মালদা, 23 জুলাই : জলই জীবন । কিন্তু সেই জলেই যদি মিশে থাকে বিষ ? দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রশ্ন মালদা শহরে । ইতিমধ্যে প্রমাণিত, এই শহরের মাটির নীচে সঞ্চিত জলে মিশে রয়েছে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের মতো বিষ । সেই বিষ জলই কার্যত পান করে চলেছে শহরবাসী । এখনই হয়তো তার জন্য ভয়ানক কোনও ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে শহরে শুরু হতে পারে আর্সেনিকোসিসের প্রাদুর্ভাব । বিষ মেশানো পানীয় জল থেকে দূরে থাকতে দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজবাজার পৌরসভার কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে শহরের মানুষ । দাবি তুলেছে, শহরে সরবরাহ করা হোক আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল । বাম আমলে 2003 সালে এই শহরে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় । কিন্তু সেই আমলে এই প্রকল্প লালফিতের ফাঁসে আটকে যায় । পরবর্তীতে তৃণমূল আমলে এমন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ঠিক । তবে 10 বছরেও সেই প্রকল্প চালু হয়নি । এই সময়ের মধ্যে শহরপাড়ের মহানন্দা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে । ভোট এসেছে, ভোটও গিয়েছে । পানীয় জলের সমস্যা ইশু হয়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের । কিন্তু আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল শহরবাসীর কাছে খুড়োর কল হয়েই থেকে গিয়েছে । কবে পৌর নাগরিকরা বিষ মেশানো পানীয় জল থেকে মুক্তি পাবে, অজানা সবার ।
রাজ্যের প্রাচীন পৌরসভাগুলির মধ্যে অন্যতম ইংরেজবাজার । বয়স হল 152 বছর । আয়তন 13.25 বর্গ কিলোমিটার । ওয়ার্ড রয়েছে 29 টি । 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী এই শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা 2 লাখ 16 হাজার 83 জন । তবে এই মুহূর্তে শহরে ভোটার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ । অর্থাৎ জনসংখ্যা পেরিয়েছে 3 লাখের গণ্ডি । এই শহরের প্রধান সমস্যা বিশুদ্ধ পানীয় জল । এই মুহূর্তে পৌরসভার 62 টি পাম্প ভূগর্ভ থেকে জল উত্তোলন করে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করে । কিন্তু সেই জল শোধন করার ব্যবস্থা নেই । তার উপর প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ জল তুলে নেওয়ায় দ্রুতগতিতে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর । শহরের ভূগর্ভস্থ জলে যে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইড মিশে রয়েছে, অনেকদিন আগেই তার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা । পৌরসভার পক্ষ থেকেই সেই জল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । এই পরিস্থিতিতে শহরবাসী দাবি তুলেছিল আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের । 2003 সালে তেমন একটি প্রকল্প গৃহীতও হয় । সেই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, গঙ্গার জল পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরে নিয়ে আসা হবে । মাঝামাঝি কোনও জায়গায় তৈরি করা হবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট । কিন্তু সেই উদ্যোগ ফাইলের ফাঁস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি । এর মধ্যেই রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় । তৃণমূলের আমলে ফের এই দাবি ওঠে শহরে । তৎকালীন পৌরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির উদ্যোগে কেন্দ্রের জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনে এই প্রকল্প পাঠানো হয় । প্রকল্পটি সেখানে গৃহীতও হয় । প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয় প্রায় 41 কোটি টাকা । শেষ পর্যন্ত 2011 সালে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ । পরবর্তীতে রাজ্য সরকারও এই প্রকল্পে অর্থ সাহায্য করে । বর্তমানে এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে 103 কোটি 87 লাখ 39 হাজার টাকা ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রায় 10 বছর ধরে এই প্রকল্পে ইংরেজবাজারের নিমাসরাইয়ে মহানন্দা নদীতে তৈরি হয়েছে ইনটেক পয়েন্ট । নদী থেকে তোলা জল পরিশুদ্ধকরণের জন্য পাঠানো হবে সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের দৈবকিপুরে । সেখানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির কাজও প্রায় শেষ । তবে এখনও নদীর জল প্ল্যান্টে পাঠানোর জন্য পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়নি । ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পরিশুদ্ধ জল শহরে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য নতুন পাঁচটি ওভারহেড রিজ়ার্ভার তৈরি করা হয়েছে । এর সঙ্গে পুরোনো তিনটি রিজ়ার্ভারও সংস্কার করা হয়েছে । তবে নদী থেকে জল তুলে তা ট্রিটমেন্ট করার জন্য শহরের উলটোদিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে প্ল্যান্ট তৈরি করা হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । এর জন্য নদী থেকে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে জল পাঠানোর জন্য 6 হাজার 300 মিটার পাইপলাইন বসাতে হচ্ছে । প্ল্যান্ট থেকে শহরের রিজ়ার্ভারগুলিতে জল সরবরাহ করার জন্য 17 হাজার 300 মিটার পাইপলাইন বসছে । ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য 1 লাখ 34 হাজার 800 মিটার । এর প্রায় 82 শতাংশ কাজ হয়েছে । চলতি বছরের মার্চ মাসে এই প্রকল্প চালু করার কথা থাকলেও তা ফের পিছিয়ে কাজ শেষ করার সময়সীমা ডিসেম্বর করা হয়েছে । যেমনভাবে আগেও বারবার এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে । জানা যাচ্ছে, বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ । এর মধ্যে রয়েছে রেলের জমি সমস্যা । তার জন্য ইতিমধ্যে রেল কর্তৃপক্ষকে প্রায় 2 কোটি 32 লাখ টাকা জমা দিয়েছে পৌরসভা । ইনটেক পয়েন্ট ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে ট্রান্সফরমার বসানো সহ আরও কিছু কাজের জন্য বিদ্যুৎ বন্টন কম্পানিকে দেওয়া হয়েছে প্রায় 1 কোটি 66 লাখ টাকা । কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে মূল পাইপলাইন বসানোর 78 শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে । তবে এর মধ্যেই এগিয়ে আসছে আরও একটি পৌর নির্বাচন। সেই ভোটেও এই প্রকল্প যে ইশু হতে চলেছে, তা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথাতেই পরিষ্কার ।
BJP-র জেলা সভাপতি গোবিন্দ্রচন্দ্র মণ্ডল গোটা ঘটনার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের নিষ্পৃহতাকেই দায়ি করেছেন । তিনি বলেন, "আমি 2000 থেকে 2005 সাল পর্যন্ত পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম । 2003 সালে আর্সেনিকমুক্ত জল শহরে নিয়ে আসার জন্য আমরা তৎকালীন বাম সরকারের আমলে ব্যবস্থা করেছিলাম। সেই সময় 42 লাখ টাকা অনুমোদন হয়েছিল । কিন্তু টাকা আসতে দেরি হয় । পরবর্তী বোর্ডের আমলে সেই টাকা ঢোকে । কিন্তু 18 বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শহরে সেই জল ঢোকেনি । তৃণমূল সরকারের আমলে কয়েকটা ট্যাংক হয়েছে, কিছু পাইপ বসেছে । কিন্তু জল আসেনি । এটা তৃণমূল সরকারেরই ব্যর্থতা । এখানে তৃণমূলের হয়ে যাঁরা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেছেন, তাঁরা শুধু বিষয়টিকে ইশু করে মানুষকে ধাপ্পা দিয়েছেন । এই প্রকল্প এখন মানুষের খুড়োর কল । 23 নম্বর ওয়ার্ডের ভূগর্ভস্থ জলে ইতিমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে । মিলেছে ফ্লোরাইডও । মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। মানুষ জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। পাশের পুরাতন মালদা পৌরসভা অনেক পরে কাজে হাত দিয়ে মানুষের বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত জল সরবরাহ করছে । আর এরা নিজেদের ভাগ নিয়ে মারামারি করতে ব্যস্ত ।"
CPI(M)-এর জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের বক্তব্য, "বাম আমলে তৎকালীন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রী গৌতম দেব মানিকচকের শংকরটোলা ঘাট থেকে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল মালদা শহরে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন । তখনও এই পৌরসভার ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। কিন্তু তাদের অপদার্থতায় সেই সময় রিজ়ার্ভার তৈরি করা যায়নি । এখন বারবার এই প্রকল্পকে মানুষের সামনে খুড়োর কলের মতো তুলে ধরা হচ্ছে । আর মানুষ এখনও বিষ মেশানো জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে । যাদের পয়সা আছে তারা জল কিনে খাচ্ছে । কিন্তু গরিব মানুষের সেই ক্ষমতা নেই । সারা পৃথিবী জানে, ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে । তাই ভূপৃষ্টের জল ব্যবহার করতে হবে। বাম পরিচালিত পুরাতন মালদা পৌরসভা 2010 সালেই সেখানে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্প চালু করে দেয়। পাশের পৌরসভা সেই কাজ করতে পারলে এখানে হবে না কেন? আসলে এখানে তৃণমূলের যেই চেয়ারম্যান থাকুন না কেন, তাঁরা কেউ এই প্রকল্প শেষ করার উদ্যোগ নেননি । আগামীতে এই শহরের পানীয় জলের সমস্যা বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যাবে। আসলে এই সমস্ত বড় প্রকল্পে টাকাপয়সার প্রচুর লেনদেন হয়। তার কোনও প্রমাণ থাকে না । আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখানকার শাসকদলের নেতারা মানুষের স্বার্থের চেয়ে অন্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাই মানুষের কোনও লাভ হচ্ছে না। যাদের লাভ হওয়ার কথা, তাদেরই লাভ হচ্ছে । আমরা সব নজরে রাখছি । সময় হলেই পদক্ষেপ নেব ।"
শুধু বিরোধীরা নয়, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন পৌরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরিও। তিনি বলেন, " যতদূর মনে পড়ছে, 2015 সালে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্পে শহরের আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাই। কেন্দ্র থেকে প্রতিনিধিদল এখানে আসে। সব কিছু খতিয়ে দেখে তারা এই প্রকল্প অনুমোদন করে। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন প্রকল্পের সিংহভাগ কাজই শেষ করে দিয়েছিলাম । কিন্তু দলের নির্দেশে আমাকে চেয়ারম্যানের চেয়ার থেকে পদত্যাগ করতে হয়। শুভেন্দুবাবু দায়িত্ব নিয়ে সেই চেয়ারে এক জাগলারকে বসিয়েছেন । এখনও পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব নিয়ে পাইপলাইন বসানোর কাজটুকুও করতে পারেননি। গোটা প্রকল্পটাকেই বিশ বাঁও জলের নীচে ঠেলে দিয়েছেন । সবসময় হাত পেতে থাকলে কাজ হয় না । হাতটাকে উপুরও করতে হয় । সবসময় পাতা হাত দেখতে দেখতে এখন আর কেউ কাজ করতে চাইছে না ।”
যদিও এনিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতার কথা শুনতে রাজি নন পৌরসভার প্রশাসক নীহাররঞ্জন ঘোষ । তিনি বলেন, "আমি যতদূর জানি, এই প্রকল্প অনেক আগেই অনুমোদন পায় । দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এই প্রকল্পেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম । আমরা এর কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি । কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের বাধায় আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না । রেলের কিছু জমিতে আমাদের পাইপলাইন নিয়ে যেতে হবে । সেই অনুমতি পেতে আমাদের প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা তারা দাবি করে । আমরা সেই টাকা মিটিয়ে দিয়েছি। দৈবকিপুরে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজও শেষ । তবে ওই জায়গায় কেন সেই প্ল্যান্ট করা হল তা আমার জানা নেই । সেখানেও রাস্তা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। সেটা মিটে গিয়েছে। এই কাজে বাইরের ঠিকাদার সংস্থা কাজ করে । কোরোনা আবহে তারা কাজ করতে পারছে না । ফলে কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা দ্রুত এই কাজ শেষ করতে পারব ।"
কিন্তু শহর পরিশ্রুত পানীয় জল পাবে কবে ? উত্তর খুঁজছে শহরবাসী । 25 নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দ পার্কের বাসিন্দা আরাধনা দাস বলেন, "আমাদের বাড়িতে এই পানীয় জল পৌঁছোয়নি । তিন কিলোমিটার দূর থেকে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল নিয়ে আসতে হয়। আমরা শুনেছি, মাটির নীচের জলে আর্সেনিক মিশে রয়েছে । ফলে একটা আতঙ্ক আমাদের সবসময় তাড়া করে। আর্থিক, না কি রাজনৈতিক, কী কারণে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে জানি না। তবে আমরা চাই, দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হোক। মানুষ বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল পাক ।" 12 নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচর এলাকার বাসিন্দা বিন্দু মল্লিক বলেন, "অনেকদিন ধরে পাইপগুলো রাস্তায় রাস্তায় পড়ে রয়েছে । এই জল যদি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া যেত, তবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বাঁচতে পারত । আমাদের পয়সা দিয়ে জল কিনে খাওয়ার সামর্থ নেই। এখন আমরা ভূগর্ভস্থ জলই পান করছি। এই জল পান করে অনেকেই পেটের রোগে ভুগছে। কোরোনা আবহে ওষুধ কিনতে গেলে খাবারে টান পড়ে । অনেকদিন ধরেই শুনছি, এই জল চালু হচ্ছে, হবে । তবে এখনও এই জল চালু হল না কেন জানি না। কবে চালু হবে সেটাও অজানা। শহরের অনেক জায়গায় পাইপলাইনও বসেনি ।"