মালদা, 16 জুলাই : চাটাইয়ের ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকছে সকালের আলো ৷ অন্ধকার কাটছে দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরটার ৷ অন্ধকার কাটছে ঘরের মানুষগুলোরও ! এই ঘরের ছেলেই যে মাধ্যমিক পরীক্ষায় 681 নম্বর পেয়েছে ৷ এলাকার সবজি বিক্রেতা রাজকুমার পালের ছেলে সুজিত পালকে নিয়ে গর্বিত পুরাতন মালদা ৷
পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের 1 নম্বর বিমল দাস কলোনিতে বাড়ি রাজকুমার পালের ৷ মালদা শহরে মকদুমপুর বাজারে প্রতিদিন সকালে সবজি বিক্রি করেন রাজকুমারবাবু ৷ স্ত্রী শীলা পাল গৃহবধূ ৷ রাজকুমার-শীলার দুই ছেলে রাজীব ও সুজিত ৷ সামান্য উপার্জনেও দুই ছেলেকে অসামান্য অর্জনের মন্ত্র দিয়ে আসছেন রাজকুমারবাবু ৷ দু’বেলার খাবার জুটুক আর না জুটুক ছেলেদের পড়াশোনায় খামতি রাখেননি ৷ ছেলেরাও বাবা-মায়ের পরিশ্রমের মান রেখেছে ৷ বড় ছেলে রাজীব এখন বেঙ্গালুরুর এক প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ মেডিকেল স্টাফের ট্রেনিং নিচ্ছেন ৷ লকডাউনে ঘরে ফিরেছেন ৷ অন্যদিকে, সুজিত মালদা টাউন হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ৷ গতকাল ফল বেরোতেই দেখা যায় 681 নম্বর পেয়েছে সে ৷ মুহূর্তে আলো হয়ে ওঠে অন্ধকার ঘর ! যদিও দাদার অবর্তমানে পারিবারিক লড়াইয়ে সুজিতের রোজনামচাও খুব একটা মসৃণ ছিল না ৷ সকালে মকদুমপুর বাজারে বাবাকে সাহায্য করতে যেতে হত তাকে৷ তার মধ্যে স্কুল, পাঁচজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া ও হোমটাস্ক ৷ তবে, পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে তিনজন বিনে পারিশ্রমিকে পড়াতেন মেধাবি ছাত্রকে ৷
সুজিত বাংলায় পেয়েছে 97, ইংরেজিতে 96, অংকে 100, ভৌতবিজ্ঞানে 95, জীবনবিজ্ঞানে 98, ভূগোলে 99 এবং ইতিহাসে 96 নম্বর ৷ প্রিয় বিষয় ভৌতবিজ্ঞানে তুলনায় কম পাওয়ায় হালকা মন খারাপ তার ৷ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সুজিত ৷ কিন্তু, সাধ আর সাধ্যের তফাৎ কীভাবে ঘুচাবে ? অনন্দের মধ্যেও চাপা চিন্তা পরিবারে ৷ চিন্তিত রাজকুমার পাল ৷
তিনি বলেন, "ছেলের ফলে খুব ভালো লাগছে ৷ ওর স্বপ্ন বড় ৷ কিন্তু, আমি সামান্য সবজি বিক্রেতা ৷ তবু, শেষ শক্তি দিয়ে ওর ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করব৷ সরকারি সহায়তা পেলে ভালো হত ৷"
বাস্তবের মাটিতে পা রেখেও স্বপ্নে বুঁদ সুজিত ৷
উজ্জ্বল ছাত্রটির কথায়, "দুই ভাইয়ের পড়াশোনার জন্য মা-বাবা কষ্ট করছেন ৷ এই রেজাল্ট তাই ওঁদের উৎসর্গ করছি ৷ ভবিষ্যতে IIT-তে পড়াশোনা করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে ৷ ইচ্ছে পূরণ হবে কি না জানি না ! ”