মালদা, 12 জুলাই : কোরোনা আবহে নতুন ধাক্কা তৃণমূল শিবিরে ৷ বেশ কয়েকটি কাজের টেন্ডারের নথিতে BDO অফিসের সিল ও স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ৷ স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করতে পঞ্চায়েত দপ্তরে যান খোদ BDO ৷ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে ৷ BDO চিঠি দিয়ে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছেন সেকথা ৷ ঘটনাটি মালদার বামনগোলা ব্লকের প্রত্যন্ত মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের ৷ গোটা ঘটনায় চূড়ান্ত অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল ৷ যে সময় খোদ তৃণমূলনেত্রী দল থেকে দুর্নীতি দূর করতে নেতৃত্বকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময় এই ঘটনা শাসকদলের বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর তত্ত্বকেই যেন সামনে নিয়ে এসেছে ৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরমহলেও ৷ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের পরেও কেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হবে না, কেন প্রশাসন প্রধানের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা ৷ যদিও গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনিক কর্তারা ।
অভিযুক্ত প্রধানের নাম রঞ্জিতা হালদার মজুমদার ৷ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত 16 জুন রঞ্জিতাদেবী পাঁচটি কাজের জন্য পৃথক পৃথক টেন্ডার ডাকেন ৷ এর মধ্যে রয়েছে পানীয় জল, রাস্তা, গার্ডওয়াল, একটি নর্দমা ও পঞ্চায়েত ভবন সংস্কারের কাজ ৷ সব মিলিয়ে প্রায় 50 লাখ টাকার কাজ ৷ আটটি পানীয় জল প্রকল্পের প্রতিটির জন্য বরাদ্দ করা হয় তিন লাখ 47 হাজার টাকা ৷ চারটি রাস্তার প্রতিটির জন্য তিন লাখ 42 হাজার টাকা, চারটি গার্ডওয়ালের প্রতিটির জন্য আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা, নর্দমার জন্য তিন লাখ 44 হাজার টাকা ও পঞ্চায়েত ভবন সংস্কারের জন্য দুই লাখ 47 হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয় ৷ প্রতিটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এরই মধ্যে গত বুধবার এলাকার কিছু মানুষ BDO-কে লিখিত অভিযোগে জানায়, ব্লক প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে পঞ্চায়েত প্রধান এই কাজ শুরু করেছেন ৷ নিজের পকেটে টাকা ঢোকানোর জন্য এই বেআইনি কাজ করছেন তিনি ৷
অভিযোগ পেয়েই গত পরশু পঞ্চায়েত দপ্তরে তদন্তে যান খোদ BDO সঞ্জিত মণ্ডল৷ দপ্তরে সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখে তিনি অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান ৷ গতকাল তিনি সেকথা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানকে ৷ চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত দপ্তরে থাকা এসব টেন্ডারের কপিতে BDO অফিসের যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে তা জাল ৷ তাছাড়া পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী যে কোনও টেন্ডার সংক্রান্ত কাগজপত্রের কপি পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা ব্লক অফিসে পাঠানোর নিয়ম ৷ এক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি ৷ গোটা টেন্ডার প্রক্রিয়াটিই অবৈধ ৷ BDO চিঠির প্রতিলিপি জেলাশাসক সহ অন্যান্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছেন ৷
রঞ্জিতাদেবী অবশ্য দাবি করেছেন, “আমি আইন মেনেই সব কাজ করেছি ৷ কোথাও কোনও বেআইনি কাজ হয়নি ৷ আমার কাছে সমস্ত তথ্যপ্রমাণও রয়েছে ৷ প্রশাসন দেখতে চাইলে সেসব পেশ করব ৷” তবে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল শিবির৷ জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, “মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ কানে এসেছে ৷ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে ৷ আমরাও দলীয়স্তরে তদন্ত শুরু করেছি৷ তদন্তের রিপোর্ট রাজ্যে পাঠানো হবে ৷”
এনিয়ে BDO সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে চাননি ৷ এমনকী সংবাদমাধ্যমের ফোনও ধরেননি তিনি৷ তবে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অর্ণব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বিষয়টি আমার ঠিক জানা নেই ৷ কিছু একটা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি ৷ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি৷ দুর্নীতি হয়ে থাকলে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ৷”
এদিকে গোটা ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন এলাকার BJP সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, “এভাবেই তৃণমূল দলটা চলে ৷ গোটা রাজ্যেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে ৷ মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতে যা ঘটেছে, তা দুর্নীতির পাহাড়ের একটা পাথর মাত্র ৷ BDO নিজে তদন্তে গিয়ে এই দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন৷ অথচ অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে এখনও পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল না ৷ কেন? কেউ জানে না ৷ আমরা চাই, প্রশাসন এক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক ৷ ওই পঞ্চায়েত প্রধানকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক ৷”