মালদা, 9 অগস্ট: নেশার জন্যই খুন করা হয়েছিল রতুয়ায় নাবালককে (Minor Boy Murder Case)। খুনের ঘটনায় মূল দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে আজ ধৃতদের চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হচ্ছে । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম নির্মল মণ্ডল ও কানাই মণ্ডল । দু'জনেরই বাড়ি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর গ্রামে । এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে রতুয়া থানার পুলিশ ।
উল্লেখ্য, শনিবার সাতসকালে কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের মনিপুর গ্রামের একটি জলাশয় থেকে আকাশ ভগত নামে 12 বছরের এক নাবালকের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয় । বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ওই জলাশয় । আকাশের বাবা জগ্গু ভগত পেশায় শ্রমিক । তাঁরা তিন ভাই । আকাশ ছিল সবার ছোট । শুক্রবার রাতে সে ওই গ্রামেরই ভাদুরাম মণ্ডলের বাড়িতে মনসার গান শুনতে গিয়েছিল । রাত আড়াইটে পর্যন্ত সে সেখানে ছিল । কিন্তু তারপর সে আর বাড়ি ফিরে যায়নি । শেষপর্যন্ত পরদিন সকালে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয় । কে বা কারা, কেন তাকে খুন করল, তা নিয়ে ধন্ধে পড়ে যায় পরিবারের লোকজন, এমনকি পুলিশও ।
এরপরেই পুলিশি তদন্তে উঠে আসে নেশার বিষয়টি । পুলিশ জানতে পারে, আকাশ নেশায় আসক্ত ছিল । সেই সূত্রেই তারসঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল নির্মল ও কানাইয়ের । তারাও একই নেশায় আসক্ত । আকাশ প্রতিদিন বিশেষ এক ধরনের আঠার নেশা করত ৷ প্রতিদিন তার ওই আঠার চারটি টিউব লাগত । দাম 100 টাকা । নেশার টাকা জোগাড় করতে মাঝেমধ্যে আকাশ ছোটখাটো চুরিও করত । কিছুদিন আগে সে কানাইয়ের বাড়ির সামনে রাখা একটি ভাঙা সাইকেল চুরি করে বিক্রি করে দেয় । সেকথা জানতে পেরে কানাই তার কাছে সাইকেল ফেরত চায় । সাইকেল না দিতে পারলে আকাশকে টাকা দিতে বলে। না দিলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় । আকাশ তার কথা গ্রাহ্য করেনি ।
আরও পড়ুন: টাকা চেয়ে না-পেয়ে মা কে খুন করল ছেলে
শুক্রবার রাতে আকাশকে মনসার গানের আসরে দেখতে পায় কানাই আর নির্মল । তারা আকাশকে ডাকলেও আসর থেকে সে বেরোয়নি । রাত আড়াইটে নাগাদ গান শেষ হয়ে যাওয়ার পর আকাশকে একা সেখানে বসে থাকতে দেখে কানাই আর নির্মল তাকে সেখান থেকে কাছে একটি আমবাগানে তুলে নিয়ে যায় । সেখানে তারা আকাশকে মারধর করে । আকাশ চিৎকার শুরু করলে তারা তাকে ওই জলাশয়ের কাছে নিয়ে যায় । সেখানে গাঁজা কাটার ব্লেড দিয়ে আকাশের গলা কাটে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ওই ব্লেড দিয়ে আঘাত করে। এরপর কাঁচা পাটের আঁশ পাকিয়ে তারা আকাশকে শ্বাসরোধ করে খুন করে জলাশয়ে ফেলে দেয়। ঘটনার সময় তিনজনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ ৷
এই ঘটনায় পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও জানা গিয়েছে, কানাই আর নির্মল পুলিশি জেরায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে । তারা ছাড়া আর কেউ এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে । সেকারণেই তাদের পুলিশি হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে ।