মালদা, 13 অগাস্ট : তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই কি প্রাণ হারাতে হল 10 বছরের ওমর ফারুককে ? প্রশ্নটা উসকে দিল তাঁর আব্বা মোথাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হাফিজুল ইসলামের বক্তব্য ৷ আজ তিনি দাবি করেন, রাজনীতির কারণে প্রাণ দিতে হল তাঁর ছেলেকে । এর পিছনে কারা জড়িত তা পুলিশকে খুঁজে বের করতে হবে ৷ ছেলের খুনের রহস্য উন্মোচনে তিনি CBI তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন ৷ এদিকে এই ঘটনায় ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তাদের জেলা আদালতে পেশ করে মোথাবাড়ি থানার পুলিশ ৷ তবে হাফিজুল ইসলাম এর পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তুললেও পুলিশের দাবি, পারিবারিক বিরোধের জেরেই নাবালকের ৷
গতকাল বিকেলে মোথাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতাপপুর নিমজলা গ্রামের রাস্তা থেকে ওমর ফারুকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় ৷ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে ৷ ধৃতদের নাম রশিদুল শেখ ও রমজান শেখ ৷ রশিদুল সম্পর্কে মৃতের বাবা হাফিজুল ইসলামের খুড়তুতো ভাই ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় নিজেদের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেছে ধৃতরা ৷ হাফিজুলের সঙ্গে টাকাপয়সা সংক্রান্ত পুরোনো বিরোধের জেরেই তারা তাঁর ছেলেকে খুন করেছে বলে জানিয়েছে ৷ যদিও তারা জানিয়েছে, ফারুককে খুন করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না ৷ তারা হাফিজুল ইসলামের থেকে মুক্তিপণ আদায় করতেই ফারুককে অপহরণ করেছিল ৷ ফারুক যাতে তাদের চিনতে না পারে তার জন্য তারা সবসময় মুখ ঢেকে থাকত ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও রশিদুলকে চিনে ফেলে ফারুক ৷ এরপরই তারা তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ তবে এরপরও বেশ কিছু প্রশ্ন ভাবাচ্ছে পুলিশকে ৷ সেই কারণে 15 দিনের পুলিশ হেপাজতের আবেদন করে আজ ধৃতদের জেলা আদালতে পেশ করা হয় ৷
যদিও হাফিজুল ইসলাম বলেন, "ভোট আর রাজনীতির জন্যই আমার একমাত্র ছেলেকে প্রাণ দিতে হয়েছে ৷ এই ঘটনায় শুধু রশিদুল আর রমজান নয়, অনেক রাঘববোয়াল জড়িত ৷ গত রবিবার আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল ৷ সাতদিন আগেই রশিদুল আর রমজান 40 হাজার টাকা দিয়ে দুটি মোবাইল ফোন কেনে ৷ একটি মোটরবাইকও কিনেছিল ৷ ওরা তেমন কোনও কাজকর্ম করে না ৷ তাহলে একসঙ্গে এত টাকা পেল কোথায়?”
তিনি আরও বলেন, "আমি নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতেছিলাম ৷ তারপর তৃণমূলে যোগ দিই৷ মোথাবাড়ি এলাকায় তৃণমূলের অনেক গোষ্ঠী ৷ বেশ কিছুদিন থেকে এখানে প্রধানের পদ নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বড় আকার নিয়েছে ৷ একটি গোষ্ঠী আমার প্রধান হওয়া আটকাতে 12 লাখ টাকার টোপও দিয়েছিল ৷ রাজি হইনি ৷ সম্ভবত সেকারণেই আমার একমাত্র ছেলেকে এভাবে চলে যেতে হল ৷"
তাঁর সাফ কথা, "এই ঘটনায় পুলিশ যা তদন্ত করছে তাতে আমি সন্তুষ্ট নই ৷ আমি ছেলের খুনের ঘটনায় CBI তদন্ত দাবি করছি ৷"
যদিও পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "তদন্ত প্রায় শেষ ৷ যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে ৷ তবে এখনও কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি ৷ তার জন্য ধৃতদের পুলিশ হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আজ আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ ওই নাবালকের আব্বার কিছু বলার থাকলে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখব ৷" ধৃতদের 10 দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য দায়রা বিচারক ৷
এদিকে ঘটনার জেরে আজও থমথমে মোথাবাড়ির আমলিতলা গ্রাম ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ৷ চলছে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্সের টহল ৷ আজ ঘটনাস্থানে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার ৷ গতকাল রাতে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীর একাংশ মূল অভিযুক্ত রশিদুলের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ৷ অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে ৷
মোথাবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "পুলিশের তদন্তের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে ৷ আমরা চাই এই ঘটনায় দোষীরা সবাই ধরা পড়ুক ৷ তাদের কঠোর শাস্তি হোক ৷ ঘটনার প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসুক ৷"