মালদা, 5 অগস্ট: মালদার সাইবার ক্রাইম থানায় দায়ের হবে শুধু আন্তর্জাতিক প্রতারণার অভিযোগ ৷ পুলিশ সুপারের নির্দেশে এখন থেকে ওই থানায় অন্য কোনও মামলা নয়, বরং শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক প্রতারণার অভিযোগই দায়ের হবে বলে খবর ৷ জেলার কোনও বাসিন্দা সাইবার দুষ্কৃতীদের শিকার হলে তাঁরা নিজেদের এলাকার থানায় অভিযোগ দায়ের করবে ৷ পুলিশ সুপারের এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিতভাবে সুবিধে হল জেলাবাসীর ৷ কিন্তু শুধুই কি জেলাবাসীর সুবিধের জন্য পুলিশ সুপারের এই সিদ্ধান্ত ? নাকি সাইবার ক্রাইম থানার কাজকর্ম নিয়ে তিনি বীতশ্রদ্ধ ! এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ পুলিশের অন্দরমহলে ৷
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, "এতদিন জেলায় একটি সাইবার ক্রাইম থানা থাকায় মানুষের অভিযোগ দায়ের করতে সমস্যা হচ্ছিল ৷ বিশেষত দূরবর্তী এলাকার মানুষজন ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ দায়ের করতে পারছিলেন না ৷ এতে তদন্তেও সমস্যা হচ্ছিল ৷ জেলাবাসীর কথা বিবেচনা করেই জেলার প্রতিটি থানায় সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ এতে মানুষের অভিযোগ করতেও সুবিধে হবে ৷ তবে জেলা সাইবার ক্রাইম থানা বন্ধ হচ্ছে না ৷ ওই থানাও চালু রয়েছে ৷" যদিও পুলিশ মহলের একটি অংশের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার ক্রাইম থানার কাজকর্ম নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল ৷ ওই থানার তদন্ত নিয়েও পুলিশকর্তারা একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছিলেন ৷ এসব কারণেও পুলিশ সুপার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে মনে করছে পুলিশের ওই মহল ৷
আরও পড়ুন: অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব লক্ষাধিক টাকা
বর্তমান সময়ে প্রতি মুহূর্তে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ ৷ শুধু সমাজের নীচুস্তরের মানুষজন নয়, এর শিকার হচ্ছেন উঁচুতলার অনেকেও ৷ কখনও চাকরি, কখনও লটারি, কখনও বা বিদ্যুতের বিল বকেয়া নিয়ে মোবাইল ফোনে মেসেজ আসছে ৷ কখনও বা ব্যাংকের কেওয়াইসি আপডেট করানোর আবেদন জানানো হচ্ছে ৷ কিছুদিন থেকে তো আয়কর বিভাগের নামেও সাইবার জালিয়াতি করা হচ্ছে ৷
আয়কর জমা দেওয়ার জন্য জাল ওয়েবসাইটের লিংক-সহ করদাতাদের কাছে ওয়েব লিংক ও এসএমএস পাঠানো হচ্ছে ৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাইবার অপরাধীদের কাজের ধরন এক ৷ যদি ভুল করেও কেউ তাদের পাঠানো ওয়েব লিংকে ক্লিক করলেই তাঁরা দুষ্কৃতীদের তৈরি করা জাল ওয়েবসাইটে পৌঁছে যাচ্ছেন ৷ বিভিন্ন উপায়ে তাঁদের কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা ব্যাংকের ওটিপি হাতিয়ে নিচ্ছে ৷ আর একবার সেই ওটিপি হাতাতে পারলে পরমুহূর্তেই তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে ৷ এছাড়াও রয়েছে মহিলাদের সঙ্গে সাইবার প্রতারণার নানা ছক ৷
সাইবার প্রতারণার হাত থেকে জেলাবাসীকে বাঁচাতে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে জেলা পুলিশ ৷ এ নিয়ে গ্রামেগঞ্জেও সচেতনতা প্রচার করা হয়েছে ৷ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় মানুষের কী করণীয়, কী করা উচিত নয়, পুলিশের তরফে পই পই করে বলে দেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু তারপরেও অনেক মানুষ এই দুষ্কৃতীদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন ৷ জেলার পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাইবার ক্রাইমের ঘটনায় সময় সবচেয়ে দামি ৷ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারিতরা পুলিশে অভিযোগ জানালে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া যায় ৷ তাতে যেমন খোওয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা থাকে, আবার অনেক ভুয়ো ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া থেকেও রোখা যায় ৷
আরও পড়ুন: কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে সাইবার ক্রাইম, সচেতন করতে মাঠে নামলেন পুলিশ কর্তারা
ওই পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, এতদিন গোটা জেলার সাইবার প্রতারণার অভিযোগ শুধুমাত্র সাইবার থানাতেই দায়ের করা যেত ৷ সেই থানা রয়েছে মালদা শহরে ৷ এতে হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, বামনগোলা সহ দূরের ব্লকগুলির বাসিন্দাদের অভিযোগ জানাতে শহরে আসতে হত ৷ তাতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হত, অন্যদিকে তাঁদের টাকাপয়সাও খরচ হত ৷ এসব চিন্তা করেই এখন থেকে জেলার 15টি থানাতেই সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷