ETV Bharat / state

Kali Puja 2023: হিন্দু গ্রামে পুজো শুরু করেছিলেন মুসলিম বধূ, তাঁর নামেই 'শেফালি কালীর পুজো' এখন সর্বজনীন

মালদার হবিবপুরের কাছে কেন্দুয়া গ্রামে 40 বছর ধরে হয়ে আসছে 'শেফালি কালীর পুজো' ৷ এক মুসলিম মহিলার হাত ধরে সূচনা এই পুজোর, তাঁর নামেই এখন পরিচিত এই পুজো ৷

Etv Bharat
শেফালি কালীর পুজো
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 10, 2023, 5:00 PM IST

মালদায় শেফালি কালীর পুজো

মালদা, 10 নভেম্বর: ধর্মে নেই, স্বপ্নে আছে ৷ স্বপ্ন থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে মননেও ৷ সেই স্বপ্নাদেশেই 40 বছর আগে কালীপুজো করেছিলেন এক মুসলিম বধূ ৷ প্রথমে বাধা এসেছিল ৷ তাঁর দাবি, মা কালীই সেসব বাধা দূর করে তাঁর কাছ থেকে পুজো নিয়েছেন ৷ তাঁর পুজিত মা কালীর নাম এখন এলাকার ঘরে ঘরে ৷ ‘শেফালি কালীর পুজো’ শুনলেই স্থানীয়দের হাত উঠে আসে কপালে ৷

হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী থেকে বাংলাদেশের রোহনপুরে ঢুকে গিয়েছে সিঙ্গল রেল ট্র্যাক ৷ যেন দুই বাংলার হৃদয়কে বেঁধে রাখার নাড়ি ৷ সেই লাইনের ধারেই মধ্যম কেন্দুয়া গ্রাম ৷ গ্রামের রাস্তাটি রেল লাইনে ধাক্কা খেয়ে স্থবির ৷ ঠিক সেই জায়গায় 40 বছর ধরে হয়ে আসছে শেফালি কালীর পুজো ৷ শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমরাও এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একবার মায়ের থানে মাথা নত করেন ৷ ব্রাহ্মণী নদীর খাঁড়ির ধারের গ্রামটিতে পুরোপুরি হিন্দুদের বাস এখন ৷ রেল ট্র্যাকের পাশে শেফালিদেবীর মাথা গোঁজার জায়গাটি অনেকদিন ধরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ৷ বেঁচে থাকাকালীন স্বামী আবসার শেখ বুলবুলচণ্ডীর একটি চালকলের শ্রমিক ছিলেন ৷ বেশ ক’বছর আগে মারা গিয়েছেন তিনি ৷ বড় ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন ৷ ছোট ছেলে পিন্টু অবশ্য নিজের পরিবারের সঙ্গে মায়ের কাছেই থাকেন ৷ তিনি পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷

এই পুজো প্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন, “শেফালি অনেক আগে ঝাড়ফুঁক করত ৷ গ্রামে কারও অসুখ হলে শেফালির কথামতো চললে রোগ সেরেও যেত ৷ উনি নিজেও একবার অসুস্থ হন, দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও রোগ সারছিল না ৷ তখনই ওর শরীরে মা কালীর ভর নামে ৷ মা ওকে নাকি স্বপ্নাদেশ দেন ৷ তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন ৷ শেষ পর্যন্ত ওর প্রস্তাবে আমরা সায় দিই ৷ সায় দেয় আরও অনেক গ্রামের মানুষও ৷ সেই শুরু ৷ এখন এটা গ্রামের বারোয়ারি পুজো হয়ে গিয়েছে ৷ সবাই এই মাকে শেফালি কালী নামেই চেনে ৷ পুজোর দিন শেফালি নিজেও সমস্ত সময়টা এখানে বসে থাকে ৷ তবে সেদিন বেদির জায়গায় ঢোকে না ৷ ওর ঘাড়েই যে মা কালীর ঝোঁক আসত, সেটা আমরা জানি ৷ এখন তো দূরদূরান্তের মানুষও এখানে পুজো দিতে আসে ৷”

বৈধব্য দশায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিবি থেকে বেওয়া হয়েছেন শেফালি ৷ তিনি বলেন, “আমার অসুখ হল ৷ মা আদেশ দিল, ওর পুজো না করলে আমাকে ভালো করবে না ৷ সবাইকে সেকথা বললাম ৷ অনেকে বিশ্বাস করেনি আমার কথা ৷ তাদের অনেক বুঝিয়ে বিশ্বাস করালাম ৷ মায়ের পুজো করলাম ৷ আমার রোগও সারল ৷ এখন যেখানে পুজো হচ্ছে, সেখানে কিন্তু আমি পুজো শুরু করিনি ৷ আমি বাড়িতেই পুজো শুরু করেছিলাম ৷ রোগ সারার পর এক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশে এখনকার জায়গায় পুজো শুরু করে ৷ এটা শ্মশানকালী ৷ কিন্তু সবাই আমার নামে এই কালীকে শেফালি কালী বলে ডাকে ৷ ”

সংখ্যালঘু সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসাবে হিন্দু গ্রামে কালীপুজো চালু করা শেফালি বেওয়ার পক্ষে যথেষ্টই কঠিন ছিল ৷ তবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা ৷ সেই পুজো এখন সর্বজনীন ৷ মুসলিমরাও এই পুজোয় অংশ নেন ৷ পুজোর পর 14 দিন প্রতিমা বেদিতে থাকে ৷ তারপর শেফালিদেবীর বাড়ির পাশের পুকুরেই মাকে নিরঞ্জন দেওয়া হয় ৷

আরও পড়ুন:

  1. সাড়ে চারশো বছর আগে পাতাল ভেদ করেন দেবী, জানুন সাবর্ণ রায়চৌধুরীর কালীপুজোর অজানা কাহিনী

2. বদ্রীনাথ থেকে বুর্জ খলিফা, বারাসতের কালীপুজোর নজরকাড়া থিম

মালদায় শেফালি কালীর পুজো

মালদা, 10 নভেম্বর: ধর্মে নেই, স্বপ্নে আছে ৷ স্বপ্ন থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে মননেও ৷ সেই স্বপ্নাদেশেই 40 বছর আগে কালীপুজো করেছিলেন এক মুসলিম বধূ ৷ প্রথমে বাধা এসেছিল ৷ তাঁর দাবি, মা কালীই সেসব বাধা দূর করে তাঁর কাছ থেকে পুজো নিয়েছেন ৷ তাঁর পুজিত মা কালীর নাম এখন এলাকার ঘরে ঘরে ৷ ‘শেফালি কালীর পুজো’ শুনলেই স্থানীয়দের হাত উঠে আসে কপালে ৷

হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী থেকে বাংলাদেশের রোহনপুরে ঢুকে গিয়েছে সিঙ্গল রেল ট্র্যাক ৷ যেন দুই বাংলার হৃদয়কে বেঁধে রাখার নাড়ি ৷ সেই লাইনের ধারেই মধ্যম কেন্দুয়া গ্রাম ৷ গ্রামের রাস্তাটি রেল লাইনে ধাক্কা খেয়ে স্থবির ৷ ঠিক সেই জায়গায় 40 বছর ধরে হয়ে আসছে শেফালি কালীর পুজো ৷ শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমরাও এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একবার মায়ের থানে মাথা নত করেন ৷ ব্রাহ্মণী নদীর খাঁড়ির ধারের গ্রামটিতে পুরোপুরি হিন্দুদের বাস এখন ৷ রেল ট্র্যাকের পাশে শেফালিদেবীর মাথা গোঁজার জায়গাটি অনেকদিন ধরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ৷ বেঁচে থাকাকালীন স্বামী আবসার শেখ বুলবুলচণ্ডীর একটি চালকলের শ্রমিক ছিলেন ৷ বেশ ক’বছর আগে মারা গিয়েছেন তিনি ৷ বড় ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন ৷ ছোট ছেলে পিন্টু অবশ্য নিজের পরিবারের সঙ্গে মায়ের কাছেই থাকেন ৷ তিনি পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷

এই পুজো প্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন, “শেফালি অনেক আগে ঝাড়ফুঁক করত ৷ গ্রামে কারও অসুখ হলে শেফালির কথামতো চললে রোগ সেরেও যেত ৷ উনি নিজেও একবার অসুস্থ হন, দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও রোগ সারছিল না ৷ তখনই ওর শরীরে মা কালীর ভর নামে ৷ মা ওকে নাকি স্বপ্নাদেশ দেন ৷ তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন ৷ শেষ পর্যন্ত ওর প্রস্তাবে আমরা সায় দিই ৷ সায় দেয় আরও অনেক গ্রামের মানুষও ৷ সেই শুরু ৷ এখন এটা গ্রামের বারোয়ারি পুজো হয়ে গিয়েছে ৷ সবাই এই মাকে শেফালি কালী নামেই চেনে ৷ পুজোর দিন শেফালি নিজেও সমস্ত সময়টা এখানে বসে থাকে ৷ তবে সেদিন বেদির জায়গায় ঢোকে না ৷ ওর ঘাড়েই যে মা কালীর ঝোঁক আসত, সেটা আমরা জানি ৷ এখন তো দূরদূরান্তের মানুষও এখানে পুজো দিতে আসে ৷”

বৈধব্য দশায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিবি থেকে বেওয়া হয়েছেন শেফালি ৷ তিনি বলেন, “আমার অসুখ হল ৷ মা আদেশ দিল, ওর পুজো না করলে আমাকে ভালো করবে না ৷ সবাইকে সেকথা বললাম ৷ অনেকে বিশ্বাস করেনি আমার কথা ৷ তাদের অনেক বুঝিয়ে বিশ্বাস করালাম ৷ মায়ের পুজো করলাম ৷ আমার রোগও সারল ৷ এখন যেখানে পুজো হচ্ছে, সেখানে কিন্তু আমি পুজো শুরু করিনি ৷ আমি বাড়িতেই পুজো শুরু করেছিলাম ৷ রোগ সারার পর এক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশে এখনকার জায়গায় পুজো শুরু করে ৷ এটা শ্মশানকালী ৷ কিন্তু সবাই আমার নামে এই কালীকে শেফালি কালী বলে ডাকে ৷ ”

সংখ্যালঘু সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসাবে হিন্দু গ্রামে কালীপুজো চালু করা শেফালি বেওয়ার পক্ষে যথেষ্টই কঠিন ছিল ৷ তবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা ৷ সেই পুজো এখন সর্বজনীন ৷ মুসলিমরাও এই পুজোয় অংশ নেন ৷ পুজোর পর 14 দিন প্রতিমা বেদিতে থাকে ৷ তারপর শেফালিদেবীর বাড়ির পাশের পুকুরেই মাকে নিরঞ্জন দেওয়া হয় ৷

আরও পড়ুন:

  1. সাড়ে চারশো বছর আগে পাতাল ভেদ করেন দেবী, জানুন সাবর্ণ রায়চৌধুরীর কালীপুজোর অজানা কাহিনী

2. বদ্রীনাথ থেকে বুর্জ খলিফা, বারাসতের কালীপুজোর নজরকাড়া থিম

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.