ETV Bharat / state

Teacher as Saviour: খুদেদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে 40 বছর বয়সে মার্শাল আর্ট শিখছেন আদিবাসী শিক্ষিকা

শিশুদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর লক্ষ্য নিয়ে 40 বছর বয়সে মার্শাল আর্ট শিখছেন গাজোলের হাতিমারি হাইস্কুলের আদিবাসী শিক্ষিকা অনামিকা টুডু ৷

Teacher as Saviour
40 বছর বয়সে মার্শাল আর্ট শিখছেন আদিবাসী শিক্ষিকা
author img

By

Published : May 4, 2023, 10:48 PM IST

40 বছর বয়সে মার্শাল আর্ট শিখছেন আদিবাসী শিক্ষিকা

মালদা, 4 মে: চল্লিশে চালশে নয়, বরং মন আরও বেশি অনমনীয় ৷ কোথাও বিপদে পড়লে ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া নয়, বরং বিপদের মুখোমুখি মোকাবিলা করা ৷ স্কুলের বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরও বিপদ থেকে বাঁচার শিক্ষা দেওয়া ৷ মাথায় এ সব অনেক চিন্তাভাবনা নিয়েই চল্লিশে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন মালদা শহরের বাসিন্দা অনামিকা টুডু ৷ সম্প্রতি উত্তর 24 পরগনার ইছাপুরে একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদকও পেয়েছেন ৷ পেশায় শিক্ষিকা এই বধূ বর্তমান পরিস্থিতিতে হতে পারেন অনেকের অনুপ্রেরণা ৷

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের সঙ্গে এই রাজ্যেও অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে ৷ সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জ এবং কালিয়াচকে তার প্রমাণও মিলেছে ৷ মনস্তাত্বিকরা বলছেন, এ সব সামাজিক অবক্ষয়ের নিদর্শন ৷ অত্যাধিক মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট প্রীতিই কিশোর-কিশোরীদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে চলেছে ৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বাঁচার উপায় কী ? এ নিয়ে এখনও সেভাবে কেউ কিছু জানাননি ৷

ঠিক এই জায়গা থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন অনামিকা টুডু ৷ মার্শাল আর্টের প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে ৷ সেই ভালোবাসার টানেই বছর পাঁচেক আগে দুই ছেলেকে এই শহরের নামী তাইকোন্ডো প্রশিক্ষক রামাশিস দাসের কাছে নিয়ে যান ৷ গত বছর নভেম্বর থেকে তিনি নিজেও সেই একই শিক্ষকের শিষ্যা ৷ প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফাঁকেই ইটিভি ভারতকে জানালেন নিজের চিন্তাভাবনার কথা ৷

অনামিকা বলেন, “নিজের ফিটনেস ধরে রাখতেই এই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি ৷ পাঁচ বছর ধরে দুই ছেলে তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ৷ রামাশিসবাবু যেভাবে প্রশিক্ষণ দেন, সেটা ভীষণ ভালো লাগে ৷ তাঁর কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছি ৷ এটা ঠিক, সাম্প্রতিক নানা ঘটনাবলী প্রমাণ করছে, আমরা একটা সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলেছি ৷"

তাঁর কথায়, সংবাদমাধ্যমে সবসময় বাচ্চাদের সঙ্গে নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে ৷ মার্শাল আর্ট এ সব দুর্ঘটনা বন্ধ করার একটা ভালো মাধ্যম হতে পারে ৷ সরকার যদি স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ শুরু করে, তবে এমন ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে ৷ স্কুল-কলেজে খেলাধুলো হয় ঠিকই, কিন্তু মার্শাল আর্ট কিংবা নিজেকে রক্ষা করার কোনও কৌশল শেখানো হয় না ৷ অনামিকা গাজোলের হাতিমারি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন ৷ খেলাধুলোয় তাঁর স্কুলের সুনাম গোটা রাজ্যে ৷ চলতি বছর সুব্রত কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতাও তাঁর স্কুল জিতেছে বলে জানালেন তিনি ৷ কিন্তু তাঁদের স্কুলে বাচ্চাদের আত্মরক্ষার জন্য কিছু শেখানো হয় না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তিনি ৷

অনামিকা আরও বলেন, “গত নভেম্বর থেকে আমি তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছি ৷ এখনও অনেক পথ পেরোতে হবে ৷ যেদিন আমার প্রশিক্ষক বলবেন, আমিও কারওকে প্রশিক্ষণ দিতে পারি, সে দিন থেকে আমি আমার স্কুলের বাচ্চাদেরও মার্শাল আর্টের এই শাখায় আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেব ৷ সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মে সিনিয়র ফ্রেশার বিভাগে সোনা জিতেছি ৷ এই পুরস্কার আমার উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ আগামীতে আমি আরও বড় জায়গায় যেতে চাই ৷ সেটাই চেষ্টা করব ৷”

অনামিকার প্রশিক্ষক, পেশায় মালদা মেডিক্যালের কর্মী রামাশিস দাস বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির মা-বোনদেরও আত্মরক্ষার এই কৌশল শেখার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন ৷ শিক্ষিকা অনামিকা টুডু সেই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন ৷ কঠোর অনুশীলন করে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদকও পান তিনি ৷ রামাশিসের কথায়, "এটা ঠিক, তাঁর বয়স এখন চল্লিশ ৷ স্বাভাবিক নিয়মে এই বয়সে শরীরের নমনীয়তা কমে যায় ৷ তবে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন ব্যায়ামে সেই নমনীয়তা আবারও পুরনো জায়গায় নিয়ে আসা যায় ৷ অনামিকাই তার বড় উদাহরণ ৷ আমি চাই, মার্শাল আর্ট শিখে তিনি তাঁর স্কুলের ছেলেমেয়েদেরকেও আত্মরক্ষার কৌশল শেখান ৷ তাতে আমাদের সমাজটাই নিরাপদে থাকবে ৷”

আরও পড়ুন: জাতীয় মার্শাল আর্টে সোনা ও রূপো, বাংলার মুখ উজ্জ্বল সপ্তমের পড়ুয়ার

40 বছর বয়সে মার্শাল আর্ট শিখছেন আদিবাসী শিক্ষিকা

মালদা, 4 মে: চল্লিশে চালশে নয়, বরং মন আরও বেশি অনমনীয় ৷ কোথাও বিপদে পড়লে ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া নয়, বরং বিপদের মুখোমুখি মোকাবিলা করা ৷ স্কুলের বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরও বিপদ থেকে বাঁচার শিক্ষা দেওয়া ৷ মাথায় এ সব অনেক চিন্তাভাবনা নিয়েই চল্লিশে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন মালদা শহরের বাসিন্দা অনামিকা টুডু ৷ সম্প্রতি উত্তর 24 পরগনার ইছাপুরে একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদকও পেয়েছেন ৷ পেশায় শিক্ষিকা এই বধূ বর্তমান পরিস্থিতিতে হতে পারেন অনেকের অনুপ্রেরণা ৷

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের সঙ্গে এই রাজ্যেও অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে ৷ সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জ এবং কালিয়াচকে তার প্রমাণও মিলেছে ৷ মনস্তাত্বিকরা বলছেন, এ সব সামাজিক অবক্ষয়ের নিদর্শন ৷ অত্যাধিক মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট প্রীতিই কিশোর-কিশোরীদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে চলেছে ৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বাঁচার উপায় কী ? এ নিয়ে এখনও সেভাবে কেউ কিছু জানাননি ৷

ঠিক এই জায়গা থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন অনামিকা টুডু ৷ মার্শাল আর্টের প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে ৷ সেই ভালোবাসার টানেই বছর পাঁচেক আগে দুই ছেলেকে এই শহরের নামী তাইকোন্ডো প্রশিক্ষক রামাশিস দাসের কাছে নিয়ে যান ৷ গত বছর নভেম্বর থেকে তিনি নিজেও সেই একই শিক্ষকের শিষ্যা ৷ প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফাঁকেই ইটিভি ভারতকে জানালেন নিজের চিন্তাভাবনার কথা ৷

অনামিকা বলেন, “নিজের ফিটনেস ধরে রাখতেই এই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি ৷ পাঁচ বছর ধরে দুই ছেলে তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ৷ রামাশিসবাবু যেভাবে প্রশিক্ষণ দেন, সেটা ভীষণ ভালো লাগে ৷ তাঁর কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছি ৷ এটা ঠিক, সাম্প্রতিক নানা ঘটনাবলী প্রমাণ করছে, আমরা একটা সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলেছি ৷"

তাঁর কথায়, সংবাদমাধ্যমে সবসময় বাচ্চাদের সঙ্গে নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে ৷ মার্শাল আর্ট এ সব দুর্ঘটনা বন্ধ করার একটা ভালো মাধ্যম হতে পারে ৷ সরকার যদি স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ শুরু করে, তবে এমন ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে ৷ স্কুল-কলেজে খেলাধুলো হয় ঠিকই, কিন্তু মার্শাল আর্ট কিংবা নিজেকে রক্ষা করার কোনও কৌশল শেখানো হয় না ৷ অনামিকা গাজোলের হাতিমারি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন ৷ খেলাধুলোয় তাঁর স্কুলের সুনাম গোটা রাজ্যে ৷ চলতি বছর সুব্রত কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতাও তাঁর স্কুল জিতেছে বলে জানালেন তিনি ৷ কিন্তু তাঁদের স্কুলে বাচ্চাদের আত্মরক্ষার জন্য কিছু শেখানো হয় না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তিনি ৷

অনামিকা আরও বলেন, “গত নভেম্বর থেকে আমি তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছি ৷ এখনও অনেক পথ পেরোতে হবে ৷ যেদিন আমার প্রশিক্ষক বলবেন, আমিও কারওকে প্রশিক্ষণ দিতে পারি, সে দিন থেকে আমি আমার স্কুলের বাচ্চাদেরও মার্শাল আর্টের এই শাখায় আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেব ৷ সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মে সিনিয়র ফ্রেশার বিভাগে সোনা জিতেছি ৷ এই পুরস্কার আমার উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ আগামীতে আমি আরও বড় জায়গায় যেতে চাই ৷ সেটাই চেষ্টা করব ৷”

অনামিকার প্রশিক্ষক, পেশায় মালদা মেডিক্যালের কর্মী রামাশিস দাস বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির মা-বোনদেরও আত্মরক্ষার এই কৌশল শেখার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন ৷ শিক্ষিকা অনামিকা টুডু সেই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন ৷ কঠোর অনুশীলন করে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদকও পান তিনি ৷ রামাশিসের কথায়, "এটা ঠিক, তাঁর বয়স এখন চল্লিশ ৷ স্বাভাবিক নিয়মে এই বয়সে শরীরের নমনীয়তা কমে যায় ৷ তবে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন ব্যায়ামে সেই নমনীয়তা আবারও পুরনো জায়গায় নিয়ে আসা যায় ৷ অনামিকাই তার বড় উদাহরণ ৷ আমি চাই, মার্শাল আর্ট শিখে তিনি তাঁর স্কুলের ছেলেমেয়েদেরকেও আত্মরক্ষার কৌশল শেখান ৷ তাতে আমাদের সমাজটাই নিরাপদে থাকবে ৷”

আরও পড়ুন: জাতীয় মার্শাল আর্টে সোনা ও রূপো, বাংলার মুখ উজ্জ্বল সপ্তমের পড়ুয়ার

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.