মালদা, 30 অগাস্ট : তবে কি শেষ হাসিটা হাসতে চলেছেন নিহারই? কলকাতা থেকে মালদা ফিরে অনাস্থা ইশুতে তাঁর মুখে ইঙ্গিতপূর্ণ মুচকি হাসি যেন সেই বার্তাই দিচ্ছে । যদিও তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরাতে এখনও এককাট্টা পৌরসভার সিংহভাগ তৃণমূল কাউন্সিলর । এই পরিস্থিতিতে পৌরসভার ভবিষ্যৎ ঝুলেই থাকছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । বর্তমান চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে পৌরসভার 15 জন তৃণমূল কাউন্সিলরের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আজ পৌরসভার দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলেন মালদা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের অন্যতম পর্যবেক্ষক গোলাম রব্বানি ও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর । এখনও তাঁরা সেই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন । এই ঘটনা দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে জানালেও এর পিছনে BJP-র হাত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি রব্বানি সাহেব । তবে এই অনাস্থা প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ কী, তা জানাতে পারেননি তিনি । জানাতে পারেননি মৌসমও।
বুধবার পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন 15 জন তৃণমূল কাউন্সিলর । তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার ও প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরিও । দলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব । বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের বার্তা দিতে জেলাপরিষদের মেম্বার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কৃষ্ণেন্দুবাবুকে । যদিও তিনি নিজেই ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি কৃষ্ণেন্দুবাবুর । তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাসের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীও গতকাল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে । দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই এসব করা হয়েছে বলে মনে করছে জেলা তৃণমূলের একাংশ । এরপরই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি রব্বানি সাহেবকে জেলায় আসার নির্দেশ দেয় শীর্ষ নেতৃত্ব । আজ সেকথা স্বীকারও করেন রব্বানি সাহেব । সকাল 11টা থেকে তিনি পৌরসভার প্রত্যেক দলীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেন । এখনও সেই প্রক্রিয়া চলছে । রব্বানি সাহেবের সঙ্গে রয়েছেন মৌসম নুরও ।
কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলার আগে রব্বানি সাহেব বলেন, "রাজ্য নেতৃত্বে নির্দেশেই আজ আমি এই পৌরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি । তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমি সেই রিপোর্ট রাজ্যে পাঠিয়ে দেব । তবে এই অনাস্থা আনার আগে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে কিছুই জানানো হয়নি। আমাদের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে দলের সভাপতি সুব্রত বক্সি, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম, সাধন পাণ্ডেরা এব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন । দলের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার জন্যই আজ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । দল এই অনাস্থা প্রস্তাবকে ভালো চোখে দেখছে না । তবে তৃণমূলকে বদনাম করতে BJP বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে । এই ঘটনার পিছনেও BJP-র হাত রয়েছে কি না তা দলের জেলা সভানেত্রী ভালো বলতে পারবেন ।"
জেলাপরিষদের মেন্টর পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুবাবুর ইস্তফা প্রসঙ্গে রব্বানি সাহেবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,"দল এব্যাপারে ভালো বলতে পারবে । আজ কৃষ্ণেন্দুবাবুকেও ডাকা হয়েছে। তাঁর কাছেও এনিয়ে আমরা জানতে চাইব । এব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই । আজ এখানে ইংরেজবাজার পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি বৈঠক আগে থেকেই ডাকা ছিল । তবে অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এই বৈঠক আলাদা মাত্রা পেয়েছে । আমরা কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সব জেনে তা উপরমহলে জানিয়ে দেব। পরবর্তী পদক্ষেপ উপরমহলই গ্রহণ করবে । এর বেশি আমি আর কিছু বলতে পারব না ।"
জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, "বুধবার আমরা জানতে পেরেছি, ইংরেজবাজার পৌরসভায় একটি অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে । এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই আমরা মনে করছি । আজকের বৈঠক আগে থেকেই ডাকা ছিল । কিন্তু যেহেতু এর মধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে, তাই আজ আমরা প্রত্যেক কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইব । এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আজ রব্বানি সাহেবকে রাজ্যের প্রতিনিধি করে পাঠানো হয়েছে । উনি বিষয়টি দেখবেন । আমরা সবকিছু জেনে রাজ্য নেতৃত্বকে রিপোর্ট পাঠাব । এব্যাপারে দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে ও দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে । দলের জন্য যেটা ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে । নিহারবাবুর সঙ্গে গতকাল বিধানসভা এনিয়ে আমার কথা হয়েছে । তবে এটা খুব সামান্য ব্যাপার বলেই আমরা মনে করছি । আমার মনে হয় না, এর পিছনে BJP-র কোনও হাত রয়েছে ।"
তবে দলকে অন্ধকারে রেখে এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি মৌসম ।
আজ রব্বানি সাহেব ও মৌসমের মুখোমুখি হওয়ার আগে অনাস্থা প্রস্তাবের স্বাক্ষরকারী কাউন্সিলর বরুণ সরদার বলেন, "আজকের বৈঠকের সঙ্গে পৌরসভার অনাস্থার কোনও বিষয় নেই । দলের জেলা সভানেত্রী এই বৈঠক ডেকেছেন । বৈঠকের পরই বলতে পারব, কী হল । পৌরসভার কাউন্সিলর হয়েও আমরা মানুষকে পরিষেবা দিতে পারছি না । চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে বোর্ড মিটিং ডাকছেন না । আমার ওয়ার্ডেরও অনেক সমস্যা রয়েছে । এসব কারণেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে আমি স্বাক্ষর করেছি । তবে এক্ষেত্রে দল যা বলবে, সেই মতোই চলব । আমরা সবাই তৃণমূলের সৈনিক । তৃণমূলে আছি, থাকব । অন্য কিছু ভাবার কারণ নেই।"
এদিকে আজ কলকাতা থেকে ফিরে ETV ভারতকে নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, "কলকাতায় থাকাকালীন আমি শুনতে পাই, পৌরসভায় আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসা হয়েছে । আজ অফিসে গেলে সেই কাগজটা পাব । এই ঘটনা দল জানে । দল আজ কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসছে । এই প্রেক্ষিতে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই আমার সিদ্ধান্ত । আর গতকাল যে দুই কাউন্সিলর নিজেদের দপ্তর থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁরা এই অনাস্থার প্রতিবাদেই সেই কাজ করেছেন । মূলত প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁদের এই প্রতিবাদ । এটা মনে রাখতে হবে, আমরা তিনজনই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি । তিনজন একসঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি । তাই আমার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে এই রাজনৈতিক ব্যক্তির স্বাক্ষর রয়েছে বলেই দুই কাউন্সিলর ইস্তফা দিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন । আমার ধারণা, আজ জেলা তৃণমূল সভানেত্রী যা করছেন, তা তিনি নিশ্চয়ই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে করছেন । আমিও আজ জেলা সভানেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে যাব । তবে জেলা পরিষদের মেন্টর পদ থেকে কে কীভাবে সরলেন তা আমি বলতে পারব না । এটা আমার বিষয় নয় । আর কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাসের নিরাপত্তারক্ষী কেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তাও আমার জানা নেই । তবে এই ঘটনা নিয়ে আমি কাউকে কিছু জানাইনি । আমার হাতে এখন 15 দিন সময় রয়েছে । সেই সময়ের মধ্যে আমি আস্থার প্রমাণ দিতে পারি। তাই আমি আপাতত স্বাভাবিকভাবেই সব কাজ করতে পারব। তবে এই অনাস্থা প্রস্তাবের পাশা পালটাতে পারে কি না তা আমি বলতে পারব না ।"