মালদা, 4 মে: চল্লিশে চালশে নয়, বরং মন আরও বেশি অনমনীয় ৷ কোথাও বিপদে পড়লে ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া নয়, বরং বিপদের মুখোমুখি মোকাবিলা করা ৷ স্কুলের বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরও বিপদ থেকে বাঁচার শিক্ষা দেওয়া ৷ মাথায় এ সব অনেক চিন্তাভাবনা নিয়েই চল্লিশে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন মালদা শহরের বাসিন্দা অনামিকা টুডু ৷ সম্প্রতি উত্তর 24 পরগনার ইছাপুরে একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদকও পেয়েছেন ৷ পেশায় শিক্ষিকা এই বধূ বর্তমান পরিস্থিতিতে হতে পারেন অনেকের অনুপ্রেরণা ৷
বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের সঙ্গে এই রাজ্যেও অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে ৷ সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জ এবং কালিয়াচকে তার প্রমাণও মিলেছে ৷ মনস্তাত্বিকরা বলছেন, এ সব সামাজিক অবক্ষয়ের নিদর্শন ৷ অত্যাধিক মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট প্রীতিই কিশোর-কিশোরীদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে চলেছে ৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বাঁচার উপায় কী ? এ নিয়ে এখনও সেভাবে কেউ কিছু জানাননি ৷
ঠিক এই জায়গা থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন অনামিকা টুডু ৷ মার্শাল আর্টের প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে ৷ সেই ভালোবাসার টানেই বছর পাঁচেক আগে দুই ছেলেকে এই শহরের নামী তাইকোন্ডো প্রশিক্ষক রামাশিস দাসের কাছে নিয়ে যান ৷ গত বছর নভেম্বর থেকে তিনি নিজেও সেই একই শিক্ষকের শিষ্যা ৷ প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফাঁকেই ইটিভি ভারতকে জানালেন নিজের চিন্তাভাবনার কথা ৷
অনামিকা বলেন, “নিজের ফিটনেস ধরে রাখতেই এই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি ৷ পাঁচ বছর ধরে দুই ছেলে তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ৷ রামাশিসবাবু যেভাবে প্রশিক্ষণ দেন, সেটা ভীষণ ভালো লাগে ৷ তাঁর কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছি ৷ এটা ঠিক, সাম্প্রতিক নানা ঘটনাবলী প্রমাণ করছে, আমরা একটা সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলেছি ৷"
তাঁর কথায়, সংবাদমাধ্যমে সবসময় বাচ্চাদের সঙ্গে নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে ৷ মার্শাল আর্ট এ সব দুর্ঘটনা বন্ধ করার একটা ভালো মাধ্যম হতে পারে ৷ সরকার যদি স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ শুরু করে, তবে এমন ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে ৷ স্কুল-কলেজে খেলাধুলো হয় ঠিকই, কিন্তু মার্শাল আর্ট কিংবা নিজেকে রক্ষা করার কোনও কৌশল শেখানো হয় না ৷ অনামিকা গাজোলের হাতিমারি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন ৷ খেলাধুলোয় তাঁর স্কুলের সুনাম গোটা রাজ্যে ৷ চলতি বছর সুব্রত কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতাও তাঁর স্কুল জিতেছে বলে জানালেন তিনি ৷ কিন্তু তাঁদের স্কুলে বাচ্চাদের আত্মরক্ষার জন্য কিছু শেখানো হয় না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তিনি ৷
অনামিকা আরও বলেন, “গত নভেম্বর থেকে আমি তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছি ৷ এখনও অনেক পথ পেরোতে হবে ৷ যেদিন আমার প্রশিক্ষক বলবেন, আমিও কারওকে প্রশিক্ষণ দিতে পারি, সে দিন থেকে আমি আমার স্কুলের বাচ্চাদেরও মার্শাল আর্টের এই শাখায় আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেব ৷ সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মে সিনিয়র ফ্রেশার বিভাগে সোনা জিতেছি ৷ এই পুরস্কার আমার উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ আগামীতে আমি আরও বড় জায়গায় যেতে চাই ৷ সেটাই চেষ্টা করব ৷”
অনামিকার প্রশিক্ষক, পেশায় মালদা মেডিক্যালের কর্মী রামাশিস দাস বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির মা-বোনদেরও আত্মরক্ষার এই কৌশল শেখার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন ৷ শিক্ষিকা অনামিকা টুডু সেই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন ৷ কঠোর অনুশীলন করে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদকও পান তিনি ৷ রামাশিসের কথায়, "এটা ঠিক, তাঁর বয়স এখন চল্লিশ ৷ স্বাভাবিক নিয়মে এই বয়সে শরীরের নমনীয়তা কমে যায় ৷ তবে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন ব্যায়ামে সেই নমনীয়তা আবারও পুরনো জায়গায় নিয়ে আসা যায় ৷ অনামিকাই তার বড় উদাহরণ ৷ আমি চাই, মার্শাল আর্ট শিখে তিনি তাঁর স্কুলের ছেলেমেয়েদেরকেও আত্মরক্ষার কৌশল শেখান ৷ তাতে আমাদের সমাজটাই নিরাপদে থাকবে ৷”
আরও পড়ুন: জাতীয় মার্শাল আর্টে সোনা ও রূপো, বাংলার মুখ উজ্জ্বল সপ্তমের পড়ুয়ার