মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : এক বৃদ্ধাকে ভুল বুঝিয়ে টিপছাপ নিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হল ঘর তৈরির জন্য সরকারের পাঠানো প্রথম কিস্তির টাকা (TMC leader allegedly dupes old woman's money)। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা । টাকা ফেরতের দাবিতে পুলিশ ও বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন বৃদ্ধা । ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মল্লিকপাড়া গ্রামে (Malda news)। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ঘটনার দায় অস্বীকার করেছেন ৷ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও । এ নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোরও শুরু হয়েছে (Allegation against TMC)।
মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফতেমা বেওয়া । বয়স ষাট পেরিয়েছে । বছর দশেক আগে স্বামী মারা গিয়েছেন । এখন বাড়িতে একাই থাকেন । গ্রামবাসীদের সহায়তায় কোনও রকমে দিন কেটে যায় । বাড়ি বলতে বাঁশের বেড়া আর টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ঘর । সেখানেই তাঁর বাস । সরকারি একটা ঘর পেতে অনেকবার বিভিন্ন জায়গায় হত্যে দিয়েছেন । শেষ পর্যন্ত শিকে ছেঁড়ে ফতেমা বেওয়ার । তাঁর নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ হয় । সম্প্রতি ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির 60 হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টেও ঢোকে । অভিযোগ, সেই খবর পেয়েই টাকাটার প্রতি নজর পড়ে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা শাজাহান আলির । নিজের স্ত্রীকে নিয়ে তিনি নাকি ফতেমাকে ব্যাংকে নিয়ে যান । সেখানে ভুল বুঝিয়ে বৃদ্ধার টিপ ছাপ নিয়ে তিনি কিস্তির পুরো টাকাই তুলে নেন বলে অভিযোগ । শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এলে সেটাও তাঁকে দিতে হবে বলে বৃদ্ধাকে নাকি শাসান তিনি ।
আরও পড়ুন: Malda medical college : সবার অলক্ষ্যে হাসপাতালের ছ'তলায় আট বছরের শিশু ! রেলিং বেয়ে নামতে গিয়ে মৃত্যু
ফতেমার বক্তব্য, “আমার অ্যাকাউন্টে ঘরের টাকা ঢুকেছিল । সেই টাকা শাজাহান আর তাঁর বউ রীণা তুলে নিয়েছে । ওরা আমাকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিল । আমার কাছ থেকে টিপ ছাপ নিয়ে নেয় ওরা । ছ’দিন আগে এই ঘটনা ঘটেছে । ওরা 60 হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছে । আমি ওই টাকা ফেরত চাই । বিডিও অফিসে সব জানিয়েছি ।”
যদিও শাজাহান আলি বলেছেন এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না । তাঁর দাবি, “সব মিথ্যে কথা । বিরোধীদের কাজ । বিরোধী মানে কংগ্রেস । এখন আমাদের পঞ্চায়েত হয়ে গিয়েছে । আমি বিষয়টি দেখব । অভিযোগ হতেই পারে । বিরোধীদের কাজই অভিযোগ করা । এ সব আমার জানা নেই ।”
এই শাজাহান আলি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন । যদিও হেরে যান তিনি । গোটা ঘটনা নিয়ে বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সভাপতি সুমিত সরকার বলেন, “আমরা আগে অনলাইনে প্রতারণার খবর শুনেছি । এখন শুনছি ঘরে গিয়ে মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে । তৃণমূলের আমলে সবই সম্ভব । এখন দুয়ারে লুঠ চলছে ।”
তবে দলীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সামিউল ইসলাম । তিনি বলেন, “দল নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলে । এই দলে কেউ যদি কোনও ভুল কাজ করে, তবে অবশ্যই তার শাস্তি হবে । বিজেপি আমাদের বিরুদ্ধে সবসময় দুর্নীতির কথা বলে । কিন্তু আজ দুয়ারে সরকার, লক্ষ্মীর ভান্ডার রয়েছে বলে মানুষ শান্তিতে রয়েছে ।”
এনিয়ে চাঁচলের মহকুমাশাসক কল্লোল রায় জানান, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে । অভিযোগও পেয়েছি । গোটা ঘটনা বিডিওকে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে । তদন্ত সাপেক্ষে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন ।”