মালদা, 11 ফেব্রুয়ারি: শিয়রে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election) ৷ ঠিক তার আগে বামনগোলা ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের 12 জন সদস্য আচমকাই পদত্যাগ করলেন একযোগে ৷ ঘটনায় স্বভাবতই চাঞ্চল্য মালদা জেলা রাজনীতির অন্দরে ৷ যদিও এর পিছনে অন্য কাহিনিও উঠে এসেছে ৷ তবে এই পদত্যাগ দল অনুমোদন করে না-বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বামনগোলা ব্লক তৃণমূল সভাপতি ৷
উল্লেখ্য, 19 সদস্যবিশিষ্ট মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই ৷ অথচ গতকাল সন্ধেয় সেই পঞ্চায়েতেরই 12 জন সদস্য একযোগে বিডিও'র কাছে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্চায়েতের প্রধান রানি বিশ্বাস রায় ও উপপ্রধান সত্য রামও ৷ আরও অদ্ভূত বিষয়, পদত্যাগের কারণ হিসাবে তাঁরা বিডিও'কে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৷ জানিয়েছেন, যুব তৃণমূলের ভয়ে তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন ৷
কারণ, সম্প্রতি মদনাবতী অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি হিসাবে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি দলবল নিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যদের উপর হামলা চালাচ্ছেন ৷ হামলা চালানো হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতার পরিবারের সদস্যদের উপরেও ৷ ফলত তাঁরা প্রাণনাশের ভয় পাচ্ছেন ৷ সেকারণেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ এলাকার রাজনৈতিক মহল বলছে, এই পদত্যাগের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক কৌশল ৷ সম্প্রতি রাজ্য তৃণমূলের তরফে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে নির্দেশ এসেছে, প্রতিটি বুথে অন্তত 3 জন পদপ্রার্থীকে চিহ্নিত করে সেই নামের তালিকা আগামী 17 ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যে পাঠাতে হবে ৷
আরও পড়ুন: ফের আবাস বিতর্ক ! পদত্যাগ প্রধান, উপপ্রধান সহ-8 তৃণমূল কর্মীর
সেই নির্দেশিকা প্রতিটি ব্লকে পৌঁছে গিয়েছে ৷ ব্লক নেতৃত্বও সেই তালিকা প্রায় তৈরি করে ফেলেছে ৷ মদনাবতী অঞ্চলে বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যদের অনেকেরই সেই তালিকায় ঠাঁই হয়নি বলে খবর ৷ তারই জেরে 12 জন পঞ্চায়েত সদস্য অত্যন্ত কৌশলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ তাঁদের অনুমান, এই পদক্ষেপ করে তাঁরা দলের জেলা সভাপতিকে কৌশলে নিজেদের এলাকায় নিয়ে আসতে পারবেন ৷ তারপর তাঁকে চাপ দিয়ে নিজেদের নাম সেই তালিকায় ঢুকিয়ে ফেলতে পারবেন ৷ তবে শুধু এটাই নয়, পদত্যাগের পিছনে রয়েছে আরও একটি কারণ ৷ দীর্ঘদিন ধরেই মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ৷
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, পঞ্চায়েত সদস্যরা লাখপতি নয়, কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন ৷ কিন্তু গ্রামবাসীদের কোনও কিছুই হয়নি ৷ এলাকারও উন্নয়ন হয়নি ৷ এবার ভোট চাইতে গেলে পঞ্চায়েত সদস্যদের মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তেই হবে ৷ সেই সময় তাঁরা দায় এড়াতে এই পদত্যাগ নিজেদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবেন ৷ পদত্যাগী এক পঞ্চায়েত সদস্য তথা মদনাবতী অঞ্চল মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী রূপা প্রামাণিক শীল বলেন, "এখানে পঞ্চায়েত সদস্যরা সুরক্ষিত নয় ৷ ইতিমধ্যে দু'জন পঞ্চায়েত সদস্যকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে ৷ একজনের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যজনের হাতে-পায়ে চোট লেগেছে ৷ প্রশাসনকে সব জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ এতে আমরা ভীত ৷ তাই গতকাল আমরা 12 জন পঞ্চায়েত সদস্য বিডিওর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি ৷"
আরও পড়ুন: নিশীথ প্রামাণিকের পদত্যাগের দাবিতে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে মিছিলে তৃণমূলের
যদিও বামনগোলা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সমীর কর্মকার বলেন, "মদনাবতীতে পারিবারিক ঝামেলায় ওই ঘটনা ঘটেছে ৷ এর সঙ্গে তৃণমূল যুবর কোনও যোগ নেই ৷ আসল লোককে আড়াল করতে কয়েকজনের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে যুবকে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ৷ এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ৷ আমি পুরো বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি ৷ এতে ভোটে কোনও প্রভাব না-পড়লেও এরা বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে ৷" বামনগোলা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোক সরকারও পঞ্চায়েত সদস্যদের পদত্যাগের বিরোধিতা করেছেন ৷
তিনি জানান, মদনাবতী অঞ্চলে কয়েকদিন আগে যুব তৃণমূল সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে ৷ এখনও যুবর অঞ্চল কমিটি গঠিত হয়নি ৷ শুধু সভাপতি কীভাবে পঞ্চায়েত সদস্যদের মারধর করতে পারেন? আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তিনি কোনও ঘটনায় জড়িত ছিলেন না ৷ তাছাড়া পঞ্চায়েত সদস্যরা দলের অনুমোদন না-নিয়ে এভাবে পদত্যাগ করতে পারেন না ৷ ওই 12 জন সদস্য কেন পদত্যাগ করেছেন জানি না ৷ তবে তাঁদের পদত্যাগ দল অনুমোদন করছে না ৷
আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের উপর হামলার প্রতিবাদ ! উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিশ্বভারতীতে বিক্ষোভ