মালদা, 2 নভেম্বর : বৃদ্ধ আব্বা-আম্মিকে ভুল বুঝিয়ে সমস্ত সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নিয়েছে দুই ছেলে ৷ এবার তাদের নিশানায় বসত বাড়ি ৷ কিন্তু বৃদ্ধ আব্বা-আম্মি নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হাতছাড়া করতে চাননি ৷ তার ফল মিলেছে হাতেনাতে ৷ বাড়ি তাদের নামে লিখে না দেওয়ায় ছেলে ও পুত্রবধূরা তাঁদের প্রায় প্রতিদিনই মারধর করে ৷ খেতেও দেয় না তাঁদের ৷ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারের কাছে ছেলে ও পুত্রবধূদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ তাই বৃদ্ধ এবার দ্বারস্থ হলেন আদালতের ।
মানিকচকের চৌকি সালাবৎগঞ্জে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন 83 বছরের বৃদ্ধ শেখ মোসালিন ৷ সঙ্গে থাকেন তাঁর স্ত্রী আলেহা বিবি ৷ একই বাড়িতে থাকে তাঁদের দুই ছেলে শেখ তাজুদ্দিন, শেখ আনেশ, তাদের স্ত্রী আমিনা বিবি, শেলি বিবি ও আনেশের ছেলে শেখ রাহুল ৷ এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই মূল অভিযোগ বৃদ্ধের ৷ তিনি বলেন, "আমাদের ভুল বুঝিয়ে ছেলেরা পাঁচ বছর আগেই সমস্ত সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নিয়েছে ৷ তাদের এবার লক্ষ্য আমার বাড়ি ৷ কিন্তু সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পর তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করতে শুরু করে তাতে আমরা বুঝে যাই, বাড়ি ওদের নামে লিখে দিলে তারা আমাদের আর বাড়িতে থাকতে দেবে না ৷ তাই আমরা ছেলেদের দাবি মানিনি ৷ এর ফল হয় মারাত্মক ৷ মাস ছয়েক ধরে ওরা আমাদের বাড়ির নলকূপ থেকে জলটুকুও নিতে দিচ্ছে না ৷ ওরা একবার আমাদের বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছিল ৷ পরে লোকজন আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে ৷ পরিস্থিতি দেখে আমাদের বিবাহিতা মেয়ে মাঝেমধ্যে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করে ৷ ফলে এখন কার্যত ভিক্ষা করেই আমাদের দিন কাটছে ৷ আমরা চাই শান্তিতে থাকতে ৷ এর আগে থানায় সব ঘটনা জানিয়েছিলাম ৷ কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ৷ পুলিশ সুপারকেও সব ঘটনা জানিয়েছি ৷ তাতেও কাজ হয়নি ৷ তাই আজ বিচার পেতে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি ৷"
এবিষয়ে বৃদ্ধের আইনজীবী সেন্টু মিঞা বলেন, "এই বৃদ্ধের অবস্থা খুব খারাপ ৷ ওনার দুই ছেলে ও পুত্রবধূ বাড়ির লোভে মারধর করতে থাকে ৷ তাতে শামিল হয়েছে এক নাতিও ৷ বর্তমানে এই বৃদ্ধ দম্পতি কার্যত ভিক্ষা করে দিন কাটাচ্ছেন ৷ গোটা ঘটনা প্রথমে থানা ও পরে পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ তাই তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে জেলা মুখ্য দায়রা বিচারকের কাছে আমরা মামলা রুজু করেছি ৷ সেই মামলা বিচারক গ্রহণ করেছেন ৷ এই ঘটনা সমাজের কাছে অত্যন্ত খারাপ একটি দৃষ্টান্ত ৷ এই বৃদ্ধ দম্পতি যাতে বিচার পান, তার সব ব্যবস্থা আমরা করব ৷"
এদিকে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "বিষয়টি আমি জানতাম না ৷ ওই দম্পতি যদি থানায় গিয়ে থাকেন তবে কেন এক্ষেত্রে মানিকচক থানার পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তা দেখা হবে ৷ একইসঙ্গে ওই দম্পতি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷"