মালদা, 19 অগস্ট : এমনটা যেন হওয়ারই ছিল । নতুন দায়িত্ব পেয়ে পুরাতন মালদায় গিয়েই কর্মীদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়লেন পুরাতন মালদা শহর তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস । ক্ষোভের আঁচ পেয়ে তিনি বৈঠক না করেই ফিরে যান । এনিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি । তবে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত যে সহজে মানবেন না তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ কর্মীরা । গতকাল রাতে ঘটনাটি ঘটে পুরাতন মালদা শহর তৃণমূল কার্যালয়ে ।
অতি সম্প্রতি রাজ্যের সব জেলার সঙ্গে মালদা জেলাতেও দলের খোলনালচে বদলে ফেলে শাসকদল । জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী পদ থেকে মৌসম নূরকে সরিয়ে দেওয়া হয় ৷ জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসকেও তাঁর পদ থেকে সরানো হয় । তাঁকে পুরাতন মালদা শহর তৃণমূলের সভাপতি করে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব । সূত্রের খবর, দলের এই সিদ্ধান্তে মুষড়ে পড়েন প্রসেনজিৎ । ধাতস্থ হতে তাঁর কিছুটা সময় লাগে । এরপরেই গতকাল রাতে তিনি পুরাতন মালদা শহর তৃণমূলের বৈঠক ডাকেন ।
নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠকে উপস্থিত হন নয়া শহর তৃণমূল সভাপতি । তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন শহর তৃণমূল সভাপতি বিভূতিভূষণ ঘোষ, প্রাক্তন ও বর্তমান পৌর প্রশাসক কার্তিক ঘোষ ও বশিষ্ঠ ত্রিবেদী, নবরঞ্জন সিনহা সহ আরও অনেকে । উপস্থিত ছিলেন শতাধিক তৃণমূল কর্মীও । প্রসেনজিৎ কিছু বলতে গেলেই কর্মীরা তাঁকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । গো ব্যাক স্লোগানও ওঠে । প্রসেনজিৎ সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, দল তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছে । তাঁর পদের অবনতি হয়েছে । তবু দলের সিদ্ধান্ত তিনি মাথা পেতে নিয়েছেন । যদিও দলীয় কর্মীরা বিক্ষোভ থেকে সরে আসেননি ৷ অগত্যা সেখান থেকে ফিরে যেতে হয় শহর তৃণমূল সভাপতিকে । তাঁর অবর্তমানেও কর্মীরা সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান । শেষ পর্যন্ত উপস্থিত নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ।
আরও পড়ুন : Plane Hijack Threat: বিমান হাইজ্যাকের হুমকি ফোন, নিরাপত্তার কড়াকড়ি কলকাতা বিমানবন্দরে
বিক্ষোভে সামিল উজ্জ্বল ঘোষ নামে এক কর্মী বলেন, "ক’দিন আগে আমাদের শহর সভাপতি এবং পৌর প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়েছে । শহর তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মালদা শহরের প্রসেনজিৎ দাসকে । আমাদের শহর থেকে কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হলে আমরা বেশি আনন্দিত হতাম । যাঁকে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি আগে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি ছিলেন । সাংগঠনিক কাজকর্ম দূরের কথা সেই সময় আমরা তাঁকে এই এলাকায় দেখতেও পাইনি । তাই দলের কাছে আমাদের আবেদন এই শহর থেকেই শহর সভাপতি নির্বাচিত করা হোক । তাতে দলের ভাল হবে ।"
কর্মীদের বিক্ষোভ নিয়ে বলতে গিয়ে প্রাক্তন সভাপতি বিভূতিভূষণ ঘোষ এখনও নিজেকে সভাপতি হিসাবেই দাবি করে বসেন । তিনি বলেন, "এখানে কোনও গন্ডগোল হয়নি । নতুন সভাপতির নির্দেশে আমরা বৈঠক ডেকেছিলাম । কর্মীরা তাঁর উপস্থিতিতে কিছু কথা বলেছেন । রাজ্য নেতৃত্ব এখানে নতুন সভাপতি ঘোষণা করেছে । এই পৌরসভার 85 হাজার মানুষের বক্তব্য, এই এলাকার কাউকে কি সভাপতি করা যেত না ? পাশের শহর থেকে একজনকে সভাপতি করতে হল ! এনিয়ে কর্মীদের মনে কিছু ক্ষোভ রয়েছে । সেটাই তাঁরা এখানে প্রকাশ করেছেন ।"
আরও পড়ুন : Lakshmi Bhandar: টাকার বিনিময়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম ফিলআপ, অভিযুক্তকে ধরলেন গৌতম দেব
গতকাল রাতের এই ঘটনা নিয়ে আজও আলোচনা চলছে শাসকদলের অন্দরমহলে । পুরাতন মালদা যুব তৃণমূল সভাপতি শ্রবণ গঙ্গোপাধ্যায় আজ বলেন, "সারা রাজ্যের সঙ্গে এখানেও প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে । প্রসেনজিৎ দাস শহর সভাপতি হয়েছেন । কার্তিক ঘোষের জায়গায় পৌর প্রশাসক হয়েছেন বশিষ্ঠ ত্রিবেদী । এনিয়ে পার্টি অফিসে কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে । সেটা না হলেই ভাল হত । এটা কাম্য ছিল না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সবাইকে মেনে নিতে হবে । পরবর্তীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে ।"