মালদা, 28 এপ্রিল : বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কোন্দলে জেরবার মালদা তৃণমূল (TMC Factionalism in Malda) । বিশেষ করে কালিয়াচক-2 আর রতুয়া-1 ব্লকে বারবার শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে । বিক্ষুব্ধদের নিশানায় দলের জেলা সভাপতি আর চেয়ারম্যান । এবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই দু’জনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রতুয়া-1 ব্লক তৃণমূল সভাপতি ফজলুল হক । তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যানের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও কটাক্ষের সুর শোনা গিয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতির গলায় (TMC Block President in Malda Slams Party District Leaders) ৷
সাংবাদিক সম্মেলনে ফজলুল সাহেব বলেন, “সম্প্রতি এলাকার বিধায়ক তথা দলের জেলা চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায় রতুয়া থানার আইসির বিরুদ্ধে মাটি মাফিয়াদের কাছ থেকে তোলা নেওয়ার হাস্যকর অভিযোগ তোলেন । একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ওই অফিসারের পাশে দাঁড়াই । সেটাই নাকি আমার অপরাধ । আমি নাকি দলবিরোধী কাজ করেছি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তিনি (সমর মুখোপাধ্যায়) পুলিশকর্তাদের কাছে আমার নামেও মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ করেছেন । আমি স্কুল শিক্ষক । বিধায়কের এহেন মন্তব্য আমি দুঃখিত এবং ব্যথিত । 10 বছর কংগ্রেসের সাংগঠনিক সভাপতি ছিলাম আমি । 2011 সাল থেকে তৃণমূল করি । আমাদের নেতৃত্বে দল এখানে সাফল্য পাওয়ার পর সমরবাবু কংগ্রেস আর আবদুর রহিম বকসি আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে আসেন । আর দলে যোগ দিয়েই তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছেন ।’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘তাঁদের (অন্য দল থেকে তৃণমূলে আসা নেতা) সঙ্গে লড়াই করেই আমরা এখানে তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করেছি । সমরবাবু আমার নামে খুনের মিথ্যে মামলাও করেছেন । গত ডিসেম্বরে তিনি আমার বিরুদ্ধে মাছ চুরির মামলা দায়ের করেছেন । আমি দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে চাই, 84 বছর বয়সে সমরবাবুর এমন পাগলামি দলটাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে ।”
ফজলুল সাহেব আরও বলেন, “সমরবাবুকে সঙ্গ দিচ্ছেন আমাদের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি । তিনি সমরবাবুর কাঁধে বন্দুক রেখে রতুয়ায় নিজের আধিপত্য কায়েম করতে চাইছেন । সমরবাবু একাধিক সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন । দলেরও জেলা চেয়ারম্যান তিনি । তাঁর আর কত পদ লাগে ? আমরা কোথায় যাব ? আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে রাজনীতি করি । রাজনীতি আমার পেশা নয় । দলের প্রতি সমরবাবু কিংবা রহিম বকসির কতটা দায়বদ্ধতা রয়েছে তাও জানি । তাঁরা দলটাকে নিজেদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম মনে করেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এখনও আমি এই ব্লকের সভাপতি । কিন্তু তাঁরা আমাকে সভাপতি বলে গণ্য করেন না । আমাকে মাত্র একটি দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হয়েছিল । আমি কোনও কর্মসূচি করলে তাঁরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরে পালটা কর্মসূচি করেন । আমি যদি ব্লক সভাপতি না থাকি, তবে তাঁরা সেকথা ঘোষণা করুন । রহিম বকসির নিজেরই কথাবার্তার কোনও মাথামুণ্ডু নেই । আর সমরবাবু কোনওদিনই নিজের ক্যারিশমায় ভোটে জেতেননি । কোনও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এখন আর তাঁর মনে নেই । তাঁর বিধায়ক কোটার টাকা তছরুপ নিয়ে আমি অভিযোগ করেছিলাম । তাঁর কোটার টাকায় পিচরাস্তার উপরেও মাটির রাস্তা বানানো হয়েছে ।”
ফজলুল সাহেবের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ার জন্য সমরবাবুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি । তবে আবদুর রহিম বকসি এনিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন । তিনি বলেন, “কিসের ভিত্তিতে ফজলুল সাহেব এসব কথা বলেছেন জানি না । তবে আমরা পুরনো কর্মীদের খুঁজে খুঁজে বের করছি । যথাযথ সম্মান দিয়ে তাঁদের ফের দলের কাজে যুক্ত করা হচ্ছে । ফজলুল সাহেব কতদিনের পুরোনো তৃণমূল কর্মী আমার জানা নেই । তিনি দীর্ঘদিন কংগ্রেস করেছেন । অবশ্য এখন তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । সমরবাবু দীর্ঘদিনের বিধায়ক । রতুয়ায় বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সবাই জানে । আজ যাঁরা তাঁর সম্পর্কে বলছেন, তাঁদের জন্মের আগে থেকে সমরবাবু রাজনীতি করেন ।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে ফজলুল সাহেব বিজেপির হয়ে ভোট করেছেন । এর দুঃখ তাঁর মনে রয়েছে । তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ফজলুল সাহেবরা তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন । দলে কারও কিছু বক্তব্য থাকতেই পারে । তা নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনা করা উচিত । কিন্তু দলকে মান্যতা না দিয়ে, দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করে জনসমক্ষে এসব কথা বলে বেড়ালে তাঁরা দলবিরোধী কাজ করছেন । আমরা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও জেলাস্তরে আলোচনা করব । দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে কাউকে রেয়াত করা হবে না ।”
আরও পড়ুন : Primary Teacher Job Scam : মালদায় প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা