মালদা, 12 সেপ্টেম্বর: পঞ্চায়েত নির্বাচনের (West Bengal Panchayat Election 2023) আগে মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসে (Malda TMC) বিস্ফোরণ ! দলের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটার অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মনোজ রাম ৷ তাঁর নিশানায় এলাকার দলীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ! পদত্যাগপত্র ডাকযোগে জেলা তৃণমূল সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷ এ নিয়ে দলের জেলা সভাপতি কোনও মন্তব্য না করতে চাইলেও স্থানীয় বিধায়ক ও অঞ্চল চেয়ারম্যান তাঁর পদত্যাগকে পাত্তা দিতে রাজি নন ৷
কিছুদিন আগেও চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছিলেন মনোজ রাম ৷ তখন থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল, ওই এলাকার দীর্ঘদিনের পুরনো এই তৃণমূল নেতা দল ছাড়তে পারেন ! শেষ পর্যন্ত সেটাই ঘটেছে ৷ পদত্যাগের চিঠি নেতৃত্বকে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়-সহ ঘাসফুলের সমস্ত পোস্টার, ব্যানার, পতাকা নিজেই সরিয়ে ফেলেছেন ৷ আপাতত অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন না বলেও দাবি করেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, শ্রমির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ কাউন্সিলরের
এই প্রসঙ্গে মনোজ বলেন, "এই দলে কোনও গণতন্ত্র নেই ৷ দলে যা ইচ্ছে তাই চলছে ৷ গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীতে দল ভরে গিয়েছে ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই ! দলে কেউ কাউকে মানেন না ৷ একজনের সঙ্গে অন্যজনের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে কিছু বললে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখিয়ে দেন ৷ তাঁর আবার দেখা পাওয়া যায় না ৷ রাজ্য থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত শুধু লবিবাজি চলছে ! এখানকার বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ টাকার বিনিময়ে পদ বিলি করছেন ! কিছু বলতে গেলেই বলছেন, তিনি তাঁর ইচ্ছা মতো কাজ করবেন ৷ তাতে কেউ দল করলে করুক, না হলে দল থেকে বেরিয়ে যাক ৷ 2007 সালে মাত্র তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আমি দল শুরু করেছিলাম ৷ আজ অনেক দুঃখ নিয়ে দল ছাড়তে হয়েছে ৷ খুব শান্তিতে আছি ৷ এখনই অন্য কোনও দলে যোগ দেব না ৷ এ নিয়ে পরে ভাবা যাবে ৷ তবে মানুষ কিন্তু বুঝে গিয়েছে ৷ এই দল আর চলবে না ৷"
এদিকে এ নিয়ে বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের বক্তব্য হল, "দলে কে থাকবেন, কে থাকবেন না, সেটা তাঁর নিজের বিষয় ৷ তিনি দল ছেড়েছেন শুনেছি ৷ তবে কেন ছেড়েছেন, তা জানি না ৷ এ নিয়ে দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে ৷ এর জন্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের উপর কোনও প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না ৷"
তৃণমূল কংগ্রেসের হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, "যাঁরা তৃণমূল ছাড়েন, তাঁরা পাগল ! একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেক বড় বড় নেতা দল ছেড়েছিলেন ৷ ভোটের পর তাঁরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পা ধরে ফের দলে ফিরে এসেছেন ৷ ওই নির্বাচনেও মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় 213 আসনে জিতেছেন ৷ যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত কিংবা বিধায়ক ও নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলছেন, তাঁরা পাগলের প্রলাপ বকছেন ৷ আমরা চাইছি, এসব ছাঁট মাল দল থেকে বেরিয়ে যাক ৷"