ETV Bharat / state

Malda Girl in NCA: স্বপ্নপূরণের পথে একধাপ ! দুরন্ত স্প্রিন্টে এনসিএ-তে মালদার রাসমণি

author img

By

Published : Apr 13, 2023, 9:11 PM IST

ছোটবেলা থেকেই মেয়ে আঁকড়ে ধরেছিল ব্যাট-বল । পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাবাও । নববর্ষে সেই পরিশ্রমেরই উপহার পেল রাসমণি দাস । চাঁচলের রাসমণি এখন যেন সত্যিই রানি । জেলার ছোট্ট মাঠ থেকে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়েছে সে ।

Etv Bharat
দুরন্ত স্প্রিন্টে এনসিএ-তে মালদার রাসমণি
দুরন্ত স্প্রিন্টে এনসিএ-তে মালদার রাসমণি

মালদা, 13 এপ্রিল: এখন সে যেন সত্যিই রানি ৷ শুধু চাঁচলের নয়, গোটা জেলার ৷ ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে মালদার গর্ব বাড়িয়েছে রাসমণি দাস ৷ তার কাছ থেকে নববর্ষের এমন উপহার পেয়ে আপ্লুত সবাই ৷ এমনকী পুলিশও ৷ তাই চাঁচল থানায় তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছেন পুলিশকর্মীরা ৷

16 বছরের রাসমণি চাঁচলের রানি দাক্ষায়নী গার্লস হাইস্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্রী ৷ বাবা রবীন্দ্রনাথ দাস লটারি বিক্রেতা ৷ একমাত্র সন্তানের ক্লাস ফাইভ থেকেই ক্রিকেটের আগ্রহ দেখে রবীন্দ্রনাথবাবু তাকে নিয়ে যান স্থানীয় ক্রিকেট প্রশিক্ষক রাজেশ দাসের কাছে ৷ তখন রাজেশবাবুর কাছে কোনও মেয়ে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিত না ৷ ফলে তিনি প্রথমে সামান্য দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৷ তবে দ্বিধা কাটিয়ে ক্রিকেটার রাসমণিকে গড়ার কাজে নেমে পড়েন তিনি ৷ টানা সাড়ে তিন বছর প্রশিক্ষণের শেষে দরজা খুলে যায় বোলার রাসমণির ৷ অনুর্ধ্ব 19 স্তরে বাংলা দলে সুযোগ পায় সে ৷ চলে যায় কলকাতায় ৷ সেখানে ঝুলন গোস্বামীর মতো কিংবদন্তির কাছে বোলিং শেখার সুযোগ মেলে ৷ এবার ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে সে ৷ সেখানে রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো ক্রিকেটাররাও রাসমণিদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন ।

আগামী 17 এপ্রিল থেকে 11 মে পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানগ্রামে অনুর্ধ্ব 19 ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ট্রেনিং ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে ৷ তার আগে কয়েকদিনের ছুটি পেয়ে বাড়ি এসেছে রাসমণি ৷ সেই খবর পেয়ে গতকাল রাতে তাকে থানায় ডেকে পাঠান চাঁচলের আইসি পূর্ণেন্দুকুমার কুণ্ডু ৷ পুলিশের তরফে রাসমণিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ৷

রাসমণি জানায়, “আমি অনুর্ধ্ব 19 বিভাগে রাজ্যের হয়ে খেলি ৷ গত 3 এপ্রিল সিএবি'র তরফে আমাকে জানানো হয়, আমি ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে সেই ক্যাম্প হবে ৷ 16 তারিখ কলকাতা থেকে ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেব ৷ তবে কারা আমাদের ট্রেনিং দেবেন তা এখনও পুরোপুরি জানি না ৷ শুনেছি ভিভিএস লক্ষ্মণ থাকবেন ৷ আমি ধাপে ধাপে ভাবতে চাই ৷ এনসিএ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়া আমার কাছে স্বপ্নের মতো ৷ সেখানে আমাকে সফল হতে হবে ৷ তারপরের লক্ষ্য তার পরেই ঠিক করব ৷ আজ যে জায়গায় পৌঁছেছি, তার পিছনে আমার পরিবারের অবদান অনেক ৷ আমার প্রথম কোচ রাজেশ স্যার আমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন ৷ তিনি বারবার বলেন, সাফল্যের কোনও শেষ নেই ৷ আমিও সেটাই মেনে চলি ৷ তবে এটা তো সবে শুরু ৷”

আরও পড়ুন: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ডব্লিউপিএল, মত রিচার

মেয়ের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি রবীন্দ্রনাথ দাস ৷ তিনি বলেন, “মেয়ের জন্য অবশ্যই গর্ব হয় ৷ তবে আরও গর্ব হয় রাজেশদার জন্য ৷ তিনি না থাকলে মেয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না ৷ আমরা সাধ্যমতো মেয়েকে সাপোর্ট দিই ৷ ছোট থেকেই মেয়ের খেলাধুলোর নেশা ৷ তাই ওকে খেলাধুলোর মধ্যেই রেখেছি ৷ এর জন্য ওর পড়াশোনার একটু ক্ষতি হচ্ছে ৷ সেটা মেনে নিতেই হচ্ছে ৷ ক্রিকেট খেলা একটু খরচের বিষয় ৷ আমি সামান্য ব্যবসায়ী হিসাবে যতটা সম্ভব, মেয়ের পাশে থাকার চেষ্টা করি ৷ স্বপ্ন দেখি, একদিন ও দেশের হয়ে খেলবে ৷ আমি সমস্ত অভিভাবকদের বলতে চাই, বাচ্চাদের আগ্রহ যেদিকে বেশি, সেদিকেই যেন তাদের যেতে দেওয়া হয় ৷ জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে ফল বিপরীতও হতে পারে৷”

একসময় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়েদের মাঠে ডেকে আনতে হয়েছে পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক, রাসমনির প্রশিক্ষক রাজেশ দাসকে ৷ এখন চাঁচল স্টেডিয়ামের মাঠে তাঁর কাছে ক্রিকেটের শিক্ষণ নিচ্ছে সাত থেকে সতেরোর বহু মেয়ে ৷ রাসমণিকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনিও ৷ রাজেশবাবু বলেন, “চাঁচলের মতো জায়গা থেকে রাসমণি যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেটা একটা দৃষ্টান্ত ৷ ও প্রমাণ করেছে, প্রতিভা আর চেষ্টা থাকলে গ্রাম থেকেও বড় মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছনো যায় ৷ ছাত্রী হিসাবে রাসমণিকে একটা কথাই বলব ৷ ও যেন নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে পরিশ্রম করে যায় ৷ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটাই ওর লক্ষ্য হওয়া উচিত ৷ এনসিএ ক্যাম্পে ও দিকপাল ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচিত হবে ৷ তাঁদের কাছে শিখবে ৷ নিজেকে আরও অভিজ্ঞ করার সুযোগ রয়েছে তার কাছে ৷”

দুরন্ত স্প্রিন্টে এনসিএ-তে মালদার রাসমণি

মালদা, 13 এপ্রিল: এখন সে যেন সত্যিই রানি ৷ শুধু চাঁচলের নয়, গোটা জেলার ৷ ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে মালদার গর্ব বাড়িয়েছে রাসমণি দাস ৷ তার কাছ থেকে নববর্ষের এমন উপহার পেয়ে আপ্লুত সবাই ৷ এমনকী পুলিশও ৷ তাই চাঁচল থানায় তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছেন পুলিশকর্মীরা ৷

16 বছরের রাসমণি চাঁচলের রানি দাক্ষায়নী গার্লস হাইস্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্রী ৷ বাবা রবীন্দ্রনাথ দাস লটারি বিক্রেতা ৷ একমাত্র সন্তানের ক্লাস ফাইভ থেকেই ক্রিকেটের আগ্রহ দেখে রবীন্দ্রনাথবাবু তাকে নিয়ে যান স্থানীয় ক্রিকেট প্রশিক্ষক রাজেশ দাসের কাছে ৷ তখন রাজেশবাবুর কাছে কোনও মেয়ে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিত না ৷ ফলে তিনি প্রথমে সামান্য দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৷ তবে দ্বিধা কাটিয়ে ক্রিকেটার রাসমণিকে গড়ার কাজে নেমে পড়েন তিনি ৷ টানা সাড়ে তিন বছর প্রশিক্ষণের শেষে দরজা খুলে যায় বোলার রাসমণির ৷ অনুর্ধ্ব 19 স্তরে বাংলা দলে সুযোগ পায় সে ৷ চলে যায় কলকাতায় ৷ সেখানে ঝুলন গোস্বামীর মতো কিংবদন্তির কাছে বোলিং শেখার সুযোগ মেলে ৷ এবার ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে সে ৷ সেখানে রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো ক্রিকেটাররাও রাসমণিদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন ।

আগামী 17 এপ্রিল থেকে 11 মে পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানগ্রামে অনুর্ধ্ব 19 ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ট্রেনিং ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে ৷ তার আগে কয়েকদিনের ছুটি পেয়ে বাড়ি এসেছে রাসমণি ৷ সেই খবর পেয়ে গতকাল রাতে তাকে থানায় ডেকে পাঠান চাঁচলের আইসি পূর্ণেন্দুকুমার কুণ্ডু ৷ পুলিশের তরফে রাসমণিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ৷

রাসমণি জানায়, “আমি অনুর্ধ্ব 19 বিভাগে রাজ্যের হয়ে খেলি ৷ গত 3 এপ্রিল সিএবি'র তরফে আমাকে জানানো হয়, আমি ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে সেই ক্যাম্প হবে ৷ 16 তারিখ কলকাতা থেকে ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেব ৷ তবে কারা আমাদের ট্রেনিং দেবেন তা এখনও পুরোপুরি জানি না ৷ শুনেছি ভিভিএস লক্ষ্মণ থাকবেন ৷ আমি ধাপে ধাপে ভাবতে চাই ৷ এনসিএ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়া আমার কাছে স্বপ্নের মতো ৷ সেখানে আমাকে সফল হতে হবে ৷ তারপরের লক্ষ্য তার পরেই ঠিক করব ৷ আজ যে জায়গায় পৌঁছেছি, তার পিছনে আমার পরিবারের অবদান অনেক ৷ আমার প্রথম কোচ রাজেশ স্যার আমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন ৷ তিনি বারবার বলেন, সাফল্যের কোনও শেষ নেই ৷ আমিও সেটাই মেনে চলি ৷ তবে এটা তো সবে শুরু ৷”

আরও পড়ুন: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ডব্লিউপিএল, মত রিচার

মেয়ের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি রবীন্দ্রনাথ দাস ৷ তিনি বলেন, “মেয়ের জন্য অবশ্যই গর্ব হয় ৷ তবে আরও গর্ব হয় রাজেশদার জন্য ৷ তিনি না থাকলে মেয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না ৷ আমরা সাধ্যমতো মেয়েকে সাপোর্ট দিই ৷ ছোট থেকেই মেয়ের খেলাধুলোর নেশা ৷ তাই ওকে খেলাধুলোর মধ্যেই রেখেছি ৷ এর জন্য ওর পড়াশোনার একটু ক্ষতি হচ্ছে ৷ সেটা মেনে নিতেই হচ্ছে ৷ ক্রিকেট খেলা একটু খরচের বিষয় ৷ আমি সামান্য ব্যবসায়ী হিসাবে যতটা সম্ভব, মেয়ের পাশে থাকার চেষ্টা করি ৷ স্বপ্ন দেখি, একদিন ও দেশের হয়ে খেলবে ৷ আমি সমস্ত অভিভাবকদের বলতে চাই, বাচ্চাদের আগ্রহ যেদিকে বেশি, সেদিকেই যেন তাদের যেতে দেওয়া হয় ৷ জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে ফল বিপরীতও হতে পারে৷”

একসময় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়েদের মাঠে ডেকে আনতে হয়েছে পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক, রাসমনির প্রশিক্ষক রাজেশ দাসকে ৷ এখন চাঁচল স্টেডিয়ামের মাঠে তাঁর কাছে ক্রিকেটের শিক্ষণ নিচ্ছে সাত থেকে সতেরোর বহু মেয়ে ৷ রাসমণিকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনিও ৷ রাজেশবাবু বলেন, “চাঁচলের মতো জায়গা থেকে রাসমণি যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেটা একটা দৃষ্টান্ত ৷ ও প্রমাণ করেছে, প্রতিভা আর চেষ্টা থাকলে গ্রাম থেকেও বড় মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছনো যায় ৷ ছাত্রী হিসাবে রাসমণিকে একটা কথাই বলব ৷ ও যেন নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে পরিশ্রম করে যায় ৷ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটাই ওর লক্ষ্য হওয়া উচিত ৷ এনসিএ ক্যাম্পে ও দিকপাল ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচিত হবে ৷ তাঁদের কাছে শিখবে ৷ নিজেকে আরও অভিজ্ঞ করার সুযোগ রয়েছে তার কাছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.