মালদা, 3 ডিসেম্বর : শিক্ষা দপ্তরকে কিছু না জানিয়েই শহরের বুকে থাকা সরকারি স্কুল ভেঙে ফেলা হয়েছে । সেই খবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন স্কুলের দুই শিক্ষিকা । এই খবর পেয়ে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থানে তদন্তে পাঠান সাব ইন্সপেক্টর অফ স্কুলকে । তাঁর তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান গোটা বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আনেন । প্রশাসনের নির্দেশে তিনি এনিয়ে ইংরেজবাজার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । গোটা প্রক্রিয়াটাই শেষ করা হয় একদিনে । এ নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে মালদা শহরের কালীতলা এলাকা । এখানকার কাউন্সিলর রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি । তিনি গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান । আজ তিনি এ নিয়ে দেখা করেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে । তাঁকে ঘটনাস্থান পরিদর্শনে নিয়ে আসেন কৃষ্ণেন্দুবাবু । চেয়ারম্যানের কাছে শিক্ষিকাদের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ করেন । যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি । তবে এই ঘটনা যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে শহরে ঝড় তুলতে চলেছে তা নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত নেই ।
ইংরেজবাজার পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের কালীতলায় 1969 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ছাত্রবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয় । প্রায় দু'কাঠা জমির উপর গড়ে উঠেছিল স্কুলবাড়ি । কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বাড়িটি ভেঙে পড়তে শুরু করে । বর্তমানে সেই স্কুলে 38 জন পড়ুয়া রয়েছে । রয়েছেন দু'জন শিক্ষিকা । অভিযোগ, সম্প্রতি কেউ বা কারা শিক্ষা দপ্তরকে না জানিয়ে স্কুল বাড়িটি ভেঙে ফেলে । গত 1 ডিসেম্বর স্কুলের শিক্ষিকা কাকলি চক্রবর্তী ও ইন্দ্রাণী রায় বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের নজরে নিয়ে আসেন । সেদিনই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য ইংরেজবাজার শহর সার্কেলের সাব ইনস্পেক্টর অফ স্কুলস তুষারকান্তি রায়কে নির্দেশ দেন জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুনীতি সাঁপুই । এসআই ওইদিনই তাঁর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলে চেয়ারম্যান সেই রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেন । প্রশাসনের নির্দেশে 1 অক্টোবরই ইংরেজবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন চেয়ারম্যান । পুলিশের তরফে বিতর্কিত জায়গায় কোনও কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয় । যদিও পরদিন সেখানে পুরোনো ইট সরানোর কাজ বহাল ছিল ।
কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি এবিষয়ে বলেন, "স্কুলটি অনেক পুরোনো । সিদ্ধার্থ শংকর রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে অর্গানাইজ়ড স্কুল হত । তেমনই একটি স্কুল এখানে হয়েছিল । কয়েকজন শিক্ষক নিজেদের জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন । পরে স্কুলের নামে ওই শিক্ষকরা পাশেই একটি জায়গা কিনে রেখেছিলেন । আমার রাজনৈতিক জীবন প্রায় 47 বছরের । 25 বছর আমি ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর । আজ পর্যন্ত আমি ওই স্কুলের জন্য কোনও সরকারি বরাদ্দ দেখিনি । অথচ অন্য সব স্কুলে সেই বরাদ্দ করা হয়েছে । বয়সের ভারে পুরোনো স্কুলবাড়িটি ভেঙে পড়েছে । আগে সেখানে ভোটের বুথ করা হত । কিন্তু এখন সেই বুথ ওই স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । স্কুলে যেসব গাছ ছিল, সেসব শিক্ষিকারা কেটে ফেলেছেন । আমি যখন স্কুল বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর শুনি, তখন এলাকার একজনকে স্কুলের নিজস্ব জায়গায় একটি বাড়ি তৈরি করে দিতে বলি । এসআই এখানে এসে সবকিছু খতিয়ে দেখে গিয়েছেন । শিক্ষিকারাও দেখেছেন । তারপরেও কেন এই অভিযোগ করা হচ্ছে, আমি জানি না । সম্প্রতি পুরোনো স্কুলবাড়িতে চুরি হয়েছিল । চোরের দল স্কুলের স্টোররুমও ভেঙে দিয়েছিল । তারপরেও স্কুলে যেসব জিনিস ছিল, সেগুলি নতুন বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । এক্ষেত্রে আমাকে খাটো করার চেষ্টা চলছে । আমি যেখানে জানানোর, সেখানে সব জানাচ্ছি । এদের চক্রান্তটা অনেক বড়ো । সবক্ষেত্রে চুরি চলছে । দরকার পড়লে আমি খোদ মন্ত্রীকেও বিষয়টি জানাব । পরিকল্পনা ছাড়া সবকিছু একদিনে হয় কীভাবে ?" আজ নিজেই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে যান কৃষ্ণেন্দুবাবু । তাঁকে একাধিক অভিযোগ করেন তিনি । চেয়ারম্যানকে নিয়ে আসেন ঘটনাস্থানে । পুরানো জায়গা ও স্কুলের নতুন বাড়ি চেয়ারম্যানকে ঘুরে দেখান তিনি । তবে এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে রাজি নন সুনীতিবাবু । তাঁর একটাই বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানানোর অধিকারী নন তিনি । তিনি এনিয়ে কিছুই বলবেন না ।