মালদা, 20 জুলাই : ভিনরাজ্য থেকে এলাকায় ফিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় বাড়ি ঢুকতে পারছেন না কয়েকজন শ্রমিক৷ এই ছবি ধরা পড়ল পুরাতন মালদা পৌর এলাকায়৷
পুরাতন মালদা পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের মীর্জাপুরের বাসিন্দা ছোটু সিংহ৷ কয়েকদিন আগে গুজরাত থেকে এলাকায় ফিরেছেন তিনি ৷ কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে বাড়ি ঢুকতে দেননি ৷ এমনকী বাড়ির সদস্যরাও তাঁকে 14 দিন বাইরে থাকতে বলেন ৷ ঘরে ঢুকতে বাধা পেয়ে দু’দিন এলাকায় একটি দলের কার্যালয়ে ছিলেন তিনি৷ সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি ৷ এখন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চালসাপাড়ার একটি আমবাগানে দিন কাটাচ্ছেন তিনি ৷ সেখানে তিনি একা নন, আরও আট পরিযায়ী শ্রমিককে কোয়ারানটিনে থাকতে হচ্ছে ৷ কারণ, তাঁদেরও বাড়িতে ঢুকতে দেননি এলাকার বাসিন্দারা ৷
এপ্রসঙ্গে ছোটু বলেন, “গুজরাতে সাতমাস থেকে এলাম ৷ সেখানে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে ৷ এখানে ফেরার পরও শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছি ৷ তার কাগজপত্র পাড়ার লোককে দেখিয়েছি ৷ কিন্তু তারপরও পাড়ার লোক আমাকে 14 দিন বাইরে থাকতে বলেছে ৷ একই কথা বাড়ির সদস্যদেরও ৷ এসব শুনে থানায় যোগাযোগ করি ৷ থানার এক অফিসার বলেন, তুমি বাড়ি যাও ৷ কাউন্সিলরের সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে গেছে৷ বাড়িতে গিয়ে সেকথা বললেও পরিবারের সদস্যরা সাফ জানিয়ে দেয়, আমাকে 14 দিন বাইরেই থাকতে হবে ৷ এরপর মীর্জাপুরে CPM পার্টি অফিসে দু’দিন কাটাই ৷ কিন্তু সেখানে থাকা নিয়েও এলাকার লোকজন অত্যাচার শুরু করে ৷ বাধ্য হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যাই ৷ এরপর বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এই বাগানে আশ্রয় নিয়েছি ৷ পরিবারের কথা চিন্তা করেই ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছিলাম ৷ আর এখন বাড়ির লোকজনই আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না ৷ এখন যাদের কোরোনা হচ্ছে, তাদেরও বাড়িতে রাখা হচ্ছে ৷ তাহলে সব জায়গায় শারীরিক পরীক্ষার পরও আমরা বাড়িতে থাকতে পারব না কেন? আমরা কি এতই অস্পৃশ্য?”
ছোটুর স্ত্রী জবা সিংহ বলেন, “গুজরাত থেকে ফেরার পর বাড়ির লোক কিংবা পাড়া পড়শিরা স্বামীকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না ৷ ও বাইরে থেকে এসেছে ৷ তাই সবাই ভাবছে ওর কোরোনা হয়ে গিয়েছে৷ অথচ গুজরাত ও মালদায় ওর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে ৷ কোরোনা ধরা পড়েনি ৷ কোরোনা না হওয়া সত্ত্বেও ওরা কেন বাইরে থাকবে সেটাই আমার প্রশ্ন ৷ এখন তো যাদের কোরোনা হচ্ছে, তারাও বাড়িতে থাকছে ৷ আমরা গরিব বলেই কি এই দশা ? বিষয়টি আমি কাউন্সিলরকে বলেছিলাম ৷ তিনি কোনও ব্যবস্থা করে দেননি ৷ পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম ৷ তবু কোনও ব্যবস্থা হয়নি ৷ 11 দিন ধরে বাড়ির বাইরেই রয়েছে স্বামী ৷”
এপ্রসঙ্গে পুরাতন মালদা পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ি কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি বাইরে রয়েছি ৷ ওই পরিযায়ী শ্রমিকের কথা শোনার পর কয়েকজনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম ৷ তাঁরা কী ব্যবস্থা নিতে পেরেছে জানি না ৷ আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি ৷” এদিকে পৌরসভার প্রশাসক কার্তিক ঘোষ বলেন, “সব কিছু হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ কোরোনা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বার বার প্রচার করা হচ্ছে ৷ কিন্তু মানুষজন এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না ৷ সেকারণেই এমন ঘটনা ঘটছে ৷ যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি ৷ ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷”