মালদা, 30 সেপ্টেম্বর: জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি ৷ সামলেছেন ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদও ৷ এমনকী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার ছিল তৃণমূল নেতা স্বপন মিশ্রের কাঁধে ৷ সেই নেতা এখন শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
মালদা শহরের বাসিন্দা স্বপন মিশ্রের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে ৷ এখন তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ তাঁর আর্থিক জালিয়াতির একাধিক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে ৷ একটি ভিডিয়ো ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, টাকা ফেরতের দাবিতে তাঁর কলার ধরে শাসাচ্ছেন এক যুবক ৷ আরেকটি ক্লিপে তিনি রেশনের ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছেন ৷ যদিও এই ভিডিয়ো ক্লিপগুলির সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷ তবে এনিয়ে ওই নেতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতারিত মহিলা ৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ৷
স্বপন মিশ্র দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল করেন ৷ ঘাসফুলের জমানায় 2014 সালে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হন ৷ তখনও তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ উঠেছিল ৷ তিনি ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ পরবর্তী সময়ে তিনি মালদা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষও হন ৷
আরও পড়ুন: আলিপুরদুয়ারে পুলিশ সুপারের দফতরে বসেই আর্থিক প্রতারণা! গ্রেফতার কনস্টেবল
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, স্বপনবাবুর কলার ধরে শাসাচ্ছেন এক যুবক ৷ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত চাইছেন ওই যুবক ৷ তাঁর সামনে কার্যত ভিক্ষা চাওয়ার মতোই সময় চাইছেন শাসকদলের এই নেতা ৷ আরেকটি ভিডিয়ো ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, স্বপনবাবু ও এক মহিলা একটি সোফায় বসে রয়েছেন ৷ তাঁদের হাতে 500 টাকার নোটের একাধিক বান্ডিল ৷ টাকা গুনে নেওয়ার পর স্বপনবাবু বলছেন, পরশু তিনি ফোন করবেন ৷ কাজ হওয়া নিয়ে তিনি 100 শতাংশ নিশ্চয়তাও দিচ্ছেন ৷
ওই মহিলার নাম অনিতা সরকার ৷ তাঁর স্বামী প্রাক্তন শিক্ষক ৷ বাড়ি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলায় ৷ তিনি বলেন, "আমার ছেলের নামে রেশনের ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার জন্য এক বছর আগে আমি স্বপন মিশ্রকে আট লাখ টাকা দিয়েছি ৷ এর মধ্যে সাত লাখ টাকা আমার বাড়িতে দিয়েছি ৷ বাড়ি এক লক্ষ তাঁর বাড়িতেই তাঁকে দিই ৷ কিন্তু তিনি সেই ডিলারশিপ করে দেননি ৷ এখন বারবার টাকা ফেরত চাইলেও তিনি তা দিচ্ছেন না ৷ বলছেন, তাঁর কাছে টাকা নেই ৷ তাই আমি থানা ও পুলিশ সুপারের কাছে তাঁর নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ৷"
মালদা জেলা আদালতের আইনজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, "অনিতা সরকার আমার কাছে এসেছিলেন ৷ ছেলেকে রেশনের ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁর কাছ থেকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি স্বপন মিশ্র আট লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন ৷ স্বপনবাবু হাইস্কুলের শিক্ষক ৷ তিনি অনিতাদেবীর ছেলেকে রেশনের ডিলারশিপ পাইয়ে দিতে পারেননি ৷ এখন অনিতাদেবী টাকা ফেরত চাইলে তিনি সব ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন ৷ অনিতাদেবীকে আমি থানা ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে বলেছি ৷ স্বপন মিশ্রের বিরুদ্ধে 156(3) ধারায় মামলা রুজু করতে আমরা সমস্ত নথিপত্র সংগ্রহ করছি ৷"
এনিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা দুলাল সরকারের বক্তব্য, "এই ব্যক্তি একসময় কংগ্রেসের বড় নেতা ছিলেন ৷ তখন থেকেই তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন ৷ পরে হঠাৎ তৃণমূলে ঢুকে পড়েন ৷ বড় দায়িত্বও পান ৷ এখন প্রকাশ পাচ্ছে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তিনি প্রচুর টাকাপয়সা হরফ করেছেন ৷ সেই টাকায় তিনি নিজের সম্পত্তি বাড়িয়েছেন ৷ এসব মানুষের পাশে দল নেই ৷ এবার তাঁকে দলের টিকিটও দেওয়া হয়নি ৷ তাঁর বিরুদ্ধে যদি কারও কাছে প্রমাণ থাকে, তবে তাঁরা আইনের আশ্রয় নিন ৷ দল কখনও দোষীদের পাশে থাকবে না ৷ এসব মানুষের উচিত শিক্ষা হওয়া উচিত ৷"
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা, অমৃতি হাইস্কুলের শিক্ষক স্বপন মিশ্রের বাবুর কোনও সন্ধান মেলেনি ৷ তাঁর ফোনও সুইচড অফ হয়ে রয়েছে ৷ এখন পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করে, সেটাই দেখার ৷ পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন ৷ স্বপন মিশ্রের খোঁজ চলছে ৷
আরও পড়ুন: 15 কোটি ঋণের টোপ দিয়ে দেড় কোটির প্রতারণা ! দিল্লি থেকে গ্রেফতার চক্রের 'পান্ডা'