মালদা, 2 জুন : এসেছিলেন টিটেনাস প্রতিরোধী ইনজেকশন নিতে, দেওয়া হল জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ইনজেকশন (patient gets anti rabies vaccine in place of tetanus injection)। পাড়ার কোনও ওষুধের দোকানে নয়, এই ঘটনা ঘটেছে খোদ সরকারি হাসপাতালে । এনিয়ে বৃহস্পতিবার তুমুল হইচই পড়ে যায় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে (Allegation against Harishchandrapur Rural Hospital) । এই ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ । তবে গোটা ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ চিকিৎসকদের । এই অভিযোগ নিয়ে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ।
জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার কলম পাড়ার বাসিন্দা সংগীতা গুপ্তা । তাঁর একটি সেলাইয়ের দোকান রয়েছে । বুধবার সেলাই করার সময় কাঁচি দিয়ে তাঁর হাতের তালু কেটে যায় । তিনি সঙ্গে সঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে অ্যান্টি টিটেনাস সিরাম ইনজেকশন নিতে আসেন । তাঁকে পরীক্ষা করার পর হাসপাতালের চিকিৎসকও তাঁকে টিটেনাস প্রতিরোধী ইনজেকশন নেওয়ার পরামর্শ দেন । সংগীতাদেবী ইনজেকশন নিতে নার্সের কাছে যান । তাঁর বক্তব্য, নার্স তাঁর এক হাতে দু’বার ইনজেকশন দেন । এরপর তাঁর আরেক হাতে ইনজেকশন দিতে এলে সন্দেহ হয় তাঁর । নার্সকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তাঁকে কীসের ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে । তখনই তিনি জানতে পারেন, তাঁকে টিটেনাস প্রতিরোধী ইনজেকশনের পরিবর্তে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে । বিষয়টি জানতে পেরে ভয় পেয়ে যান তিনি । ছুটে যান ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তথা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমলকৃষ্ণ মণ্ডলের কাছে । সংগীতাদেবীর দাবি, অমলবাবু তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । ভুলবশত তাঁকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে । অমলবাবু তাঁকে ফের এটিএস ইমজেকশন নিতে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন । সঙ্গে জানান, জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ইনজেকশনের বাকি ডোজগুলিও সংগীতাদেবীকে সময়মতো নিতে হবে ।
আরও পড়ুন : কলকাতায় অনুব্রত, ডোমকলে দেহরক্ষীর বাড়িতে 15 ঘণ্টা তল্লাশি সিবিআইয়ের
কিন্তু বাড়ি ফেরার পরেই সংগীতাদেবী অসুস্থ বোধ করেন । তাঁর বমি ও মাথা ঘোরা শুরু হয় ৷ এপ্রসঙ্গে সংগীতা গুপ্তা নামে ওই মহিলা বলেন, “কাঁচি দিয়ে হাত কেটে যাওয়ায় আমি ইনজেকশন নিতে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে যাই । সেখানে আমাকে টিটেনাস প্রতিরোধী ইজেকশনের বদলে বদলে কুকুরে কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হয় । একাধিক ইনজেকশন দেওয়ায় আমার সন্দেহ হয় । নার্সকে প্রশ্ন করে জানতে পারি, আমাকে কুকুর কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডল স্যারের কাছে যাই । তিনি আমাকে জানিয়েছেন, বাকি ডোজগুলি নিয়ে নিলে ভয়ের কিছু নেই । গতকাল রাতে খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম । আমার প্রশ্ন, ইনজেকশন দিতে নার্সদের এত ভুল হল কেন ?”
এই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান কলম পাড়ার বাসিন্দারা ৷ বিষয়টি নিয়ে বিএমওএইচ কিংবা ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি । তবে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, “গতকাল ফোনে ঘটনাটি শুনেছি । কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে । যে সময়ে ওই মহিলা টিটেনাস প্রতিরোধি নিতে গিয়েছিলেন, সেই সময় হাসপাতালে কুকুর-বিড়াল কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হয় । নার্সরা আমাকে জানিয়েছেন, ওই মহিলাকে সঠিক ইনজেকশনই দেওয়া হয়েছে । তবু যখন অভিযোগ উঠেছে, তখন ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত হবে । তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে ।”