মালদা, 31 অগস্ট: জানুয়ারি থেকেই শরীরটা ভাঙছিল ৷ দেখা দিয়েছিল নানা উপসর্গ ৷ অসুস্থ শরীর নিয়ে স্কুলও যেতে পারছিলেন না ৷ দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির জন্য এপ্রিল থেকে তাঁর বেতন বন্ধ হয়ে যায় ৷ পরের মাসেই শারীরিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ ৷ চিকিৎসার জন্য তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে 18 মাসের বিশেষ ছুটির আবেদন জানান ৷ কিন্তু সেই ছুটি তাঁকে মঞ্জুর করা হয়নি ৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনুপস্থিতির জন্য পাচ্ছেন না বেতন ৷ এ দিকে, অর্থের অভাবে তাঁর চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার মুখে ৷ কী করবেন, তা ভেবে দিশেহারা মালদার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৷ অবশেষে তিনি গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কাছে তাঁর আবেদন, সবেতন ছুটি মঞ্জুর না হলে তাঁকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক ৷ সেই চিঠির প্রতিলিপি তিনি পাঠিয়েছেন মালদার জেলাশাসককেও ৷
মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া এ বিষয়ে বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি ৷ আইন অনুযায়ী ওই শিক্ষকের জন্য যা করা যায়, তা করা হবে ৷”
কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের দুর্লভপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রতকুমার রায় ৷ গতকাল মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার পর অসহায় হয়ে পড়েন তিনি ৷ তিনি জানেন, এ সব ক্ষেত্রে 18 মাসের সবেতন স্পেশাল ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে ৷ তিনি সেই ছুটির জন্য স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শকের কাছে একাধিকবার আবেদন জানান ৷ কিন্তু কেউ তাঁর আবেদনে সাড়া দেননি বলে অভিযোগ তাঁর ৷
আরও পড়ুন: 'বিচারে আশা নেই', স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি ধর্ষিতার
তাঁর একমাত্র উপার্জনের উৎস স্কুলের বেতন ৷ ছুটি মঞ্জুর না হওয়ায় অনুপস্থিতির কারণে সেই বেতন বন্ধ হয়ে যায় ৷ তার ফলে একদিকে যেমন তাঁর চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে, তেমনই সমস্যা হচ্ছে পরিবারের অন্ন সংস্থানেও ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আবেদন, পরিবার ও নিজের জীবন বাঁচাতে তাঁর বেতন চালু করা হোক ৷ অথবা তাঁকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক ৷
এই মুহূর্তে কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে সুব্রতকুমার রায়ের ৷ তার মধ্যেই কোনওরকমে জানান, “আমি ক্যানসারে আক্রান্ত ৷ অসম্ভব দুর্বল একটা মানুষ ৷ আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছি ৷ কারণ, আমার একমাত্র ভরসা আমার স্কুলের বেতন ৷ কিন্তু সেই বেতন গত এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ ৷ শুধু তাই নয়, চিকিৎসার জন্য আমার ছুটিও মঞ্জুর করা হয়নি ৷"
তাঁর অভিযোগ, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সন্তোষকুমার ঋষি, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সামন্ত ৷ তাঁরাই সবাই মিলে তাঁকে এই পরিস্থিতির সামনে ফেলে দিয়েছেন ৷ প্রধান শিক্ষক বলেন, "এখন আমার বেঁচে ওঠার ক্ষমতা নেই ৷ আমি চিকিৎসাও করাতে পারছি না ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছি ৷”
তাঁর স্ত্রী মিতা ঝা রায় বলেন, “এপ্রিল মাস থেকে স্বামীর বেতন বন্ধ ৷ বেতন চালুর জন্য আমরা জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শকের কাছে গিয়েছি ৷ তিনি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে যেতে বলছেন ৷ ম্যানেজিং কমিটির কাছে গেলে সভাপতি আমাদের ডিআইয়ের কাছে যেতে বলছেন ৷ স্বামীর বেতন চালুর জন্য সব জায়গায় আবেদন করেছি ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোথাও থেকে কোনও সাড়া পাইনি ৷ পরিস্থিতির চাপে আমার স্বামী স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন ৷ আমাদেরও একই অবস্থা ৷ স্বামীর বেতন চালু না হলে আমাদের সবাইকে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে হবে ৷ টাকার অভাবে স্বামীর চিকিৎসার রসদও জোগাড় করতে পারছি না ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন আমার স্বামীর বেতন চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন ৷”