মালদা, 9 অক্টোবর : গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার রয়েছে ছুটিতে ৷ অথচ তাঁর কোয়ার্টারে বসে প্রেসক্রিপশন লিখছেন হাসপাতালের নৈশপ্রহরী ৷ বিষয়টি জানতে পেরে আজ ওই হাসপাতালে তদন্তে যান স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা ৷ যদিও তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে এনিয়ে কোনও কথা বলেননি ৷ এদিকে ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে ওই নৈশপ্রহরী ৷ আজ সকাল পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি হাসপাতাল সুপার ৷ কারও ফোনও ধরছেন না তিনি ৷
এই ছবি ধরা পড়েছে গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ সেখানে চিকিৎসা করাতে আসেন রিঙ্কি ভুঁইমালি নামে স্থানীয় এক মহিলা ৷ জরায়ুর টিউমারের সমস্যায় ভুগছেন তিনি ৷ হাসপাতালে এলে কেউ তাঁকে সুপার অঞ্জন রায়ের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন ৷ তাঁকে জানানো হয়, অঞ্জনবাবু এই রোগের ভালো চিকিৎসা করেন ৷ সেকথা শুনে ওই মহিলা সুপারের কোয়ার্টারে আসেন ৷ তিনি জানতেন না 4 সেপ্টেম্বর থেকেই সুপার ছুটি নিয়ে কলকাতা গিয়েছেন ৷ যদিও সেখানে একজন চিকিৎসা করছিলেন ৷ তিনি ওই ব্যক্তিকে সুপার ভেবে তাঁর কাছে নিজের চিকিৎসা করান ৷ ওই ব্যক্তি সরকারি কাগজে তাঁকে প্রেসক্রিপশনও লিখে দেন ৷ কোয়ার্টারের দরজায় থাকা এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন, প্রেসক্রিপশনের ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হবে ৷ ওই ব্যক্তি চিকিৎসককে তুই তোকারি সম্বোধনও করছিল ৷ এতেই ওই মহিলার সন্দেহ হয় ৷ তিনি হাসপাতালে ওই প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসেন ৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের সেই কাগজ দেখান ৷ কথা বলেন হাসপাতালের চার্জে থাকা চিকিৎসক বৃন্দাবন রায়ের সঙ্গে ৷ তখনই সুপারের কোয়ার্টারে ভুয়ো চিকিৎসকের ঘটনা সবার সামনে আসে ৷
ওই মহিলা বলেন, “জরায়ুতে টিউমার থাকায় আমি গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসি ৷ এক ব্যক্তি আমাকে বলে, হাসপাতালের সুপার এই রোগের চিকিৎসা ভালো করেন ৷ আমি তাঁর কোয়ার্টারে এসে দেখি, ভিতরে একজন চিকিৎসা করছেন ৷ আমি তাঁর কাছে গেলে তিনি ভিজ়িট নিয়ে আমাকে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন ৷ কোয়ার্টারের দরজায় থাকা একজন আমাকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বলেন ৷ এতেই আমার সন্দেহ হয় ৷ আমি হাসপাতালে এসে গোটা ঘটনা জানাই ৷”
এদিকে বৃন্দাবনবাবু বলেন, "4 তারিখ থেকে সুপার ছুটিতে গিয়েছেন ৷ আমি শুনেছি, সুপারের কোয়ার্টারে ডাক্তার সেজে কেউ বা কারা রোগীদের চিকিৎসা করছে ৷ আউটডোরের টিকিট ব্যবহার করে প্রেসক্রিপশন লেখা হচ্ছে ৷ ওই মহিলার জরায়ুতে টিউমার রয়েছে ৷ অথচ তাঁকে গ্যাসের ওষুধ লিখে দেওয়া হয়েছে ৷ আমি বিষয়টি গাজোল থানায় জানিয়েছি ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে ৷"
জানা গেছে, হাসপাতাল সুপারের অবর্তমানে তাঁর কোয়ার্টারে চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা করছিল নৈশপ্রহরী সোহেল ৷ তাঁকে সহায়তা করছিল সুপারের কোয়ার্টারের কেয়ারটেকার প্রদীপ নামে এক যুবক ৷ বিষয়টি জানাজানি হতেই হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায় সোহেল ৷ প্রথমে কোয়ার্টারে থাকলেও পরে প্রদীপও সেখান থেকে সরে পড়ে ৷ এই ঘটনার তদন্তে আজ গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে যান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা ৷ কিন্তু ছুটি পেরিয়ে গেলেও অঞ্জনবাবু আজ সকাল পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি ৷ হাসপাতালের পক্ষ থেকে গাজোল থানায় সোহেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, "ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি ৷ তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ হাসপাতাল সুপার আজই গাজোলে ফিরেছেন ৷ তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গাজোলে গিয়েছেন বিভাগের এক কর্তা ৷ আমরা গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি দেখছি ৷"