মালদা, 3 মে : কোরোনা আতঙ্কে চলতি মরশুমে রেশমকীট বিলি করেনি কেন্দ্র কিংবা রাজ্য রেশম পর্ষদ ৷ ফলে চলতি মরশুমে রেশমচাষ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে জেলায় ৷ টানা লকডাউনে সমস্যায় পড়েছে চাঁচল 1 ও 2 ব্লকের রেশম চাষিরা ৷ গত মরশুমের চাষে উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে রেশমের দাম পাচ্ছে না তারা ৷ কালিয়াচক রেশম বাজারে রেশমের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে ৷ পুলিশের সহায়তায় 100 কিলোমিটারের বেশি দূরে ওই বাজারে তারা উৎপাদিত রেশম নিয়ে যাচ্ছে বটে, কিন্তু দাম না পেয়ে তাদের সেই রেশম ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে ৷ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলেই জানাচ্ছে চাষিরা ৷
একই বক্তব্য চাঁচল 1 পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষেরও ৷ এই পরিস্থিতিতে সবাই জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে ।
মালদা জেলার দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল রেশম ৷ এই জেলায় প্রায় 21 হাজার হেক্টর জমিতে রেশমচাষ হয় ৷ গোটা জেলার প্রায় 70 হাজার পরিবার এই চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ৷ রেশমচাষ হয় চাঁচল 1 ও 2 ব্লকেও ৷ চাঁচল 1 ব্লকের মকদুমপুর ও অলিহন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং চাঁচল 2 ব্লকের ভাকরি ও গৌড়হন্ড গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বেশি রেশমচাষ হয় ৷ এসব এলাকার রেশম গুটির মানও বেশ উন্নত ৷ সেই কারণে 2018 সালে ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর-গৌরিপুর গ্রামকে রেশমচাষের মডেল গ্রাম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই গ্রামের রেশমচাষেই নেমে এসেছে অন্ধকার ৷
গৌরিপুর-রামপুর গ্রামের রেশম চাষি জসিমউদ্দিন বলেন, “লকডাউনে যা পরিস্থিতি চলছে তাতে আমরা আর বাঁচব না বলেই মনে হচ্ছে ৷ ভিক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নেই ৷ বাজার নেই ৷ কাঁচামাল শুকোতে দিচ্ছি ৷ ভালো হবে, নাকি ফেলে দিতে হবে বুঝতে পারছি না ৷ পুলিশের অনুমতি নিয়ে বাজারে মাল নিয়ে যাচ্ছি ৷ কিন্তু তাতেও রাস্তায় অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে ৷ বাজারেও দাম পাচ্ছি না ৷ আগে যেখানে মন প্রতি 15 থেকে 16 হাজার টাকা দাম পেতাম, এখন সেখানে দাম যাচ্ছে মন প্রতি 4-5 হাজার টাকা ৷ এই দামে আমাদের পোষাবে কীভাবে? এমন চলতে থাকলে ফাঁসি দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না৷”
অন্য এক রেশম চাষি শাহজাহান আলি বলেন, “200 গ্রাম ডিমের চাষ করেছিলাম৷ এই ডিম থেকে প্রায় 100 কেজি রেশম উৎপাদন হয়৷ লকডাউনে আমরা মাল নিয়ে কালিয়াচকের বাজারে যেতে পারছি না ৷ চাঁচল থানার IC-র সহায়তায় মাল নিয়ে বাজারে গেলেও সঠিক দাম মিলছে না ৷ 4-5 হাজার টাকার বেশি দামই উঠছে না ৷ এভাবে কীভাবে চলব?”
চাষিদের এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন চাঁচল 1 পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এ টি এম রফিকুল হাসানও ৷ তিনি আজ গৌরিপুর-রামপুর এলাকার রেশমচাষ পরিদর্শন করেন ৷ কথা বলেন চাষিদের সঙ্গে ৷ বলেন, “লকডাউনে এই এলাকার চাষিদের কালিয়াচকের রেশম বাজারে উৎপাদিত ফসল নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছিল৷ পুলিশ সেই সমস্যার সমাধান করলেও রাস্তায় এখনও চাষিদের বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে ৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা, কালিয়াচকের বাজারে গতবার 10-11 হাজার টাকা মন দরে রেশমগুটি বিক্রি হলেও এবার 4-5 হাজারের বেশি দাম উঠছে না বলে জানতে পেরেছি৷ এই অবস্থায় চাষিদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না ৷ কারণ, এখানকার চাষিরা প্রায় সবাই ঋণ নিয়ে রেশমচাষ করেন ৷ তাই চাষিদের সঙ্গে আমিও জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, রেশমচাষিদের বাঁচিয়ে রাখতে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় ৷ তা না হলে এই চাষে সবাই উৎসাহ হারাবে ৷”