মালদা, 4 ডিসেম্বর: পঞ্চায়েত ভোট মিটতে না-মিটতেই ফের বেআব্রু হয়ে পড়ল তৃণমূলের কোন্দল ৷ দলের নিয়ম না-মেনেই দলীয় প্যাডে অঞ্চল চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করছেন অঞ্চল সভাপতি ৷ সভাপতির দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করার জন্যই তিনি চেয়ারম্যান-সহ আরও একজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন ৷ এ নিয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বহিষ্কৃতরা ৷ এই কোন্দলের জন্যই পঞ্চায়েত নির্বাচনে হরিশ্চন্দ্রপুরে মুখ পুড়েছে শাসকদলের ৷ লোকসভার আগে কোন্দল ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় অশনি সংকেত পাচ্ছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ৷ গোটা ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তাঁরা ৷
ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের ভালুকা অঞ্চলের ৷ সম্প্রতি ওই অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ সাহা দলীয় প্যাডে অঞ্চল চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক এবং প্রাক্তন ব্লক সম্পাদক বিবেকচন্দ্র সাহাকে বহিষ্কারের ঘোষণা করেছেন ৷ সেই নির্দেশের চিঠি ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ৷ যদিও সেই চিঠির তার সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷ ওই নির্দেশিকায় সাফ লেখা রয়েছে, দলবিরোধী কাজের জন্য মোজাম্মেল ও বিবেককে বহিষ্কার করছেন ধীরেন ৷
ধীরেনের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটে এই দু'জন তৃণমূল করেননি ৷ অন্য দলের হয়ে কাজ করেছেন ৷ এ নিয়ে তাঁরা অঞ্চল কমিটির বৈঠক করেন ৷ সেখানে এই দু'জনের বহিষ্কারের বিষয়ে রেজুলেশন করা হয় ৷ এই দু'জনকে বরখাস্তের সুপারিশ করে তিনি দলের ব্লক সভাপতিকে চিঠি পাঠিয়েছেন ৷ তিনি তাঁদের বহিষ্কার করেননি ৷ কিন্তু ওই চিঠি কীভাবে ভাইরাল হল, তা তিনি জানেন না ৷ তিনি বলেন, "আমি চারবারের অঞ্চল সভাপতি ৷ আমি কেমন, তা সবাই জানে ৷ ওদের দুর্নীতির জন্য পঞ্চায়েতে এখানে আমাদের ভরাডুবি হয়েছে ৷ পঞ্চায়েত আমাদের হাতছাড়া হয়েছে ৷"
এদিকে মোজাম্মেল বলছেন, "গত পাঁচ বছর এই ধীরেন্দ্রনাথ সাহা, ইউসুফ, ওবাইদুররা ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মানুষের জন্য অসংখ্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছেন ৷ ওঁরা যদি এতই মানুষের কাজ করে থাকত, তবে আজ এই অবস্থা হল কেন? ভোটে ওরাই প্রার্থী নির্বাচন করেছে ৷ মানুষ যে প্রার্থীকে পছন্দ করেছে তাকে টিকিট না দিয়ে অন্যকে দেওয়া হয়েছে ৷ ওরা নিশ্চয়ই দুর্নীতি করেছে ৷ তাই মানুষ ওদের পাশ থেকে সরে গিয়েছে ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ওঁদের বরখাস্ত করা ৷ তা না করে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে ৷ তাছাড়া দলের নীতি অনুযায়ী একজন অঞ্চল সভাপতি আমাকে বহিষ্কার করতে পারেন না ৷ কারণ, আমি চেয়ারম্যান ৷ আমি গোটা বিষয়টি দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছে ৷ অভিযোগ জানিয়েছি খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷"
বিষয়টি নিয়ে লোকসভার আগে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি ৷ দলের জেলা সহ-সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, তৃণমূল মানুষের পাশে থাকে না ৷ মানুষের কাজও করে না ৷ নিজেরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই ডুবে থাকে ৷ মূলত টাকাপয়সার লেনদেন নিয়েই এসব ঝামেলা ৷ তাই এভাবে নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে ৷ এভাবে বহিষ্কার হতে হতে একসময় দলটাই ভারতবর্ষের রাজনীতি থেকে বহিষ্কার হয়ে যাবে ৷
এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত যে দলের প্রোটোকল মেনে হয়নি তা মেনে নিয়ে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি শুভময় বসুর বক্তব্য, এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় ৷ এখানে বিজেপি বা অন্য কেউ কী বলল তা নিয়ে তৃণমূল কিছু ভাবছে না ৷ তাঁদের সবকিছুই রাজ্য, জেলা, ব্লক ও অঞ্চল কমিটিকে নিয়ে হয় ৷ কেউ শৃঙ্খলা ভাঙলে দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেই ৷ এখানে গোষ্ঠীকোন্দলের কোনও বিষয় নেই ৷
আরও পড়ুন: