয়েছিল । এবার কোরোনার জন্য মাত্র 28টি মূর্তির পুজো হয়েছে । গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত প্রতি প্রহরে পুজো হয়েছে ।"

কার্তিক পুজোর আড়ম্বর দেখুন ভিডিয়োতে

পুজো কমিটির সভাপতি চন্দন মণ্ডল বলেন, "প্রতি বছর এই পুজোয় বিশাল আয়োজন করা হয় । গোটা জেলা থেকে মানুষ এখানে আসে । তবে, এবার কোরোনার জন্য অনুষ্ঠানে অনেক কাটছাঁট করতে হয়েছে । পুজোর বাজেট অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । এবার বাজেট মাত্র এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা । সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এই পুজোয় BSF ও পুলিশ আমাদের সবরকম সহযোগিতা করে । কোরোনা সংক্রমণ রুখতে এবার আমরা পুজো মণ্ডপে সবরকম ব্যবস্থা রেখেছি ।"

মালদা, 17 নভেম্বর : দক্ষিণের মুরুগান, উত্তরের কার্তিকেয় । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে কার্তিক মন্দির । বঙ্গেও রয়েছে কার্তিকের কয়েকটি মন্দির । ঠিক সেরকমই কার্তিকের মন্দির রয়েছে মালদার চাঁদপুর গ্রামে ৷ বছরের এইদিনে গ্রামের সকলেই মেতে থাকেন আনন্দে ৷ দুর্গাপুজো বা কালীপুজোয় অতটাও আড়ম্বর থাকে না যতটা কার্তিক পুজোয় থাকে ৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় এবারও হয়েছে পুজো । তবে, কোরোনা এবার যেন পুজোর প্রাণটাই কেড়ে নিয়েছে । অন্য বছরগুলির মতো উৎসবের মেজাজ নেই । মেলা নেই, যাত্রাগানের আসর নেই । এবার বাইরে থাকা গ্রামবাসীর অনেকে ঘরেও ফিরতে পারেনি । সব মিলিয়ে এবার মন ভালো নেই এই সীমান্ত এলাকার মানুষদের ।

পুরাণ মতে, দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধে জন্ম হয়েছে অনেক দেবদেবীর । দেব সেনাপতির জন্মও সেই সুবাদেই । তারকাসুর নামে এক অসুরকে বধ করার জন্য দেবকূলের প্রয়োজন ছিল সাতদিন বয়সি শিবপুত্রের । তেমনটাই বর পেয়েছিল তারকাসুর । কিন্তু, শিব তো নেশা করতেই ব্যস্ত । পুত্রের জন্ম হবে কীভাবে ? অগত্যা দেবকূল পার্বতীর শরণে । স্ত্রীর রূপে বশ হলেন স্বামী । তবে খানিকটা বিরক্ত হয়েই মিলিত হলেন পার্বতীর সঙ্গে । শিব ও পার্বতীর মিলনে সৃষ্ট তেজধারা অগ্নিদেবের মাধ্যমে আকাশগঙ্গায় সঞ্চারিত হয়ে এক পুত্রসন্তানের জন্ম নেয় । আকাশগঙ্গা ওই পুত্রকে শরবনে ত্যাগ করেন । তাঁকে প্রহরা দেয় আকাশের নক্ষত্রমণ্ডল । উজ্জ্বল নক্ষত্র কৃত্তিকার নামে নবজাতকের নাম হয় কার্তিকেয় । সেই নবজাতককে নিজের সন্তান বলে দাবি করে ছয় নক্ষত্র । তাঁরা কার্তিকেয়কে স্তন্য পান করাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন । ফলে, নবজাতকের ছ'টি মস্তকের উৎপত্তি । দেব কার্তিকেয় হলেন ষড়ানন ।

এই রাজ্যে কার্তিকের কয়েকটি মন্দিরের খোঁজ পাওয়া গেলেও কোথাও তাঁর ষড়ানন মূর্তির পুজো হয় বলে জানা নেই । কিন্তু, গত 62 বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চাঁদপুর গ্রামে সেই রূপেই পূজিত দেব সেনাপতি । 1958 সালে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র সিংহ, বিনয় মণ্ডল, গুরুপদ মণ্ডল ও সুফল ভূতির হাত ধরে গ্রামে তৈরি হয়েছিল কার্তিক মন্দির । শুরু হয়েছিল দেব সেনাপতির পুজো । পরবর্তীতে পুজোর জাঁকজমক কয়েক গুণ বেড়ে যায় । তবে এবার পুজোয় সেই জোয়ার নেই । পুজো কমিটির অন্যতম নাড়ুগোপাল মণ্ডল বলেন, "আমাদের এই এলাকায় দুর্গা কিংবা অন্য কোনও পুজো হয় না । এই এলাকার একটিই পুজো, কার্তিকপুজো । 1958 সালে এখানকার চারজন ব্যক্তি এই পুজোর সূচনা করেন । এখানে দেব সেনাপতি ষড়ানন । গ্রামবাসীরা সবাই এই পুজোয় মেতে ওঠে । 6 মাথা ও 12 হাতের কার্তিক সৃষ্টির প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে । পুরাণের সেই ইতিহাস অনুযায়ীই এখানে মূর্তি তৈরি হয় । এলাকার সন্তানহীন দম্পতিরা এখানে মানত করে ফল পান । মানত পূরণের পর তাঁরা এখানে কার্তিকের ছোটো মূর্তি পুজো করেন । গতবার প্রায় 50টি এমন মূর্তির পুজো হয়েছিল । এবার কোরোনার জন্য মাত্র 28টি মূর্তির পুজো হয়েছে । গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত প্রতি প্রহরে পুজো হয়েছে ।"

কার্তিক পুজোর আড়ম্বর দেখুন ভিডিয়োতে

পুজো কমিটির সভাপতি চন্দন মণ্ডল বলেন, "প্রতি বছর এই পুজোয় বিশাল আয়োজন করা হয় । গোটা জেলা থেকে মানুষ এখানে আসে । তবে, এবার কোরোনার জন্য অনুষ্ঠানে অনেক কাটছাঁট করতে হয়েছে । পুজোর বাজেট অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । এবার বাজেট মাত্র এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা । সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এই পুজোয় BSF ও পুলিশ আমাদের সবরকম সহযোগিতা করে । কোরোনা সংক্রমণ রুখতে এবার আমরা পুজো মণ্ডপে সবরকম ব্যবস্থা রেখেছি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.