মালদা, 10 অগস্ট : মাত্র 18 দিনের ব্যবধানে এক বৃদ্ধাকে দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিনের (Covid Vaccine) দুটি ডোজ় । আরও বড় বিষয়, বৃদ্ধাকে প্রথম ডোজে় কোভিশিল্ড (Covishield) এবং দ্বিতীয় ডোজে দেওয়া হয়েছে কোভ্যাকসিন (Covaxin) । এমন ঘটনা ঘটেছে খোদ সরকারি হাসপাতালে । এদিকে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে ওই বৃদ্ধার । আজ তিনি পুরাতন মালদার মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আসেন । বহির্বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দেন মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । তবে এই নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি । বারবার ফোন করা হলেও তা রিসিভ করেননি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ।
পুরাতন মালদা পৌরসভার 19 নম্বর ওয়ার্ডের লেবু বাগানের বাসিন্দা শান্তি মণ্ডল । 69 বছরের এই বৃদ্ধা বাড়িতে একাই থাকেন । দীর্ঘদিন আগে একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে গাজোলের আদিনা এলাকায় । বর্তমানে মেয়ে-জামাইয়ের উপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল শান্তিদেবী । 3 এপ্রিল তিনি মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেন। বীণা বটব্যাল নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী তাঁকে টিকা দিয়েছিলেন । প্রোভিশনাল সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে, শান্তিদেবীকে 26 জুন থেকে 28 জুলাইয়ের মধ্যে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে ।
শান্তিদেবী লেখাপড়া জানেন না । ফলে ওই সার্টিফিকেটে কী লেখা রয়েছে, তা তিনি জানতে পারেননি । প্রথম ডোজ নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে তিনি ফের হাসপাতালে যেতে শুরু করেন । কারণ, তিনি জেনেছিলেন, দুটো ডোজ় না নেওয়া হলে করোনা থেকে রেহাই মিলবে না । অবশেষে 21 এপ্রিল তিনি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পান । এবার তাঁকে দেওয়া হয় কোভ্যাকসিন । সেই টিকা দিয়েছিলেন পাপিয়া দাস নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী । ফাইনাল সার্টিফিকেটে তাঁরই নাম উল্লেখ রয়েছে ।
এদিকে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয় বৃদ্ধার । তিনি পড়শিদের তা জানান । প্রতিবেশীরা তাঁকে বলেন, এত কম সময়ের ব্যবধানে দুই ধরনের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্যই তাঁর এসব সমস্যা হচ্ছে । এরপর গতকাল তিনি মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আসেন ।
আরও পড়ুন : Covid Vaccine : টিকার আকাল, কলকাতায় বন্ধ কোভিশিল্ড
তিনি বলেন, “কিছুদিন ধরেই আমার চোখ-মুখ ফুলে যাচ্ছে । হাত-পা’ও ফুলছে । চোখে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছি না । সব কিছু ঝাপসা লাগছে । সব সমস্যা দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর । দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় প্রথম ডোজের সার্টিফিকেট সহ যাবতীয় নথি দেখিয়েছিলাম । আধার কার্ডের জেরক্সও দিয়েছিলাম । হাসপাতালে কেন ভুল হল বলুন তো ! আমার কেউ নেই । কী হবে আমার জানি না । আমার খুব ভয় করছে ।”
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের একটি গবেষণায় বলা হয়, কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন মিলিয়ে টিকা নিলে তার কার্যকারিতা বেশি হয় । 98 জনের উপর পরীক্ষা করে সেই কথা জানায় আইসিএমআর । এতে নাকি আলফা, বিটা ও ডেলটা প্রজাতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাড়ে । অনাক্রম্যতাও বেশি হয় । তবে এনিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা । কিন্তু 18 দিনের ব্যবধানে দু’ধরনের টিকার দুই ডোজ ? এই নিয়ে এখনও কোনও গবেষণা হয়েছে বলে জানা নেই ।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, খোদ সরকারি হাসপাতালে মাত্র 18 দিনের ব্যবধানে কেন শান্তিদেবীকে দুই ধরনের টিকা দেওয়া হল ? শান্তিদেবী দাবি করেছেন, তিনি দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সময় প্রথম ডোজের শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন । তিনি যদি ভুল বলে থাকেন, তবে তাঁর ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনেই তা জানতে পারবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা । সরকারের তরফে তেমনই ব্যবস্থা রয়েছে । তাহলে সেটা দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর নজর এড়িয়ে গেল কীভাবে ?
শান্তিদেবীকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। এনিয়ে পুরাতন মালদা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়দীপ মজুমদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। তবে বিষয়টি জানতে পেরে এনিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়।