মালদা, 19 ফেব্রুয়ারি : নিশুতি রাত ৷ স্কুলবাড়ির বারান্দায় শোনা যাচ্ছে হালকা পায়ের আওয়াজ ৷ হাঁটার ছন্দে ভেসে আসছে নুপুরের শব্দ ৷ কখনও বা কোনও ছেলের কান্নার আওয়াজ ৷ মাঝেমধ্যে ভারি কিছু পড়ার শব্দও পাওয়া যাচ্ছে ৷ স্কুলের এক অস্থায়ী কর্মী বেশ কয়েকবার এসবের সাক্ষী থেকেছেন ৷ অভিযোগও করেছেন ৷ সরস্বতী পুজোর আগের দিন এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কয়েকজন ছাত্র ৷ তারা আবার নুপুরের ধ্বনি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে ৷ মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায় ৷ সব মিলিয়ে ভূতের আতঙ্কে ভুগছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের কুশিদা হাইস্কুল ৷ যদিও পড়ুয়া ও স্কুলের অস্থায়ী কর্মীর দাবি মানতে নারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছে পঞ্চায়েত প্রশাসনও ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরস্বতী পুজো উপলক্ষে কয়েকজন পড়ুয়া স্কুলেই রাত কাটায় ৷ গভীর রাতে তারা শুনতে পায়, তিনতলা স্কুলের উপরতলার বারান্দা দিয়ে কেউ যেন নুপুর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ৷ তারা সেই আওয়াজ নিজেদের ফোনে রেকর্ডিং করে ৷ পরে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে ৷ তারা দাবি করে, স্কুল বাড়িতে ভূত রয়েছে ৷ এ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে হরিশ্চন্দ্রপুর জুড়ে ৷ স্কুলের এক অস্থায়ী কর্মী মকসুদ আলিও ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একমত ৷ স্কুলেই থাকেন ৷ তিনি বলেন, “গভীর রাতে এই স্কুলবাড়িতে মেয়েরা পায়ে নুপুর পরে ঘোরে ৷ মাঝেমধ্যে ছেলের গলায় কান্নার আওয়াজ শোনা যায় ৷ রাত গভীর হলেই এসব শোনা যায় ৷ কিন্তু কাউকে দেখা যায় না ৷ সরস্বতী পুজোর দিন ছেলেরাও তার প্রমাণ পেয়েছে ৷ তারা দেখেছে, চারটি মেয়ে নুপুর পায়ে একদিক থেকে অন্যদিকে চলে গেল ৷ পরদিনও একই ঘটনা ঘটেছে ৷ ছেলেরা আওয়াজ রেকর্ডিং পর্যন্ত করেছে ৷ রাতে স্কুলে থাকলে সবাই এসব শুনতে পাবে ৷ স্কুলের এই অংশের ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়ছে ৷ এদিকে কেউ আসে না ৷ রাত আটটার পর স্কুলে ঢুকতে ভয় লাগে ৷
যদিও পড়ুয়া কিংবা অস্থায়ী কর্মীর দাবি মানতে নারাজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হাসিব ৷ তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি ৷ পুজো উপলক্ষে কয়েকজন ছাত্র রাতে স্কুলে ছিল ৷ তাদের মধ্যে হয়তো কেউ মজা করার জন্য অন্য কোথাও এ-ধরনের আওয়াজ রেকর্ডিং করে থাকতে পারে ৷ আমরা এর তদন্ত করছি ৷ তবে কে এই আওয়াজ করেছে তা এখনও জানতে পারিনি ৷ এনিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই ৷ কারণ, এই স্কুলে রাতে অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে ৷ ভোটের সময় ভোটকর্মীরা এখানে থাকেন ৷ বন্যার সময় স্থানীয় লোকজন প্রায় এক সপ্তাহ স্কুলে ছিল ৷ তাঁরা এধরনের কোনও অভিযোগ করেনি ৷ স্কুলের অস্থায়ী কর্মীও এনিয়ে আমাকে কিছু জানাননি ৷ আমরা ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করব ৷ আমাদের স্কুলে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের শাখা রয়েছে ৷ সেখান থেকেও আমরা পড়ুয়াদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করব ৷ প্রয়োজনে বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্যস্তরের সদস্যদেরও ডাকব ৷”
আরও পড়ুন : ভূত ছাড়ানোর নামে 2 বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার তান্ত্রিকসহ 3
কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ নুর আজমও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একমত ৷ তিনি বলেন, “এ-নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই ৷ এর আগে আমরা এই স্কুলে করোনার কোয়ারানটিন সেন্টার করেছিলাম ৷ আমরা নিজেরাও বেশ কয়েকদিন গভীর রাত পর্যন্ত এখানে থেকেছি ৷ আমরা কোনও আওয়াজ পাইনি ৷ এলাকার মানুষের কাছ থেকেও আমরা এনিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি ৷ স্কুলের ছাত্ররা মজা করার জন্য এসব করেছে কিনা জানি না ৷ আমরা শুনেছি, স্কুলবাড়ি থেকে রাতে নাকি মহিলাদের নুপুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৷ এর কতটা সত্যি তা বলতে পারছি না ৷ বিজ্ঞান এসব মানে না ৷ তাছাড়া আমরাও এই স্কুলে পড়াশোনা করেছি ৷ এমনটা কখনও শুনিনি ৷” বিষয়টি জানতে ওই স্কুলে যাবেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক সুনীল দাস ৷