মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : ইটিভি ভারতে খবরের জেরে আশার আলো দেখল মালদা হরিশ্চন্দ্রপুরের বারোডাঙা গ্রামের দাস পরিবার ৷ ওই পরিবারের মেয়ে, রোগাক্রান্ত পিংকি দাসের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করল জেলা প্রশাসন ৷ ইতিমধ্যে পিংকিকে ভর্তি করা হয়েছে মালদা শহরের একটি নার্সিংহোমে ৷ উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে জেলা প্রশাসন৷
হাতে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না পিংকি দাস ৷ মেয়েকে নিয়ে সব জায়গায় ঘুরে বেরাচ্ছিলেন ভ্যানচালক বাবা দীপক দাস ও মা লক্ষ্মীদেবী ৷ বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয় স্থানীয় তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মীরজাতপুর গ্রামে ৷ স্বামী রঞ্জিত দাস পেশায় ভিনরাজ্যের শ্রমিক ৷ তাঁদের দুই ছেলে ৷ কিন্তু স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অত্যাচারে বছর পাঁচেক ধরেই দুই ছেলে নিয়ে বাপের বাড়িতে রয়েছেন পিংকি ৷ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অসুস্থ তিনি ৷ সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথা ৷ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না ৷ সঙ্গে শ্বাসকষ্ট সহ অন্যান্য উপসর্গও রয়েছে ৷ প্রথমে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয় ৷ সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাঁকে মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয় ৷ মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে তাঁর বাবা-মা মালদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসেন ৷ কিন্তু সেখানে চিকিৎসা করানোর পরও মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় তাঁরা মালদা শহরের একাধিক নার্সিংহোমে যোগাযোগ করেন ৷ চিকিৎসার জন্য তাঁদের একমাত্র ভরসা ছিল রাজ্য সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ৷ তাঁদের অভিযোগ, মালদার কোনও নার্সিংহোম সেই কার্ডকে গুরুত্ব দিতে চায়নি ৷ তাই ভাল করে চিকিৎসাও তাঁরা করাতে পারেননি ৷ শেষ পর্যন্ত তাঁরা দ্বারস্থ হন ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিকের ৷ লক্ষ্মীদেবী লিখিতভাবে বিডিওকে জানান, সরকারিভাবে মেয়ের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা না করা গেলে, তাঁরা পরিবার সহ আত্মঘাতী হতে বাধ্য হবেন ৷ মেয়ের এই অবস্থা তাঁরা সহ্য করতে পারছেন না ৷
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিই সার, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিল না বেসরকারি হাসপাতাল
দাস পরিবারের এই চিঠি আবেদনে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন ৷ তাদের তরফে যোগাযোগ করা হয় জেলার বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বিগীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে ৷ আজ দুপুরে পিংকিকে মালদা শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে ৷ তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা ৷ দ্বিগীন্দ্রবাবু বলেন, “গতকালই জেলাশাসকের দপ্তর থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছিল ৷ আমরা ঠিক করেছিলাম, আজ হরিশ্চন্দ্রপুরে গাড়ি পাঠিয়ে রোগীকে নিয়ে আসব ৷ কিন্তু প্রশাসনের তরফেই দুপুর 12টা নাগাদ রোগীকে এখানে নিয়ে আসা হয় ৷ আমরা রোগীকে পরীক্ষা করেছি ৷ কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ৷ হাঁটাচলা করতে পারছেন না ৷ শরীরটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে ৷ সঙ্গে রক্তাল্পতাও রয়েছে ৷ তাঁর সঙ্গে থাকা কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখলাম, একেকবার একেক ধরনের রেকর্ড রয়েছে ৷ আমরা নিজেদের সাধ্য মতো তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করছি৷”
মেয়েকে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে রেরে খানিকটা স্বস্তিতে লক্ষ্মীদেবী ৷ তিনি বলেন, “প্রশাসন থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়েছিল ৷ তারাই মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে ৷ এখন ডাক্তারবাবুর কাছে মেয়েকে নিয়ে এসেছি ৷ দেখা যাক, কী হয় ৷ আশা করছি, মেয়ে ভালো হয়ে যাবে ৷ আমি মমতা দিদিকেও বলেছি, আমার মেয়েকে শুধু ভালো করে দাও ৷ আমি আর কিছু চাই না ৷”